২২ বিড়ালের নিবাসে ২২ গোলাপের ভালোবাসা

কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভার পক্ষ থেকে ২২ বিড়ালের লালন–পালনকারী পরিবারকে ২২টি গোলাপ উপহার দেওয়া হয়ছবি: বন্ধুসভা

এ যেন ভালোবাসার এক অনন্য নজির! এমন কিছু মানুষ, যাঁরা ভালোবাসা ছড়িয়ে দেন সবখানে, সবার প্রাণে। তেমনি কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের শেখ মাসুদ ইকবাল ও রওশন আরা দম্পতি এবং তাঁদের সন্তানদের বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা। প্রাণীর প্রতি ভালোবাসার কারণে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভার পক্ষ থেকে ২২ বিড়ালের লালন–পালনকারী পরিবারকে ২২টি গোলাপ উপহার দেওয়া হয়েছে।

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে জেলা শহরের হয়বতনগর এলাকার আইনজীবী শেখ মাসুদ ইকবাল ও রওশন আরা দম্পতির বাড়িতে গিয়ে তাঁদের হাতে বন্ধুসভার বন্ধুরা ভালোবাসার উপহার হিসেবে ২২টি লাল গোলাপ, ২২টি কলম ও বুধবারের প্রথম আলো পত্রিকার ২২টি সংখ্যা তুলে দেন। এ সময় শেখ মাসুদ ইকবালের মেয়ে সুবহে ইরানী ও মেয়ে অনিন্দিতা আরাবি উপস্থিত ছিল।

আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি তাফসিলুল আজিজ, কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি মোস্তাফিজ মারুফ, সাধারণ সম্পাদক নুসরাত জাহান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, নাজমুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাহিদুল ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আয়েশা হাবিবাসহ অন্য বন্ধুরা।

সভাপতি মোস্তাফিজ মারুফ বলেন, ‘আসলে ভালোবাসা দিবসের কথা বলতেই নারী-পুরুষের ভালোবাসার ছবিটাই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে। আর এটাই স্বাভাবিক। তবে মানুষ জন্ম নেয় অসীম ভালোবাসার ক্ষমতা নিয়ে। তেমনি আমাদের মাঝেই আছেন এমন কিছু মানুষ, যাঁরা ভালোবাসা ছড়িয়ে দেন সবখানে, সবার প্রাণে। যেমন শেখ মাসুদ ইকবাল ও রওশন আরা দম্পতি ও তাঁদের সন্তানেরা। তাঁদের ভালোবাসা বিড়ালের প্রতি। যা ভালোবাসার এক অনন্য নজির।’

রওশন আরার ২২ বিড়ালের একেকটির নামও দেওয়া হয়েছে আলাদা করে। সিকি, ইকি, সিম্বা, মাইলু, মুগলি, সুজি, নিশি, ইনি, ডোরা, লুসি, ছোটসহ আরও অনেক নাম। পরম যত্নে বিড়ালগুলো পালন করছেন কিশোরগঞ্জ শহরের হয়বতনগর এলাকার বাসিন্দা রওশন আরা। তিনি সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কার্যালয়ের একজন পরিসংখ্যানবিদ। স্বামী শেখ মাসুদ ইকবাল আইনজীবী ও সংবাদকর্মী। তাঁরা হয়বতনগর মুন্সিবাড়ি এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।

রওশন আরা জানান, পরিবারের সদস্যসংখ্যা অনুযায়ী একটি ফ্ল্যাটই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বিড়ালগুলোর জন্য তাঁদের আরেকটি ফ্ল্যাট নিতে হয়। এখন এই বাসাতেই ২২টি বিড়াল পুষছেন। প্রতিদিন খাবার হিসেবে দেওয়া হয় সেদ্ধ সিলভার কার্প, পাঙাশ মাছ আর মুরগি। সঙ্গে থাকে দুধ। বিড়ালগুলো এখন তাঁদের পরিবারের সদস্য হয়ে গেছে। বন্ধুসভার বন্ধুরা ভালোবাসা দিবসে তাঁদেরকে গোলাপ দেওয়ায় তিনি খুশি।

প্রাণীর প্রতি ভালোবাসার কারণে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভার উদ্যোগ
ছবি: বন্ধুসভা

মাসুদ ইকবাল জানান, প্রায় তিন বছর আগে তাঁর বড় ছেলে আশা-নূর-আন ইরাক রাজধানীর মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে তেজগাঁও এলাকার বাসায় ফেরার সময় দেখে এক লোক লাঠি দিয়ে রাস্তায় একটি বিড়ালকে আঘাত করছেন। ইরাকের খুব মায়া হয়। সে দৌড়ে গিয়ে লোকটিকে সরিয়ে দিয়ে বিড়ালটি কোলে তুলে নেয়। বাসায় নিয়ে আদর–যত্ন করে সুস্থ করে তোলে। কয়েক দিন পর প্লাস্টিকের বাস্কেটে করে সেটাকে লালন–পালন করার জন্য কিশোরগঞ্জের বাসায় নিয়ে আসে। ইরাক আদর করে বিড়ালটির নাম দেয় ইকি। পরবর্তী সময়ে তিনবারে ১৫টি বাচ্চা দেয় ইকি। এভাবেই সূচনা হয় তাঁদের বিড়াল পরিবারের।

মাসুদ ইকবাল আরও জানান, এ পর্যন্ত তাঁদের এখানে ৬২টি বিড়াল লালন–পালন করা হয়েছে। এর মধ্যে নানা দুর্ঘটনায় কয়েকটির মৃত্যু হয়েছে। বাকিগুলো আত্মীয়স্বজনসহ পরিচিত লোকজন লালন-পালনের জন্য নিয়ে যান।

রওশন ও মাসুদ জানান, ২২ বিড়ালের খাওয়া ও চিকিৎসা বাবদ মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। সাড়ে আট লাখ টাকা খরচ করে বিড়ালের জন্য আলাদা ঘর তৈরি করছেন। কারণ, ভাড়া বাসায় বিড়াল থাকায় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বাড়ি তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে।

রওশন আরা বলেন, ‘বিড়ালগুলো পরিবারের সবার সঙ্গে খুনসুটি করে। ছেলেমেয়েসহ সবাই তা উপভোগ করি। এগুলো এখন আমার সন্তানের মতো। রাতে বিড়ালগুলো বাসার বিভিন্ন ফার্নিচার, দরজা, জানালা, চিপাচাপা, ফাঁকা জায়গাসহ খাটে উঠে ঘুমায়। এসব বিড়ালের প্রতি আমাদের একধরনের মায়া জন্মে গেছে।’

মাসুদ ইকবাল বলেন, ‘সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, সে জন্য প্রতিটি বিড়ালকে ভ্যাকসিন দেওয়া আছে। ছেলেমেয়েরা বিড়াল দেখভালে সাহায্য করে। আজকে বন্ধুসভার বন্ধুরা আমাদের বাড়িতে এসে বিড়ালের প্রতি আমাদের ভালোবাসার কারণে গোলাপসহ অন্যান্য উপহার তুলে দেন। এ কাজে উৎসাহ দেওয়ার জন্য বন্ধুসভার বন্ধুদের ধন্যবাদ জানাই।’