ঈদের খুশি বাঁধ ভেঙেছে

চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সহমর্মিতার ঈদছবি: বন্ধুসভা

১৩ বছর বয়সী জান্নাতুল ফেরদৌস। থাকে চট্টগ্রামের তুলাতলি বস্তিতে। বাবা ও মা দুজনে বাইরে কাজ করেও ছয় ভাইবোনের সংসারে ঠিকমতো তিন বেলা আহার জোটাতে পারেন না। বাবা অথবা মায়ের কেউ একজন অসুস্থ থাকলেই মাঝেমধ্যে উপোসও থাকতে হয় এক বেলা। সেখানে জান্নাতের ঈদের পোশাক কেনা স্বপ্নেরই মতো। জান্নাতের সেই অধরা স্বপ্নই পূরণ করেছে চট্টগ্রাম বন্ধুসভা।

৭ এপ্রিল জান্নাতের হাতে বন্ধুরা তুলে দেন ঈদের নতুন জামা। এটা হাতে পেয়ে জান্নাতের চোখেমুখে ছিল আনন্দ-উচ্ছ্বাস। সেদিন দ্বিতীয় ধাপে চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলষ্টেশন, তুলাতলি বস্তি, দেওয়ানহাটসহ বেশ কিছু এলাকায় ঈদের নতুন পোশাক বিতরণ করে চট্টগ্রাম বন্ধুসভা। এর আগে প্রথম ধাপে ৬ এপ্রিল চট্টগ্রামের খুলশী এলাকার হোপ ফাউন্ডেশন পরিচালিত একটি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুলে বিতরণ করা হয় নতুন জামা।

সব মিলিয়ে দুই ধাপে মোট ৫৭৩ শিশুর মুখে হাসি ফুটিয়েছেন বন্ধুরা। পাশাপাশি ৪৮৮টি পরিবারকে ঈদের খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্ধুসভা। জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের আহ্বানে ‘সহমর্মিতার ঈদ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে করা হয়েছে ঈদের নতুন জামা বিতরণ ও খাদ্যসামগ্রী উপহারের কার্যক্রম।

নতুন জামা হাতে পেয়ে খুশি শিশু হালিমা আক্তার। সে বলে, ‘এই জামা আমি বাসায় নিয়ে লুকিয়ে রাখব, যাতে কেউ না দেখে। একেবারে ঈদের দিন সকালে পরব।’ নাবিলা আক্তারের বক্তব্য অবশ্য একটু ভিন্ন। সে এই জামা এখন থেকেই সবাইকে দেখাবে। আর ঈদের দিন এই জামা পরে ঘুরতে বের হবে। শিশুদের হাতে নতুন জামা তুলে দেওয়াতে খুশি হয়েছেন অভিভাবকেরাও। ফারিয়া আক্তারের বাবা আবুল কাশেম বলেন, ‘রিকশা চালিয়ে খুব বেশি আয় করতে পারি না এখন আর। অসুস্থ হওয়াতে প্রতিদিনের আয় কমে যাচ্ছে। ইনকাম কম হওয়াতে বাচ্চাদের ঈদের জামা দিতে পারব কি না বুঝতেছিলাম না। বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ বাচ্চাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য।’

চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সহমর্মিতার ঈদ

৮ এপ্রিল সকাল থেকেই চট্টগ্রামের জিইসি, দুই নাম্বার গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, রাহাত্তারপুল, কালামিয়া বাজার, এক কিলোমিটার ও প্রবর্তক মোড় এলাকায় কয়েক ভাগে বন্ধুরা ভাগ হয়ে বিতরণ করতে থাকেন ঈদের খাদ্যসামগ্রী। রিকশাচালক, শ্রমজীবী মানুষ, এটিএম বুথের পাহারাদারসহ একটু পিছিয়ে পড়া মানুষদের হাতে তুলে দেন ঈদের উপহার। উপহারসামগ্রীর মধ্যে ছিল, চাল, ডাল, লাচ্ছা সেমাই, বাংলা সেমাই, নুডলস, গুঁড়া দুধ, চিনি, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, আলু ও লবণ।

উপহারের প্যাকেট হাতে নিয়ে এটিএম বুথের পাহারাদার শফিক মিয়া বলেন, ‘কেউ কেউ টাকা তুললে মাঝেমধ্যে বকশিশ দেয়। সেটি খুব অল্প। এমনিতে যে বেতন পাই, তা দিয়ে চলতেও পারি না। আবার কারও কাছে হাতও পাততে পারি না। বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ, ঈদ উপহার তুলে দেওয়ার জন্য।’ রিকশাচালক আবুল হোসেন বলেন, ‘যা পাইছি তাতেই খুশি। সবাই মিলে ঈদটা একটু ভালো কাটলেই হয়।’

আয়োজন প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান খান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ঘোষণা অনুযায়ী আমরা প্রতিবারের মতো এবারও সহমর্মিতার ঈদ আয়োজনে অংশ নিয়েছি। এ বছর আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা কিছু অর্থ দিয়েছেন। পাশাপাশি বন্ধুরাও যে যার মতো করে এগিয়ে এসেছেন। কেউ দিয়েছেন টিফিনের জমানো টাকা, কেউবা রিকশা ভাড়া থেকে বাঁচানো টাকা আবার কেউবা পরিবার থেকে সাধ্যমতো টাকা এনে সফল করেছেন এ আয়োজন।’

সভাপতি ইব্রাহীম তানভীর বলেন, ‘ঈদে নতুন জামা দেওয়ার পরে শিশুদের হাসিমাখা মুখগুলো আমাদের আরও বেশি করে ভালো কাজ করার প্রেরণা দেয়। ঈদ উপহার হাতে নিয়ে বৃদ্ধ মানুষটা যখন আমাদের জন্য প্রার্থনা করেন, তখন মনে হয় জীবনটা আসলেই অনেক সুন্দর।’

উপদেষ্টা, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা