‘সাপ হত্যা নয়, প্রকৃতি ও মানুষের স্বার্থে এদের বাঁচতে দিন’

কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে ‘সাপ হত্যা নয়, প্রকৃতি ও মানুষের স্বার্থে এদের বাঁচতে দিন’ প্রতিপাদ্যে কেরানীগঞ্জ বন্ধুসভা ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে সেমিনারছবি: বন্ধুসভা

‘সাপ হত্যা নয়, প্রকৃতি ও মানুষের স্বার্থে এদের বাঁচতে দিন’ প্রতিপাদ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জ বন্ধুসভা ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। ১ জুলাই বিকেলে কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু রিয়াদ। তিনি বলেন, ‘সাপ আমাদের বাস্তুতন্ত্রের অংশ। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে সাপকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্কে অন্যান্য সাপ এমনকি নির্বিষ সাপকে রাসেলস ভাইপার সাপ বলে মেরে ফেলা হচ্ছে। সাপ দেখলেই মেরে ফেলার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বরং সাপকে হত্যা না করে নিরাপদ চারণভূমিতে অবমুক্ত করতে হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রথম আলো বন্ধুসভার সেমিনারে সহযোগিতায় অংশ নেওয়ায় ভূয়সী প্রশংসা করেন। পাশাপাশি কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করে সাপে কাটা রোগীদের সুবিধার্থে অ্যান্টিভেনমের মজুত বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

সেমিনারে আলোচক হিসেবে ছিলেন ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সাপ নিয়ে সমাজে অনেক কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাপ সম্পর্কে গুজব ব্যাপকভাবে বিস্তার হচ্ছে। সাপ আমাদের শত্রু নয়। সাপ আমাদের প্রকৃতির অংশ। সাপ কখনো নিজেকে বিপদগ্রস্ত মনে না করলে আক্রমণ করে না। যখন মানুষ লোকালয়ে সাপ দেখে হইহুল্লোড় ও মারার জন্য উদ্যত হয়, তখনই তারা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। যদি কেউ সাপ দেখতে পান, তাহলে পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।’

মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘রাসেলস ভাইপার মূলত নদীর পার ঘেঁষা ও এর আশপাশ এলাকায় পাওয়া যায়। এ প্রজাতির সাপ অলস প্রকৃতির হয়। তাই তাদের লোকালয়ে আসার তেমন সম্ভাবনা থাকে না। রাসেলস ভাইপার কোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষকে কামড় দিলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে মারা যাবেন না। কেউ সাপের কামড়ের শিকার হলে অতি দ্রুত নিকটস্থ জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ওঝার কাছে গিয়ে কালক্ষেপণ করা যাবে না। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সাপে কাটা মানুষকে প্রতিষেধক দিলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’

কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে ‘সাপ হত্যা নয়, প্রকৃতি ও মানুষের স্বার্থে এদের বাঁচতে দিন’ প্রতিপাদ্যে কেরানীগঞ্জ বন্ধুসভা ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে সেমিনার

সাপে কাটার পর করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সাপে কাটা রোগীকে ভয় না পাওয়ার জন্য আশ্বস্ত করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সাপে কাটা স্থানে যদি চুড়ি, আংটি ও ব্রেসলেট থাকে তাহলে সেটি খুলে ফেলতে হবে। রোগীকে যথাসম্ভব কম নড়াচড়া অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।’ সাপে কাটার পর যা করব না, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাপে কাটা অংশে শক্ত করে কোনো কাপড় ও দড়ি বাঁধা যাবে না। দংশিত স্থান কেটে বা চোষা যাবে না। মরিচ, পানি পড়া, গাছগাছড়া ও তাবিজের নামে অপচিকিৎসা নেওয়া যাবে না।’

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন প্রথম আলোর কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি ইকবাল হোসেন, উপজেলা প্রকৌশলী কাজী মাহমুদুল্লাহ, সমাজসেবা কর্মকর্তা ফখরুল আশরাফ, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, কৃষি কর্মকর্তা মহুয়া আক্তার, ব্রাহ্মণগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম প্রমুখ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি এইচ এম রুবেল, সহসভাপতি নুসরাত আরা তানজিম, নাজিউল্লাহ ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক তাসনিম খান, অর্থ সম্পাদক শামসুন্নাহার শিরীন, শাহানাজ শানু প্রমুখ।