‘ত্রাতিনা চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল, “আমি কোথায়?” তার কণ্ঠস্বর দূরে মিলিয়ে গেল। তারপর প্রতিধ্বনিত হয়ে আবার ফিরে এল, আমি কোথা...আমি কোথায়...খুব ধীরে ধীরে প্রতিধ্বনিতগুলো মিলিয়ে যেতে থাকে। তারপর একসময় আবার সেই নৈঃশব্দ্যের শূন্যতায় ডুবে যায়। ত্রাতিনা আবার চিৎকার করল, “আমি কোথায়?” তার চিৎকার বহুদূর থেকে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে, প্রতিধ্বনিত শব্দগুলো ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকে। শব্দগুলো মিলিয়ে যেতে যেতে আবার নতুন করে অনুরণিত হয়। ত্রাতিনার মনে হয়, সে বুঝি কারও কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়েছে। স্পষ্ট বোঝা যায় না, কিন্তু কোনো এক ধরনের কণ্ঠস্বর। মনে হয় কেউ কিছু একটা বলছে।’ মুহম্মদ জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন বই ‘ত্রাতিনা’ থেকে কথাগুলো বলছিলেন ভৈরব বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন।
‘বই জানি স্বপ্ন বুনি’ শিরোনামে ১৫ দিনে ৬টি বই পড়ার বিশেষ কর্মসূচির তৃতীয় আয়োজনটি হয় ভৈরব উদয়ন স্কুলে। ১৮ সেপ্টেম্বর স্কুল প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের নিয়ে পাঠচক্র আয়োজন করে ভৈরব বন্ধুসভা। এবারের বিষয় ছিল জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনি লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন বই ‘ত্রাতিনা’। ১৬৪তম পাঠের আসরটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রিফাত হোসেন।
আসরের শুরুতে মুহম্মদ জাফর ইকবাল সম্পর্কে আলোচনা করেন মহিমা মেধা। তিনি জানান, বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ ও শিক্ষাবিদ। কিশোরসাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ও গণিতবিষয়ক বইয়ের জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি।
কার্যনির্বাহী সদস্য প্রিয়াংকা গ্রন্থ আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘সায়েন্স ফিকশন “ত্রাতিনা” মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনবদ্য একটি সৃষ্টি। পড়ার সময় মনে হচ্ছিল আমিই যেন ত্রাতিনা। মহাকাশের রোমাঞ্চকর ঘটনাগুলো পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেয়। বিজ্ঞান একাডেমির মহাপরিচালক মহামান্য রিহা যেন জাফর ইকবাল স্যারের প্রতিচ্ছবি। পৃথিবী বাঁচানোর জন্য ত্রাতিনার মা রায়ীনার ত্যাগ পাঠকের চোখ ভিজিয়ে তোলে।’
বইটিতে মহাকাশ, গ্যালাক্সি, মহাকর্ষজ বল, স্পেসশিপ, এলিয়েন, রোবট ইত্যাদি বিষয়ে সুন্দর করে বর্ণনা দেওয়া আছে। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেয় স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা। স্কুলের প্রশাসনিক সমন্বয়কারী মানিক চৌধুরী বলেন, ‘ভৈরব বন্ধুসভার পাঠচক্রে উদয়ন স্কুলকে সম্পৃক্ত করায় আমরা উপকৃত হয়েছি। এর আগে ২০১৯ সালে আনিসুল হকের লেখা “সফল যদি হতে চাও” বইটি নিয়ে পাঠের আসর হয়েছিল।’
স্কুলের পরিচালক মতিউর রহমান বলেন, ‘পাঠচক্রের মাধ্যমে নতুন কিছু শেখা যায়, পাঠচক্র সৃষ্টিশীল তরুণ সৃষ্টি করছে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। “ত্রাতিনা” বইটিতে আমরা ভবিষ্যতের ইঙ্গিত পাই।’ আলোচনায় আরও যুক্ত হন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা, ভৈরব বন্ধুসভার উপদেষ্টা ওয়াহিদা আমিন, সুমাইয়া হামিদ, জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক তানশি নাহার।
পাঠের আলোচনা শেষে মনোযোগী শ্রোতাদের জন্য কুইজ পর্বের আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থীরা আগ্রহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে। পর্বটি বেশ জমজমাট হয়। পর্বটি সঞ্চালনা করেন ভৈরব বন্ধুসভার পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক জান্নাতুল মিশু। কুইজ বিজয়ীরা হলেন মুরসালিন, রামিসা ও নিহা। বিজয়ীদের বই পুরস্কার দেওয়া হয়।
ভৈরব বন্ধুসভার সভাপতি নাহিদ হোসাইন বলেন, ‘বই আমাদের মনের খোরাক মেটায়। শুধু পাঠ্যবইয়ে আবদ্ধ থাকলে চলবে না, এর পাশাপাশি দর্শন, ইতিহাস, সাহিত্য, সায়েন্স ফিকশন বইগুলোও পড়া চাই। এ ছাড়া মানুষের জন্য বেশি বেশি কাজ করতে হবে, তাহলে জীবন সফল হবে।’
পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিদরাতুল রশিদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক এরফান হোসেন, দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক সাইফ রহমান, ম্যাগাজিন সম্পাদক রাহিম আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক আনাস খান, বন্ধু সামিয়া সিদ্দিকা, জিহাদ, প্রাপ্তি ঘোষ, সাদিয়া সরকার, হান্নান হিমু। পাঠের আসরটি ভৈরব বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি প্রচারিত হয়। লাইভটি পরিচালনা করেন অর্থ সম্পাদক মানিক আহমেদ।
দপ্তর সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা