রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মুসলমানীর গল্প’ মানবতার জয়গান

ময়মনসিংহ বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসরছবি: বন্ধুসভা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মুসলমানীর গল্প’ মানবতাবাদী সাহিত্যচিন্তার এক উজ্জ্বল প্রকাশ। জীবনের শেষ পর্বে রচিত এই ছোটগল্পে সমাজের কঠোর ধর্মীয় বিভাজন, জাতপাতের অহংকার ও মানবিক সম্পর্কের সংকীর্ণতাকে গভীর দৃষ্টিতে দেখেছেন কবিগুরু। গল্পটি মূলত এক হিন্দু মেয়ের ও এক মুসলমান বৃদ্ধের মানবিক সম্পর্কের গল্প। এর ভেতরে লুকিয়ে আছে সমাজ–সংস্কারের তীক্ষ্ণ বার্তা।

১৯ অক্টোবর বিকেলে ‘মুসলমানীর গল্প’ নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে ময়মনসিংহ বন্ধুসভা। প্রথম আলো ময়মনসিংহ অফিসে এটি অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় বন্ধুরা গল্পের পটভূমি, বিষয়বস্তু, লেখক পরিচিতি ও মূলভাব নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত আলোচনা করেন।

গল্পের কাহিনি বিশ্লেষণে মেহেদী হাসান বলেন, ‘কমলা নামের এক হিন্দু মেয়ের জীবন একটি বিপদের মুহূর্তে জড়িয়ে পড়ে মুসলমান বৃদ্ধ হবির খাঁর সঙ্গে। ডাকাতদের হাত থেকে কমলাকে রক্ষা করে হবির খাঁ নিজের ঘরে আশ্রয় দেয়। কিন্তু ধর্মীয় পরিচয়ের দেয়াল সমাজ সহজে মেনে নেয় না। হবির খাঁর মানবিকতা ও উদারতা ধর্মীয় সংকীর্ণতাকে ছাপিয়ে যায়। অন্যদিকে কমলা উপলব্ধি করে মানুষের আসল ধর্ম মানবতা, বাকি সবই গৌণ।’

বন্ধু বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে ধর্ম বা জাত–বর্ণের দ্বন্দ্ব ভেঙে মানুষের আসল পরিচয় ও মানবতাকে সামনে এনেছেন। ধর্ম মানুষের জন্য, মানুষ ধর্মের জন্য নয়। দার্শনিক সত্যটি গল্পে সূক্ষ্মভাবে ফুটে উঠেছে। “মুসলমানী” শব্দটি এখানে ধর্মান্তরের নয়; বরং মানবিক আত্মজাগরণের প্রতীক।’

সভাপতি মোহাম্মদ খালিদ হাসান বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “মুসলমানীর গল্প”–এ ধর্মীয় টানাপোড়েনকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে উপস্থাপন করেছেন। হিন্দু–মুসলমান ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে মানবতার জয়গান করেছেন। আজও গল্পটি সমান প্রাসঙ্গিক। কারণ, সমাজে বিভাজন ও সংকীর্ণতা এখনো রয়ে গেছে। গল্পটি আমাদের বিভেদ নয়, মানবিকতার পৃথিবী গড়তে আহ্বান জানায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “মুসলমানীর গল্প” মানবতার জয়গান।’

পাঠচক্র শেষে আসন্ন ‘একটি ভালো কাজ’ কর্মসূচি নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা করেন উপদেষ্টা মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মানবিক মানুষ হতে চাইলে সমাজের জন্য কাজ করতে হবে। নিজেদের আরও পরিশীলিতভাবে উপস্থাপন করতে হবে।’

আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু ফারহান অভি, অনিক হাসানসহ অন্য সদস্যরা।

সভাপতি, ময়মনসিংহ বন্ধুসভা