‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ভয় পাওয়ার কারণ নেই’

কর্মশালা শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের কনফারেন্স কক্ষে অতিথিদের সঙ্গে বন্ধুসভার বন্ধুরাছবি: বন্ধুসভা

‘আমরা ভবিষ্যৎকে নিজের চোখে দেখি না। আমরা সব সময় বন্ধু, মা-বাবা, আত্মীয়স্বজনের চোখকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কিন্তু এটি করা যাবে না। ভবিষ্যৎ প্রতিমুহূর্তে পরিবর্তন হয়। এটি নিজেদের মতো করে গুছিয়ে নিতে হবে। বর্তমানে আমরা “এইজ অব ডেটায়” বসবাস করছি। সার্বক্ষণিক আমরা ডেটা ব্যবহার করছি। ডিজিটাল এই যুগে মানুষের বিকল্প হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। সৃজনশীলতা থাকলে আপনাকে কেউ আটকাতে পারবে না। আপনাকে চিন্তার বাইরেও যে চিন্তা আছে, সেটি করতে হবে। তবেই আপনি সামনে এগোতে পারবেন।’

গত বুধবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার আয়োজনে ‘ক্যারিয়ার অ্যান্ড ফিউচার প্ল্যানিং সেশন’ অনুষ্ঠানে ‘ফিউচার প্ল্যানিং: হোয়াট নেক্সট’ বিষয়ে এসব কথা বলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সমন্বয়ক ও মাছরাঙা টেলিভিশনের ভিজিটিং বিজনেস এডিটর মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের কনফারেন্স কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আমরা যা দেখি, তা–ই যদি বিশ্বাস করি, তাহলে আমরা একজন সীমিত চিন্তার মানুষে পরিণত হব। আমার পথচলা বাধাগ্রস্ত হবে। এ জন্য আমাদের ক্রিটিক্যালি চিন্তা করতে হবে। সেই সঙ্গে পরিশ্রম করতে হবে। তাহলেই কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়া সম্ভব। নতুন আইডিয়া তৈরি করতে পারলেই কর্মক্ষেত্রে অন্য সহকর্মী থেকে আমরা এগিয়ে থাকব। তাই তরুণদের গতানুগতিক চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

অনুষ্ঠানে ‘পাথ টু দ্য ক্যারিয়ার’ বিষয়ে কথা বলেন টিআইবির পরিচালক ও বিবিসি নিউজ লন্ডনের সাবেক সাংবাদিক শেখ মনজুর-ই-আলম এবং ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন ডিজাইনার ও ট্রেইনার সামছুদ্দোহা সাফায়েত। এ ছাড়া বিতর্ক, উপস্থাপনা ও পাবলিক স্পিকিং বিষয়ে কথা বলেন বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ও সময় টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপক জাফর সাদিক।

তৌহিদুল ইসলাম আরও বলেন, “আমাদের জীবনে অনেক সমস্যা আসবে। সেগুলো কীভাবে সমাধান করব সেটিই মুখ্য। ফেসবুকে, পত্রিকায়, ইউটিউবে আমরা অনেক কিছু দেখি। আমরা যা দেখি, তা–ই যদি বিশ্বাস করি, তাহলে আমরা একজন সীমিত চিন্তার মানুষে পরিণত হব। আমার পথচলা বাধাগ্রস্ত হবে। এ জন্য আমাদের ক্রিটিক্যালি চিন্তা করতে হবে। সেই সঙ্গে পরিশ্রম করতে হবে। তাহলেই কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়া সম্ভব। নতুন আইডিয়া তৈরি করতে পারলেই কর্মক্ষেত্রে অন্য সহকর্মী থেকে আমরা এগিয়ে থাকব। তাই তরুণদের গতানুগতিক চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

মনজুর-ই-আলম বলেন, ‘আমরা কে কোন বিষয়ে পড়ালেখা করছি, কোথায় পড়ছি, সেটি মোটেও গুরুত্বপূর্ণ নয়; বরং যার যেটা করার ইচ্ছা, সেই লক্ষ্যে নিজেকে তৈরি করাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যা–ই করি না কেন, ভালোভাবে করতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। কারণ, পরিশ্রমের বিকল্প নেই।’

বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক জাফর সাদিক শুরুতেই উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘আমরা চিন্তাশীল, নাকি চিন্তাগ্রস্ত? তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা চিন্তাগ্রস্ত।’ কী করব, কেন করব—এসব চিন্তাতেই আমরা আটকে থাকি। এ জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের যুক্তি দিয়ে চিন্তাশীল মানুষ হয়ে উঠতে হবে।’

জাফর সাদিক বলেন, ‘চাকরি মানেই কিন্তু নিজেকে বিক্রি করা। তাই যদি আমরা ভালো দামে; অর্থাৎ ভালো বেতনে বিক্রি হতে চাই, তাহলে অবশ্যই নিজেদের ভালো পণ্য হিসেবে প্রস্তুত করতে হবে। ভালোভাবে মোড়কজাত করতে হবে, কাজের পণ্য হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিতর্ক আমাদের যুক্তিবাদী ও চিন্তাশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এতে পাবলিক স্পিকিংয়ের দক্ষতাও তৈরি হয়, যা আমাদের ভালো উপস্থাপক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। মানুষের সামনে কথা বলা একটা শিল্প। এই শিল্পে পারদর্শী হলে, যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে পারলে আমরা কর্মজীবনেও ভালো করতে পারব। কারণ, তর্কে কোনো যুক্তি থাকে না, বিতর্কে যুক্তি থাকে। আমাদের যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা এবং যেকোনো কিছু যুক্তি প্রমাণ করা শিখতে হবে।

‘করপোরেট পেশায়’ যুক্ত হতে চাকরিপ্রার্থীদের করণীয় সম্পর্কে জানান ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন ডিজাইনার ও ট্রেইনার সামছুদ্দোহা সাফায়েত। তিনি বলেন, ‘করপোরেট পেশায় ভালো করতে হলে আমাদের যে সব সময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে “বিশেষ সম্পর্ক” তৈরি করতে হবে, এটা সত্যি নয়। যে কেউ নিজ যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতায় নিজেকে প্রমাণ করতে পারলে সফল হবেই।’ তিনি বলেন, চাকরির জন্য জীবনবৃত্তান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা নির্ভুল জীবনবৃত্তান্ত চাকরিদাতাকে প্রার্থী সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেয়। তাই জীবনবৃত্তান্তে একটা ভালো ছবি থাকা আবশ্যক। এর পাশাপাশি যোগাযোগদক্ষতা, পরিপাটি অবয়ব, পোশাক, মুখভঙ্গী, দেহভঙ্গী এগুলো মানুষকে উপস্থাপন করে। জীবনে ভালো করতে হলে, সফল হতে গেলে স্বাস্থ্য, সময়, পরিবার, দক্ষতা উন্নয়ন বা জ্ঞান ও নেটওয়ার্কিং এই পাঁচটি বিষয় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া জেসমিন অরিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন রাবি শাখা বন্ধুসভার সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ। এর আগে বিভিন্ন বিষয়ে অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রশিক্ষকেরা। কর্মশালায় বন্ধুসভার সদস্যসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী নিবন্ধন ও অংশগ্রহণ করেন।