বিপ্লবী চে গুয়েভারার জীবন গল্পের মতোই রোমাঞ্চকর

জেলা শহরের সাধারণ পাঠাগারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার পাঠের আসরছবি: বন্ধুসভা

একজন বিপ্লবীর প্রতিকৃতি যদি স্মরণ করার চেষ্টা করি, তাহলে প্রথমেই যে নামটি উজ্জ্বল হয়ে ভেসে ওঠে, তিনি হলেন চে গুয়েভারা। দেশে দেশে তাঁর ছবিখচিত টুপি আর টি-শার্ট পরে তরুণেরা আজও ঘুরে বেড়ান। ঘরের মধ্যে ছবি টাঙিয়ে রাখেন। যৌবনে অন্তত একবার চে গুয়েভারা হতে চাননি, এমন মানুষ খুব কমই আছে। যৌবন হলো সেই কাল, যখন মানুষ সাম্যের চেতনায় উজ্জীবিত, অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন না; যুদ্ধে যান, বিপ্লব নিয়ে ঘরে ফেরেন।

৯ অক্টোবর চে গুয়েভারার মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার পাঠের আসরে এ কথা বলেন বক্তারা। জেলা শহরের সাধারণ পাঠাগারে এটি অনুষ্ঠিত হয়। আলোচক হিসেবে ছিলেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার উপদেষ্টা শফিকুল আলম এবং পাঠাগার ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক আনিফ রুবেদ।

আনোয়ার হোসেন বলেন, চে গুয়েভারা ছিলেন আর্জেন্টিনার নাগরিক। তিনি একাধারে মার্ক্সবাদী, বিপ্লবী, চিকিৎসক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, গেরিলা নেতা, কূটনীতিবিদ ও সমরতত্ত্ববিদ। সবচেয়ে বড় পরিচয়, কিউবার বিপ্লবে তিনি ছিলেন অন্যতম ব্যক্তিত্ব। তাঁর প্রকৃত নাম এর্নেস্তো গুয়েভারা দে লা সের্না।

তরুণ বয়সে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে চে সমগ্র লাতিন আমেরিকা ভ্রমণ করেছিলেন। এ সময় এসব অঞ্চলের সর্বব্যাপী দারিদ্র্য তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করে। ভ্রমণকালে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন, এ অঞ্চলে বদ্ধমূল অর্থনৈতিক বৈষম্যের স্বাভাবিক কারণ হলো একচেটিয়া পুঁজিবাদ, নব্য ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ। এর একমাত্র সমাধান হলো বিশ্ব বিপ্লব। এ বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে তিনি গুয়াতেমালার সামাজিক সংস্কার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে মেক্সিকো সিটিতে বসবাসের সময় তাঁর সঙ্গে রাউল কাস্ত্রো ও ফিদেল কাস্ত্রোর আলাপ হয়। চে তাঁদের ছাব্বিশে জুলাই আন্দোলনে যোগ দেন। মার্কিন মদদপুষ্ট কিউবান একনায়ক ফুলগেনসিও বাতিস্তাকে উৎখাত করার জন্য কিউবায় যান। সেখানে তিনি বিপ্লবী সংঘের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। সেকেন্ড-ইন-কমান্ড পদে পদোন্নতি হয় তাঁর। বাতিস্তা সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে দুই বছর ধরে চলা গেরিলা সংগ্রামের সাফল্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।

জেলা শহরের সাধারণ পাঠাগারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার পাঠের আসর
ছবি: বন্ধুসভা

চে ছিলেন আজন্ম বিপ্লবী। তিনি নতুন দেশে বিপ্লবের আশায় কিউবা ত্যাগ করেন। সেকেন্ড কমান্ড ভিক্টর বার্ক এবং ১২ জন সহযোদ্ধা নিয়ে কঙ্গোয় গিয়ে প্যাট্রিস লুমুম্বার নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সংগঠিত করার দায়িত্ব নেন। এরপর চে সহযোদ্ধাদের নিয়ে চলে যান বলিভিয়ায়। সেখানে শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট স্বৈরশাসক বারিয়েস্তোসের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ। বারিয়েস্তোসের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় গুরুতর আহত হয়ে বন্দি হন চে। বলিভিয়ার লা হিগুয়েরা নামে একটি গ্রামের স্কুলঘরে সারা রাত আটকে রেখে পরের দিন তাঁকে হত্যা করা হয়।

চে গুয়েভারার জীবন ছিল গল্পের মতোই রোমাঞ্চকর। তিনি তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিপ্লব প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, নতজানু হয়ে সারা জীবন বাঁচার চেয়ে বীরের মতো মৃত্যুকে বরণ করাই শ্রেয়। তাঁর এ আদর্শ বুকে লালন করা মানুষজন এখনো যেকোনো বিপ্লবে ঝাঁপিয়ে পড়তে দ্বিধা করেন না।

পাঠচক্রে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাবুডাইং আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক আলীউজ্জামান নূর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি আরাফাত মিলেনিয়াম, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক জাহিদ হাসান, বন্ধু মাসরুফা খাতুন, নাজিফা আনজুম, ফাবিহা ফারজানা, আল মাহমুদ, নাফিউল ইসলাম, সাকিব হাসান, জোবায়ের আলী, মঈন আলী, সাকিল হোসেন, রাজা খান, মারুফ হাসান, তমাল সরকারসহ অন্য বন্ধুরা।

জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভা