আত্মরক্ষার কৌশল শিখলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলের খেলার মাঠে নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে চবি বন্ধুসভার আয়োজনে কারাতে কর্মশালাছবি: বন্ধুসভা

সার করে দাঁড়ানো ছাত্রীরা। সামনে থেকে প্রশিক্ষক দিচ্ছেন একের পর এক নির্দেশনা। ছাত্রীরা অনুসরণ করছেন, শিখছেন খালি হাতে নিজেকে রক্ষার নানা কৌশল, যেটি কারাতে নামে সবার কাছে পরিচিত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলের খেলার মাঠে ১০ ও ১১ মার্চ—দুই দিনব্যাপী এমন আয়োজন দেখা যায়। ছাত্রীদের জন্য আত্মরক্ষার এ কর্মশালার আয়োজন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা। সহযোগিতায় ছিল বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ। উপলক্ষ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দুই দিনের এ কর্মশালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ৫০ নারী শিক্ষার্থী অংশ নেন।

কারাতে শব্দটি জাপানি। বাংলায় যার অর্থ খালি হাত। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে মল্লযুদ্ধের কৌশল হিসেবে শব্দটি সারা বিশ্বে ছাড়িয়ে পড়ে। এই কৌশলে দক্ষ প্রশিক্ষকেরা জাপানি ভাষাতেই প্রশিক্ষণ দেন।

প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ
ছবি: বন্ধুসভা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার কর্মশালাটির প্রধান প্রশিক্ষক ছিলেন সিহান অজয় দে। তিনি জাতীয় কারাতে ফেডারেশনের কোচ ও রেফারি। তাঁর পাশাপাশি আরও সাতজন পালাক্রমে কর্মশালায় প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তাঁরা সবাই অজয় দের ছাত্র।

প্রশিক্ষণের গুরুত্বের কথা জানিয়ে প্রশিক্ষক অজয় দে বলেন, ‘বর্তমান সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। নারীদের চলার পথে যেভাবে সহিংসতা হচ্ছে, এগুলো বিব্রতকর। রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রতিটি পরিবার থেকে অন্তত একজন কারাতের প্রশিক্ষণ নিলে দেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও কমে আসবে। কারণ, কারাতে প্রতিবাদী হতে শেখায়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণ দিতে এসে নারী শিক্ষার্থীদের সাড়া দেখে খুশি এই প্রশিক্ষক। তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ দিতে এসে বুঝেছি, কারাতের প্রতি ছাত্রীদের বেশ আগ্রহ রয়েছে। আশানুরূপ সাড়া পেয়েছি। প্রথম আলো বন্ধুসভার উদ্যোগ প্রশংসনীয়। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও অগ্রগতিতে এ ধরনের কর্মসূচি প্রথম আলো ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত করবে বলে আশা করছি।’

প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পিংকি সরকার নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, ‘কারাতে শুধু নিজেকে রক্ষার জন্য নয়, শরীর ও মন সুস্থ রাখতেও কারাতে শেখা জরুরি। এ কর্মশালা থেকে যে অনুপ্রেরণা পেয়েছি, যে আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছি, তা বাস্তব জীবনেও প্রয়োগ করব। আমি মনে করি, এ ধরনের কর্মশালা প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা উচিত। বিশেষ করে শিশু ও কিশোরীদের জন্য কারাতে শেখা খুব জরুরি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলের খেলার মাঠে নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে চবি বন্ধুসভার আয়োজনে কারাতে কর্মশালা
ছবি: বন্ধুসভা

কর্মশালার শুরুতে চবি বন্ধুসভার সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষক রাহী হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আত্মরক্ষার এ কর্মশালাটি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি হতাশা ও মাদক গ্রহণ থেকে দূরে থেকে সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতেও শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করবে। অন্যায় কাজে বাধা দিতে মানসিক শক্তি জোগাবে। এসব বিবেচনায় বন্ধুসভা প্রতিবছরের মতো এ বছরও নারী দিবস উপলক্ষে কারাতে কর্মশালার আয়োজন করেছে।’

সাধারণ সম্পাদক নুসরাত জাহান পাইরিন বলেন, ‘প্রথম আলো বন্ধুসভা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ সমুন্নত রাখতে নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় নারী দিবস উপলক্ষে আত্মরক্ষার কর্মশালাটির আয়োজন করা হয়েছে। এ ধরনের কর্মশালা নারী শিক্ষার্থীদের মানসিক শক্তি জুগিয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে। সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে নিজেকে নিরাপদ রাখতে আত্মবিশ্বাসী বানায়।’

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রামেন্দু পারিয়াল, চবি বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক আলি আকরাম পিয়েল, বইমেলা সম্পাদক পপি ভৌমিক, বন্ধু জেসমিন বিনতে জালাল, অনামিকা বর্মণসহ অন্য বন্ধুরা।