সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবসে ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা

সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা।

‘১৮৫৫ সালে সাঁওতালরা সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিল তাদের অধিকার আদায়ের জন্য। এ যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ইংরেজ, মহাজন ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ সৈন্য ও তাঁদের দোসর ব্যবসায়ী, মুনাফাখোর ও মহাজনদের বিভিন্ন নিয়মনীতি থেকে নিজেদের রক্ষা করা এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা। সাঁওতাল হুলের ইতিহাস থেকে জানা যায়, দামিন-ই কোহ ছিল সাঁওতালদের নিজস্ব অঞ্চল।’

‘সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস’ উপলক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার আলোচনা সভায় কথাগুলো বলেন উপদেষ্টা আনোয়ার হোসেন। ৩০ জুন রাত ১০টায় ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্ম গুগল মিট অ্যাপে এটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য দেন উপদেষ্টা আনোয়ার হোসেন, সাবেক সভাপতি সাঈদ মাহমুদ, সভাপতি আরাফাত মিলেনিয়াম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাফিউল হাসান প্রমুখ।

আনোয়ার হোসেন বলেন, সিধু মুরমু ছিলেন সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রধান নেতা। কিছু লোকের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে তিনি গ্রেপ্তার হন। পরে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কানু মুরমু ছিলেন সাঁওতাল বিদ্রোহের দ্বিতীয় প্রধান নায়ক ও সিধুর ভাই। বীরভূম জেলার ওপারে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়। চাঁদ মুরমু ও ভৈরব মুরমু ছিলেন সিধু ও কানুর প্রধান দুজন সহযোগী ও ভাই। তাঁরা দুজন ভাগলপুরের কাছে এক যুদ্ধে প্রাণ হারান। চানকু মাহাতো অন্যতম নেতা ছিলেন। তিনিও সাঁওতাল বিদ্রোহে শহীদ হয়েছিলেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করার পর প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয় ১৫ মে ১৮৫৬ সালে।

সাবেক সভাপতি সাঈদ মাহমুদ বলেন, মহাজন ও পুলিশের বিরুদ্ধে সাঁওতালদের সশস্ত্র বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। সাঁওতালরা তাদের ওপর নিপীড়নকারী জমিদার, মহাজন, পুলিশ, রেলওয়ে ঠিকাদারসহ অন্য যারা তাদের এলাকায় গিয়ে বিত্তশালী হওয়ার চেষ্টা করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে এক সুসংগঠিত সশস্ত্র বিদ্রোহ গড়ে তোলে। ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের উদ্ভব এবং রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত আইন ও বিধিবিধান, খাজনা প্রবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ফলে প্রথম দিকে সাঁওতালরা তাদের আদি বাসভূমি কটক, ধলভূম, মানভূম, বড়ভূম, ছোটনাগপুর, পালামৌ, হাজারীবাগ, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, ও বীরভূমের পার্বত্য এলাকা ছেড়ে রাজমহল পাহাড়ের সমতলভূমিতে বসতি স্থাপন করে। বিস্তীর্ণ এলাকার জঙ্গল কেটে স্থানটিকে তারা চাষাবাদের উপযোগী করে তোলে। কিন্তু ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা সেখানেও তাঁদের মালিকানার দাবি নিয়ে হাজির হন। সাঁওতালরা এই ঔপনিবেশিক অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এবং নিজেদের প্রাকৃতিক অধিকার বজায় রাখার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হয়। সাঁওতালরা বিশ্বাস করত, যে ব্যক্তি প্রথম জঙ্গল কেটে জমি চাষের উপযোগী করে, জমির মালিকানা তাঁরই। মোগল সরকার এই ঐতিহ্যকে সম্মান করায় তখন কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে জমিদাররা জমির ওপর তাদের মালিকানার দাবি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। এই স্বাভাবিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ১৮১১, ১৮২০ ও ১৮৩১ সালে সাঁওতালদের মধ্যে ব্রিটিশ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটে। কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ, সুসংগঠিত ও ব্যাপক বিদ্রোহটি সংঘটিত হয় ১৮৫৫-৫৬ সালে। তা দমন করতে সরকারকে কয়েক দফা সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে হয়।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা ফারুকা বেগম, আবদুস সাত্তার, সহসভাপতি মো. আসাদুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক মাসরুফা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান, অর্থ সম্পাদক আলীউজ্জামান নূর, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক সোনিয়া খাতুন, দপ্তর সম্পাদক আসেফ উৎস, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান, কার্যনির্বাহী সদস্য শাকিল হোসেন, বন্ধু আলী আসগর, আবদুল্লাহ আল জুবায়ের, ইয়াসিনসহ অন্যরা।

সভাপতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভা