ডিআইইউ বন্ধুসভার পাঠচক্রে শরৎচন্দ্রের ‘পন্ডিত মশাই’
শরতের শেষে চিরায়ত সবুজের সমারোহে ঝুম বৃষ্টির বিরাজমান স্নিগ্ধ বিকেলে পাঠচক্রের আসর করেছে ডিআইইউ বন্ধুসভা। ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পুরোনো ক্যাম্পাসের ৩০১ নম্বর কক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়। পাঠচক্রের বিষয় ছিল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘পন্ডিত মশাই’।
শুরুতেই উপন্যাসের পটভূমি নিয়ে আলোচনা করেন স্বাস্থ্য ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক সাব্বির আহমেদ। তাঁর আলোচনায় উঠে আসে ১৩২১ বঙ্গাব্দের বৈশাখ ও শ্রাবণ সংখ্যা ‘ভারতবর্ষ’ মাসিক পত্রে ‘পণ্ডিত মশাই’ প্রথম প্রকাশিত হয়। একই অব্দের ভাদ্রের শেষ বা আশ্বিনের শুরুতে (১৫ই সেপ্টেম্বর ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ) গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯১৪ সালের প্রাক্কালে যখন বঙ্গের সন্তানেরা মোটামুটি পড়ালেখা শিখে আধুনিক জীবনের সন্ধানে শহরমুখী হচ্ছেন, সেই সময়ের গ্রামীণ পটভূমিতে রচিত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পণ্ডিত মশাই’ উপন্যাস।
উপন্যাসের প্রধান চরিত্র বৃন্দাবন অধিকারী। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের বৃন্দাবন মূলত সমাজের নিচু শ্রেণির মানুষের পড়ালেখার নিমিত্তে তার নিজের খরচে নিজ গৃহে একটি পাঠশালা খুলে বসে। এই পাঠশালার বাচ্চাদের লেখাপড়ার সরঞ্জামাদির টাকাও জোগাত বৃন্দাবন নিজে। দেশমাতৃকার জন্য গভীর দায়িত্ববোধসম্পন্ন এই স্বপ্রণোদিত ‘পন্ডিতমশাই’য়ের নামেই উপন্যাসের নাম। উপন্যাসের প্রধান নারী চরিত্র, কার্যত কাহিনির প্রধান চরিত্র পঞ্চদশী কিশোরী কুসুম।
উপন্যাসটি পাঠের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন বন্ধুরা। প্লট ও বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসান। তিনি বলেন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অন্যান্য উপন্যাসের নারী চরিত্রের সঙ্গে কুসুমের কিঞ্চিৎ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। কুসুমের বাল্য ইতিহাস তার অজানা। সেই অজানা ইতিহাস সে সময়কার গ্রাম-সমাজ এমন নোংরামিতে ভরপুর করে রেখেছে যে গল্পের শেষ দিকে কুসুমের মধ্যে তীব্র অস্তিত্বের সংকট দেখা দেয়। সে দৃঢ়চেতা ও নিজ খেয়ালকে গুরুত্ব দেওয়া এক কিশোরী। নিজেকে নিয়ে সে সদা পরিষ্কার থাকলেও তার আত্মাভিমান তাকে উপন্যাসের শুরুতেই মিলনাত্মক পরিণতিতে পৌঁছাতে দেয়নি। অবশ্য এই তীব্র রূপের অধিকারী কিশোরীর এমন আত্মাভিমান জন্ম না নিলে খুব সম্ভবত উপন্যাসটি এতটা পাঠকপ্রিয়তা পেত না।
সভাপতি আব্দুল মুনয়িম সরকার বলেন, ‘কিছু কিছু আইডিয়া মানুষ বই পড়ার মাধ্যমে অর্জন করে। বই পড়ার মাধ্যমে মনের শক্তি অনেক বাড়ে। যার ফলে কাজে বেশি চেষ্টা করা যায় এবং সেটা আমাদের অনেক কিছু অর্জনে সাহায্য করে। তাই আমাদের বেশি বেশি বই পড়তে হবে।’
পাঠচক্রে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিআইইউ বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক ইমাম মেহেদীসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও অন্য বন্ধুরা।
বন্ধু, ডিআইইউ বন্ধুসভা