সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ সাহিত্য। সাহিত্য মানুষের জীবনবোধকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলে। জীবনবোধকে কাছ থেকে দেখা যায় উপন্যাসে। ব্যক্তি ও সমাজজীবনের মিশেলে উপন্যাসের চরিত্ররা হয়ে ওঠে পাঠকের একান্ত নিজের। তেমনই একটি পাঠকপ্রিয় উপন্যাস নিমাই ভট্টাচার্য রচিত ‘মেমসাহেব’।
নিমাই ভট্টাচার্যের শৈশব কেটেছে বৃহত্তর যশোরে। ১৯৩১ সালে বর্তমান মাগুরা জেলার শালিখা থানায় জন্মগ্রহণ করেন; যেটা আগে যশোরের অন্তর্গত ছিল। তিনি যশোর সম্মিলনী ইনস্টিটিউটের ছাত্র ছিলেন। দেশভাগের আগপর্যন্ত এ অঞ্চলেই ছিলেন। কর্মজীবনে ছিলেন একজন সাংবাদিক। তবে তিনি সাহিত্যিক হিসেবেই স্মরণীয়; প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দেড় শতাধিক। ‘মেমসাহেব’ তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। কালজয়ী উপন্যাসটিতে ফুটে উঠেছে ভালোবেসে একজন নারীর ছোঁয়ায় কীভাবে একটি ছন্নছাড়া জীবনের অসম্ভব পরিবর্তন হতে পারে। কীভাবে একজন পুরুষ ধীরে ধীরে উন্নতির চরম শিখরে উঠতে পারে, তার বিস্তর বর্ণনা। এ ছাড়া ফুটে উঠেছে কীভাবে পাশে না পেয়েও ভালোবাসার মানুষের স্মৃতিচারণা করে দিনাতিপাত করা যায়।
৩০ ডিসেম্বর যশোর সদরের সুলতানপুর মাঠে চোখজুড়ানো শর্ষেখেতের পাশে লেখক নিমাই ভট্টাচার্যের ‘মেমসাহেব’ বইটি নিয়ে এ বছরের শেষ পাঠচক্র আয়োজন করে যশোর বন্ধুসভা। শহরের পাশেই গ্রামীণ মাঠের হলুদ গালিচা অভ্যর্থনা জানায় আগত পাঠকদের। পাঠচক্রটিও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
পাঠচক্রে বইটির বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বিস্তারিত আলোচনা করেন সবাই। ‘বইটি যিনি একবার পড়বেন, তাঁর জীবনে বসন্ত নেমে আসবে’, এমন অনুভূতি প্রকাশ করেন বন্ধুসভার জ্যেষ্ঠ বন্ধু মনিরা খাতুন। বইয়ের ভেতরের ঐতিহাসিক বিষয়বস্তু সামনে এনে জীবনে প্রেমের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন রেজা।
প্রথম আলোর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘সাংবাদিকতা কিংবা লেখালেখিতে যাঁদের আগ্রহ আছে, তাঁদের জন্য একটা অনুপ্রেরণামূলক বই হতে পারে “মেমসাহেব:।’ মুখ্য আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন যশোর সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোফাজ্জেল হোসেন। তাঁর আলোচনায় বইটির আদ্যোপান্ত উঠে আসে। এ ছাড়া বইটির প্রতি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহ্জাহান কবীর।
উপস্থিত ছিলেন রূপালী ব্যাংক পিএলসি প্রধান কার্যালয় ঢাকার এজিএম আশিকুর রহমান খান, এজিএম মো. রিয়াজুল ইসলাম ও রূপালী ব্যাংক পিএলসি যশোরের মিস্ত্রিখানা করপোরেট শাখার এজিএম শহিদুল ইসলাম। বন্ধুদের মধ্যে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মুরাদ হোসেন, সাইদুর রহমান, মোয়াজ্জেম হোসেন, শাহিন আলম, সোনালী ইয়াসমিন, ফয়সাল মাহমুদ, রাইয়াদ ফেরদৌস, মাসুদুর রহমান, তামান্না কবীর, নুরুন্নবী প্রমুখ।
পাঠচক্র চলাকালে কবিতা ও গান পরিবেশন করেন মনিরা খাতুন, মুরাদ হোসেন ও হামিদা হিমু। নাশতা হিসেবে দেওয়া হয় খেজুরের রস, খেজুরের গুড় ও চিতই পিঠা। সভাপতি লাকি রানী কাপুড়িয়ার সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই চমৎকার পাঠচক্র। সঞ্চালনা করেন যশোর বন্ধুসভার বন্ধু হামিদা হিমু।