দিনাজপুর বন্ধুসভার পাঠচক্রে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র ‘লালসালু’

দিনাজপুর বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসর।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ রচিত কালজয়ী উপন্যাস ‘লালসালু’ নিয়ে পাঠচক্র করেছে দিনাজপুর বন্ধুসভা। গত ৩১ আগস্ট রাত ৯টায় ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্ম গুগল মিট অ্যাপে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

‎বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘লালসালু’ এক অনন্য সৃষ্টি। ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটি কেবল একটি কাহিনি নয়, এটি গ্রামীণ জীবনের অন্তরঙ্গ দলিল। লেখক উপন্যাসকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যা ধর্মীয় কাঠামোর আড়ালে গড়ে ওঠা এক গ্রামীণ সমাজের বাস্তবতা। অতীত ও বর্তমানে বাঙালি মুসলিম সমাজে ধর্মকে নিয়ে গড়ে ওঠা এ গল্প যেন আমাদের সমাজব্যবস্থায় অন্ধ ধর্মীয় বিশ্বাস, কুসংস্কার এবং শিক্ষার অভাবে সমাজ কীভাবে প্রতারিত হতে পারে, মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে গড়ে ওঠা এক অসৎ ব্যবস্থার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন।

‎কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ একজন ভণ্ড ধার্মিক। লোকচক্ষুর অন্তরালে তিনি এক অজানা কবরের ওপর লাল কাপড় বিছিয়ে সেটিকে মাজার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে নিজেকে একজন পীর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। এভাবেই তিনি গ্রামের সহজ–সরল মানুষের বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে সমাজে নিজের কর্তৃত্ব কায়েম করেন। মজিদ ধর্মকে কেবল ভক্তির বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেননি, তিনি এটিকে ক্ষমতা, প্রতারণা ও শোষণের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তোলেন। উপন্যাসে লেখক দেখিয়েছেন, কীভাবে অজ্ঞতা ও অন্ধ বিশ্বাস মানুষকে নিজের হাতে বন্দি করে রাখতে পারে।

লালসালুর মূল আকর্ষণ হলো এর বর্ণনার সরলতা ও গভীরতা। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ উপন্যাসটিতে এমনভাবে গ্রামীণ সমাজকে চিত্রিত করেছেন, যেখানে খেত, নদী, জনপদ, মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও তাদের মানসিকতার টানাপোড়েন সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। সমাজের বাস্তবতা নিয়ে গড়ে ওঠা কালজয়ী এ উপন্যাস পাঠকমনকে প্রভাবিত করে। লেখক একাধারে ধর্মের নামে প্রতারণা, সামাজিক কুসংস্কার ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন, আবার শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও আত্মজাগরণের বার্তা দিয়েছেন।

সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চন্দ্র অধিকারী বলেন, ‘বর্তমান সমাজেও এমন অনেক মজিদ রয়েছে, যারা ধর্মের সুযোগ নিয়ে মানুষকে প্রতারিত করে, যার বাস্তবতা তুলে ধরেছেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ।’

পাঠচক্রে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি শবনম মোস্তারিন, সহসভাপতি দীপু রায় ও আরিয়ানা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব চন্দ্র রায়, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সম্পাদক আল আমিন, দপ্তর সম্পাদক আল আবিকসহ অন্য বন্ধুরা।

সাংস্কৃতিক সম্পাদক, দিনাজপুর বন্ধুসভা