যত সমস্যাই আসুক, মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে

মাদকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের শপথ
ছবি: বন্ধুসভা

‘মাদক খারাপ জেনেও যে অন্যজনকে তা গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ করে, সে ব্যক্তি কখনোই ভালো বন্ধু হতে পারে না। সুযোগসন্ধানীরা সব সময় চেষ্টা করবে তোমাদের হাতে মাদক তুলে দিতে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। পরীক্ষার ফল খারাপ হয়েছে, মন খারাপ কিংবা যেকোনো সমস্যাই আসুক, সেগুলো মোকাবিলা করতে শিখতে হবে। কৌতূহলবশতও মাদক গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।’ দিনাজপুরে প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর বন্ধুসভার সহযোগিতায় জেলার সদর উপজেলার কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লোকমান হাকিমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তারা আরও বলেন, মাদক সেবনের ফলে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়। মাদকের নেশা শুধু সম্ভাবনাময় একটি জীবনকে ধ্বংস করছে না, পরিবার–সমাজ তথা পুরো জাতিকেই গভীর খাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক জলধির নাথ রায় বলেন, অসাধু মানুষের প্ররোচনায় কিংবা সাময়িক আনন্দ লাভের আশায় তরুণেরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন। একপর্যায়ে বিপথগামী হয়ে পড়েন। নানা রকম অনৈতিক কাজে জড়ান তাঁরা।

আমন্ত্রিত অতিথিদের মাদক বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এক শিক্ষার্থী বলে, ‘কেউ মাদকাসক্ত হলে আমরা তার থেকে দূরে থাকি। কিন্তু তাকে সুস্থ করতে আমাদের কী করা উচিত?’ জবাবে জলধির নাথ রায় বলেন, মাদক একটা রোগ হলেও এর নিরাময় আছে। প্রথমে দরকার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। এ ছাড়া মাদকসেবীকে অনেক ইতিবাচক কাজের মধ্যে রাখা জরুরি।

দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোমিনুর করিম (অর্থ ও প্রশাসন) বলেন, অসাধু মানুষ তরুণদের প্রথমে মাদকাসক্ত করেন। এরপর মাদকের লোভ দেখিয়ে নানা অবৈধ কাজ করিয়ে নেন। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি। অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে তাঁদের সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে। দিনাজপুর সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় মাদকের প্রভাব একটু বেশি। মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থ আদায়ের জন্য তরুণদের জীবন নষ্ট করে দেন।

দিনাজপুরের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাহ্-নেওয়াজ বলেন, ‘আমরা বিভিন্নভাবে মাদককে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দিনাজপুর সীমান্তঘেঁষা এলাকা হওয়ায় মাদকের ছড়াছড়ি বেশি। তবে এর দায় আমাদের সবাইকে নিতে হবে। শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, পাশাপাশি অভিভাবক, শিক্ষক ও সমাজের নেতৃস্থানীয়দের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবী উভয়কে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

মাদকাসক্তি নিরাময় ও পরামর্শ কেন্দ্র ভাবনার নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রথম আলো শুধু খবরের কাগজে সীমাবদ্ধ নয়। বাল্যবিবাহ, মাদকবিরোধী সভাসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকে। নিয়মিত মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করছি। তাঁদের অধিকাংশই হতাশা থেকে বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়ে মাদক সেবন করছেন। এ ক্ষেত্রে প্রথমত দরকার তাঁদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা, ভালো কাজের মধ্যে রাখা। জীবন অনেক সুন্দর, এ বিষয়ে তাঁদের মধ্যে উপলব্ধি তৈরি করা।’

আলোচনা পর্ব শেষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদকবিরোধী লিফলেট, খাতা, কলম, স্কেল, বিস্কুট ও পানি বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর প্রতিনিধি রাজিউল ইসলাম, সহসভাপতি সাব্বির হাসান, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী খন্দকার, শাহিন সারোয়ারসহ বন্ধুসভার বন্ধুরা।

দপ্তর সম্পাদক, দিনাজপুর বন্ধুসভা