পাঠ্যবইয়ে কবি গোলাম মোস্তফার নুরু-পুষি-আয়েশা-শফি সবাই মিলে বৈশাখ মাসের নির্ঘুম দুপুরে বাগানের গাছের ছায়ায় যা করত, তার নাম চড়ুইভাতি। প্রতিবছর এই চড়ুইভাতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার নতুন-পুরোনো বন্ধুদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। ১৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পুরোনো আইইআর অনুষদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক চড়ুইভাতি।
শুরুতে ছিল বন্ধুদের পরিচয় পর্ব। তারপর খেলাধুলা পর্বে ছেলেদের জন্য মোরগ লড়াই এবং মেয়েদের জন্য পিলো পাসিং খেলা। মজার খেলায় অংশ নিয়ে বন্ধুরা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। এ পর্ব শেষ হতে না হতেই দুপুরের পূর্বাভাস এবং মুখরোচক খাবারের আয়োজন।
খাবার পর্ব শেষে ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন। চবি বন্ধুসভার বন্ধুরা সাংস্কৃতিক আয়োজনে বরাবরই দারুণ। শুরুতেই বন্ধু তাবাচ্ছুম কায়ছারের কণ্ঠে লালনগীতি সবার প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। এরপর একে একে বন্ধু মিথিলা দত্তের পল্লিগীতি, বন্ধু মননের আধুনিক গান, বন্ধু আহনাফ হাসানের গান, বন্ধু মারিয়া আলম ও সৌরভের দ্বৈত পরিবেশনা, বন্ধু উৎস বিশ্বাসের গান এবং তন্ময় দত্ত মিশু ও আমিন উদ্দিনের কবিতা পুরো আসর জমিয়ে রাখেন। বন্ধু আফিয়া আনজুমের কোকিল কণ্ঠী গলায় মধুর সংগীত, সবশেষে বন্ধু ফাল্গুনী ভট্টাচার্যের কণ্ঠে ‘আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা’ গান যেন পুরো অনুষ্ঠানে এক মুগ্ধতা বিরাজ করে।
নবীন বন্ধুদের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুরোনো বন্ধুরাও। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বন্ধু আমিন উদ্দিন বলেন, ‘বন্ধুসভার বছরব্যাপী যেসব অনুষ্ঠান হয়, তার মধ্যে চড়ুইভাতি অন্যতম। এই আয়োজন বিশেষত নবীন বন্ধুদের জন্য হলেও এতে থাকে প্রবীণ বন্ধুদের সরব উপস্থিতি। নবীন-প্রবীণের এক সেতুবন্ধন হয়ে ওঠে এটি। সেই সঙ্গে সাংগঠনিক গতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে বন্ধুদের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার বিকল্প নেই। চড়ুইভাতি বন্ধুদের মধ্যে সেই সুযোগটুকু কিছুটা হলেও করে দেয়। দিনব্যাপী বন্ধুদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, আড্ডা আর আনন্দের মধ্য দিয়ে একটি চমৎকার উপভোগ্য মুহূর্ত স্মৃতিতে জমা হয়।’
রৌদ্র পড়ে এল ক্রমে, ছায়া পড়ল বেঁকে,
ক্লান্ত গরু গাড়ি টেনে চলেছে হাট থেকে।
আবার ধীরে ধীরে
নিয়ম-বাঁধা যে-যার ঘরে চলে গেলেম ফিরে।
একটা দিনের মুছল স্মৃতি, ঘুচল চড়ুইভাতি,
পাড়াকাঠের ছাই পড়ে রয়—নামে আঁধার রাতি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতার মতোই বেলা গড়িয়ে এলে এবার সবার বিদায় নেওয়ার পালা। তার পূর্বে অনুষ্ঠিত হয় র্যাফেল ড্র এবং সারা দিনে নানা ইভেন্টের পুরস্কার বিতরণ। পুরস্কার বিতরণ শেষে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন সাধারণ সম্পাদক আলী আকরাম। এবারের আয়োজন বাস্তবায়নে মূল দায়িত্বে ছিলেন বন্ধু সাবিত হাসান, তাবাসসুম কায়সার ও মনোরঞ্জন রায়।
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা