মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে পারিবারিক সম্পর্ক ‘আগুনের পরশমণি’

ভৈরব বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসর
ছবি: আনাস খান

হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি তাঁর লেখনী শক্তির দ্বারা পৌঁছে গিয়েছেন সর্বসাধারণের কাছে। প্রাঞ্জল ভাষা আর জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত গল্পগুলো পাঠকের হৃদয়ে গেঁথে আছে এখনো। লেখক সম্পর্কে আলোচনায় কথাগুলো বলেন প্রচার সম্পাদক মহিমা মেধা।

১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রথম আলো ভৈরব অফিসে মুদ্রিত বই পড়ার দলগত আসর পাঠচক্রে বসেন ভৈরব বন্ধুসভার বন্ধুরা। এবারের বিষয় ছিল কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘আগুনের পরশমণি’। ১৭১তম পাঠের আসরটি সঞ্চালনা করেন পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক জান্নাতুল মিশু।

১৯৭১ সালের মে মাসের ঘটনা দিয়ে উপন্যাস শুরু হয়। সমগ্র ঢাকা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তাণ্ডবে উত্তাল। চলছে কারফিউ, সাধারণ মানুষ গৃহবন্দী। অবরুদ্ধ ঢাকার একটি পরিবারের কর্তা মতিন সাহেব ট্রানজিস্টর শোনার চেষ্টা করছেন মৃদু ভলিউমে। ভয়েস অব আমেরিকা, বিবিসি, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তিনি প্রতিদিন শোনেন। মতিন সাহেবের পরিবারে হাজির হয় তাঁর বন্ধুর ছেলে বদিউল আলম। সে একটি বিশেষ উদ্দেশে ঢাকায় এসেছে।

সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন পাঠের আলোচনায় বলেন, উপন্যাসের প্রধান চরিত্র বদিউল আলম একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি গেরিলা অভিযান চালানোর উদ্দেশে ঢাকায় আসেন। বদিউল আলম চরিত্রটি স্পষ্টভাষী, নির্ভীক, দৃঢ়তা আর গাম্ভীর্যে পরিপূর্ণ।

সাধারণ সম্পাদক রিফাত হোসেন তাঁর আলোচনায় বলেন, গল্পের শেষ অংশটি ভীষণ বেদনাদায়ক। ভোরের আলো যখন ফুটে ওঠে, কান্নাভেজা চোখে রাত্রি তার মাকে জিজ্ঞেস করে, জোনাকিগুলো আর দেখা যাচ্ছে না কেন মা? জবাব আসে, জোনাকি দেখা যাচ্ছে না। কারণ ভোর হচ্ছে, আকাশ ফরসা হতে শুরু করছে, এখন আর জোনাকিদের প্রয়োজন নেই।

পাঠ আলোচনা করছেন সাধারণ সম্পাদক রিফাত হোসেন
ছবি: আনাস খান

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘আমাদের এই বিজয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আন্দোলন ও চেতনার সমষ্টিগত ফলাফল। “আগুনের পরশমণি” উপন্যাসের গল্পটি তৎকালীন সামাজিক পটভূমি, পারিবারিক সম্পর্ককে সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।

সভাপতি নাহিদ হোসাইন বলেন, ‘শত বীর শহীদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেলাম স্বাধীনতা। কিন্তু সত্যিই কি আমরা এই স্বাধীনতার মর্যাদা রাখতে পারছি? হুমায়ূন আহমেদের লেখা কতবার যে পড়ি, মুগ্ধ হই! মিশে যাই গল্পের প্রতিটি চরিত্রের সঙ্গে।’

পাঠের আলোচনায় আরও যুক্ত হন উপদেষ্টা লুবনা হক, জনি আলম, আসাসুজ্জামান সোহেল, কার্যনির্বাহী সদস্য ইকরাম বখশ। আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিদরাতুল রশিদ, অর্থ সম্পাদক মানিক আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক আনাস খান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আরতি পাল, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক সন্দ্বীপ পাল, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক রাসেল রাজ, জেন্ডার ও গবেষণা সম্পাদক তানশি নাহার, বন্ধু অর্ণব সাহা, মোশারফ রাব্বি।

পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা