সারা দেশের বন্ধুসভার সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত

বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল সাংগঠনিক বৈঠক

জানুয়ারির শুরুতেই দেশ ও দেশের বাইরের অধিকাংশ বন্ধুসভার কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটি গঠনের পর থেকেই সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় বন্ধুসভাগুলো দারুণ সব কাজ করে যাচ্ছে। সেই কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে নতুন কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় ও দিকনির্দেশনা প্রদান করে বিভাগভিত্তিক ভার্চ্যুয়াল সাংগঠনিক বৈঠক করেছে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ।

এ বছর মোট দুই ধাপে ভার্চ্যুয়াল সাংগঠনিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ধাপে ১৪ মার্চ ঢাকা বিভাগ (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান), চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেট বিভাগের সব বন্ধুসভা এবং বিদেশের তিনটি বন্ধুসভার সঙ্গে বৈঠক হয়। দ্বিতীয় ধাপে ১৫ মার্চ বৈঠকে অংশগ্রহণ করে ঢাকা বিভাগ (জেলা–উপজেলা), রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের বন্ধুসভাগুলো। এতে দেশ ও দেশের বাইরের ১৪০টি বন্ধুসভার সঙ্গে জাতীয় পর্ষদের সাংগঠনিক নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের প্রধান সমন্বয় ও সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন জাতীয় পর্ষদের সাংগঠনিক সম্পাদক নেওয়াজুল মওলা।

সাংগঠনিক বৈঠক জুম ক্লাউড মিটিং অ্যাপের মাধ্যমে সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে চলে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। বৈঠকগুলোয় প্রতিটি বন্ধুসভার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ অন্তত পাঁচ বন্ধু অংশ নেন। দুই ধাপে সভায় অংশ নেন প্রায় ৬০০ বন্ধু। প্রতিটি বন্ধুসভা থেকে সর্বোচ্চ দুজন নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। বক্তব্যে নিজেদের বন্ধুসভার বিগত সময়ের কার্যবিবরণী ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রদানের পাশাপাশি কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়, তা তুলে ধরেন। এ ছাড়া জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের কাছে তাঁদের প্রত্যাশা তুলে ধরেন। বৈঠকের আগেই প্রতিটি বন্ধুসভা লিখিতভাবে তাদের আলোচ্য বিষয় প্রদান করে এবং জাতীয় পর্ষদের পক্ষ থেকে সেগুলো একত্র করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

এ সময় বন্ধুদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসা, প্রত্যাশাসহ কার্যক্রম পরিচালনায় নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে আলোচনা, পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করে বক্তব্য দেন জাতীয় পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক, সহসভাপতি রুবাইয়াত সাইমুম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক, সাংগঠনিক সম্পাদক নেওয়াজুল মওলা, অর্থ সম্পাদক নূরে আলম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শাকিব হাসান ও কার্যনির্বাহী সদস্য সৌমেন্দ্র গোস্বামী।

বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল সাংগঠনিক বৈঠক

জাতীয় পর্ষদের পক্ষ থেকে প্রতিটি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ সমন্বয় করেন যথাক্রমে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের ডা. রেদোয়ান মাহমুদ, খায়রুন্নাহার খেয়া, সায়মন চৌধুরী, তৌহিদ ইমাম, শাহিদা আলম, আলাদিন আল আসাদ, জাহিদ ফেরদৌস, সৌমেন্দ্র গোস্বামী ও ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার হাসান মাহমুদ সম্রাট।

বন্ধুসভার এই ভার্চ্যুয়াল সাংগঠনিক বৈঠকের আলোচনার মূল বিষয় ছিল স্থানীয় বন্ধুসভার নিজস্ব অনুষ্ঠানের গুরুত্ব, পাঠচক্র আয়োজন, জাতীয় সমাবেশ আয়োজন, স্থানীয় পর্যায়ে বইমেলা আয়োজন, বছরভিত্তিক অনুষ্ঠানসূচি তৈরি করা ও বিভিন্ন দিবস উদ্‌যাপন, জাতীয় পর্ষদ আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও জাতীয় পর্ষদ ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন (বিশেষ করে সহমর্মিতার ঈদ, একটি ভালো কাজ, বৃক্ষরোপণ, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আয়োজন), প্রতিটি অনুষ্ঠানের সংবাদ লেখা ও প্রকাশ, মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক কর্মশালা আয়োজন, পরিবেশ সুরক্ষায় কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, বন্ধুসভার কক্ষে যাতায়াত ও আড্ডা, সেরা বন্ধুসভা নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় যথাযথভাবে অংশগ্রহণ ও রিপোর্টিং করা, জাতীয় পর্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ, বছর শেষে নির্ধারিত সময়ে কমিটি গঠন, যূথবদ্ধতা ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষা ইত্যাদি। এ ছাড়া সৃজনশীল ও ব্যতিক্রমী কী ধরনের অনুষ্ঠান করা যেতে পারে, এ বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

সভাপতি জাফর সাদিক বলেন, জাতীয় পর্ষদ ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়নমূলক কর্মশালার আয়োজন করতে হবে, যাতে বন্ধুরা নিজেদের একজন দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। পাশাপাশি গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী নতুন এই বাংলাদেশে বন্ধুরা নিজেদের দায়িত্বশীল আচরণ, শৃঙ্খলা ও যূথবদ্ধতার মাধ্যমে বিভিন্ন গঠনমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে একটি বৈষম্যহীন দেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে।

সফলভাবে এ বছরের ভার্চ্যুয়াল সাংগঠনিক বৈঠক শেষ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে জাতীয় পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক বলেন, ‘সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় বন্ধুসভাগুলোর কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য এই সাংগঠনিক বৈঠক বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। আশা করি, বৈঠকে যারা অংশগ্রহণ করেছে, তারা বছরব্যাপী কাজ বাস্তবায়নের জন্য একটি দিকনির্দেশনা পেয়েছে এবং সেভাবে এগিয়ে যাবে। এতে স্থানীয় বন্ধুসভার কার্যক্রম গতিশীল হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আরও বাড়বে।’

বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল সাংগঠনিক বৈঠক

বন্ধুদের উদ্দেশে সাংগঠনিক সম্পাদক নেওয়াজুল মওলা বলেন, ‘একটি সংগঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সাংগঠনিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা। এ জন্য প্রত্যেক বন্ধুকে বন্ধুসভার নীতিমালা জানা জরুরি। প্রয়োজনে গঠনতন্ত্রের ওপর পাঠচক্র আয়োজন করে প্রতিটি পদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদও বন্ধুসভাগুলোকে নিয়ে আলাদাভাবে বৈঠক আয়োজন করবে। নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করার পাশাপাশি বন্ধুদের দায়িত্বশীল আচরণ ও কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজ নিজ বন্ধুসভাকে সেরাদের সেরা করে গড়ে তোলা সম্ভব।’

এ ছাড়া জাতীয় পর্ষদ থেকে আগামী দিনেও নির্দিষ্ট বিরতিতে ভার্চ্যুয়াল সাংগঠনিক বৈঠক আয়োজনের পাশাপাশি সশরীর স্থানীয় বন্ধুসভাগুলোয় সাংগঠনিক সফর আয়োজন অব্যাহত থাকবে বলে জানান জাতীয় পর্ষদের নেতারা।