সিয়ামের বয়স যখন মাত্র দুই বছর, ঠিক তখনই তার বাবা মো. ফরিদ ও মা সেলিনা আক্তারের ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর শিশু সিয়ামকে নিয়ে সেলিনা আশ্রয় নেন স্বামী পরিত্যক্তা মা শেফালি বেগমের কাছে। কিছুদিন পরেই অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান সেলিনা। সিয়ামের আশ্রয় হয় ইট ভাঙার শ্রমিক নানি শেফালির কাছে। অভাবের সংসারে এবারের ঈদে পাঁচ বছর বয়সী সিয়ামকে নতুন কাপড় কিনে দিতে পারেননি নানি। ৩০ মার্চ দুপুরে পঞ্চগড় বন্ধুসভার বন্ধুরা সিয়ামের হাতে তুলে দিয়েছেন একটি রঙিন জামা।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের ঘটিয়ারপাড়া গ্রামে বাংলাদেশ রেলওয়ের পড়ে থাকা জমিতে ঝুপড়িতে নানি শেফালি বেগমের সঙ্গে থাকে শিশু সিয়াম। নতুন জামা পেয়ে সিয়ামের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। নতুন জামা হাতে নিয়ে সে বলে, ‘সুন্দর নাগেছে (লাগছে)’।
শুধু শিশু সিয়ামই নয়, রোববার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রথম আলো বন্ধুসভা থেকে ‘সহমর্মিতার ঈদ’ কর্মসূচি উপলক্ষে পঞ্চগড় সদর ও বোদা উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ৩২ শিশুকে রঙিন জামা উপহার দেওয়া হয়েছে।
এ সময় পঞ্চগড় বন্ধুসভার উপদেষ্টা আতাউর রহমান, প্রথম আলোর পঞ্চগড় প্রতিনিধি রাজিউর রহমান, ধাক্কামারা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম, পঞ্চগড় বন্ধুসভার সভাপতি আরিফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জমান, সাবেক সভাপতি রায়হান শরীফসহ অন্য বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলার বোদা উপজেলার ইসলামপুর, পঞ্চগড় সদর উপজেলার ঘাটিয়ারপাড়া, মীরগড়, ঢেমশিমারী, মালাদাম, মসজিদ পাড়া, রৌশনাবাগ, রামেরডাঙ্গা গোফাপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে ঘুরে শিশুদের হাতে এসব জামা তুলে দেওয়া হয়।
১৫ বছর বয়সী বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কিশোরী রিংকি আক্তারের জন্য নতুন জামা পেয়ে মা মাহমুদা বেগম বলেন, ‘এইবার ঈদোত (ঈদে) বেটিডার (মেয়েটার) তানে (জন্য) জামা কিনিবা পারুনি বাপু। তুমুরা জামাডা দিলেন ভালয় উপকার হইল।’
পঞ্চগড় বন্ধুসভার সভাপতি আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদুল ফিতরে প্রথম আলো বন্ধুসভা সহমর্মিতার ঈদের আয়োজন করে থাকে। এবারও আমরা ৩২টি শিশুকে নতুন জামা উপহার দিলাম। আমাদের এই কাজে আমরা ছাড়াও কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী সহায়তা করেছেন। সমাজে যাঁরা বিত্তবান আছেন, তাঁরা যদি এভাবে প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন এলাকার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে ঈদের আনন্দ সবাই ভাগাভাগি করে নেওয়া সম্ভব।’