৩ হাজার ৩২৫ দশমিক ৬১ একর আয়তনবিশিষ্ট রাতারগুল জলাবন সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি মিঠাপানির জলাবন। চিরসবুজ এই বন গোয়াইন নদের তীরে অবস্থিত। এখানে সবচেয়ে বেশি জন্মায় করচগাছ। এখানকার গাছপালা বছরে চার থেকে সাত মাস পানির নিচে থাকে। বর্ষাকালে এই বন ২০ থেকে ৩০ ফুট পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে। বছরের বাকি পানির উচ্চতা ১০ ফুটের মতো থাকে। বর্ষাকালে এই বনে অথই জল থাকে চার মাস। তারপর ছোট ছোট খালগুলো হয়ে যায় পায়ে চলা পথ। আর তখন পানির আশ্রয় হয় বন বিভাগের খোঁড়া বিলগুলো। সেখানেই আশ্রয় নেয় জলজ প্রাণিকুল।
একসময় বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন হিসেবে মনে করা হতো রাতারগুলকে। পরবর্তীকালে জুগিরকান্দি মায়াবন, বুজির বন ও লক্ষ্মী বাঁওড় জলাবন নামে আরও জলাবন বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যায়। পৃথিবীতে মিঠাপানির যে ২২টি জলাবন রয়েছে, তার মধ্যে রাতারগুল অন্যতম।
৪ অক্টোবর রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টে আনন্দভ্রমণ করেছেন এমসি কলেজ বন্ধুসভার বন্ধুরা। সকাল ১০টায় কলেজ গেইট থেকে বাসযোগে ভ্রমণের যাত্রা শুরু হয়। যাত্রাপথে একের পর এক জনপ্রিয় বাংলা গান গাইতে থাকেন বন্ধুরা। আঁকাবাঁকা সরু রাস্তা দিয়ে শহরের বুক চিরে বেরিয়ে যায় বাস। সেখান থেকে গোয়াইন নদে পৌঁছে ছোট ছোট ডিঙি নৌকা করে নদীর দুই ধারের সবুজের সমারোহ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে সোয়াম্প ফরেস্টে পৌঁছে যান বন্ধুরা।
সেখানে দুই ঘণ্টা ছিলেন সবাই। ডিঙি নৌকায় করে ঘুরে জলাভূমির সৌন্দর্য উপভোগ করেন। বেলা দুইটায় বন্ধুরা নৌকাঘাটে ফিরে আসেন। দুপুরের খাবার শেষে ছিল বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন। মেয়েদের ‘জলে ডাঙা’ খেলায় বিজয়ী হয়েছেন বন্ধু সামিয়া আক্তার, লিমা তালুকদার ও শারমিন লিপি। ছেলেদের ‘বেলুন রক্ষা’ খেলায় বিজয়ী হয়েছেন বন্ধু রুবেল ফারহিন, তাপস শীল ও রয়েল মিয়া। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন উপদেষ্টা নিকসন দাস।
উপস্থিত দক্ষতার খেলায় বন্ধুদের নিজেদের লটারির মাধ্যমে প্রাপ্ত বিষয়ের ওপর দক্ষতা দেখানোর সুযোগ হয়। সেখান থেকেও তিনজন বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হয়। বিজয়ীরা হলেন বন্ধু শামস উদ দোহা, রুবেল ফারহিন ও সামিয়া আক্তার।
বিকেল চারটার দিকে সিলেটের উদ্দেশে রওনা দেন বন্ধুরা। পথিমধ্যে বাসে অনুষ্ঠিত হয় সাংগঠনিক আড্ডা। ২০১৭-১৮ কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমান উপদেষ্টা, সাবেক বন্ধু ও বর্তমান বন্ধুদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে এই আনন্দভ্রমণ। এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে নতুন বন্ধুরা উজ্জীবিত হবেন।
এমসি কলেজের শিক্ষক ও বন্ধুসভার উপদেষ্টা আবদুল বাসিত অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যাচ্ছেন। তাঁর হাতে বিদায়ী সম্মাননা তুলে দেন বর্তমান কার্যকরী কমিটি। আবদুল বাসিত বলেন, ‘বিদায় হয় নতুন রূপে ফিরে আসার জন্য। আবারও এমসি কলেজ বন্ধুসভার সঙ্গে যুক্ত হতে চাই। যাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে সুন্দর আনন্দভ্রমণের মাধ্যমে আমাকে সম্মাননা জানালেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ।’
আনন্দভ্রমণ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছেন এমসি কলেজ বন্ধুসভার ২০১৯ কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি আলমগীর ফজল, ২০২০ কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন, ২০২১-এর সভাপতি আবদুল আজিজ, বর্তমান উপদেষ্টা তানভীর মাহফুজ ও ওয়ার্ল্ড ট্রেক কনসালটেন্সি সেন্টার।
সভাপতি, এমসি কলেজ বন্ধুসভা