সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছিলেন, ‘বই কিনে কেউ কোনো দিন দেউলিয়া হয় না’। অত্যাধুনিক এই যুগে এসে অনেকেই যখন বইয়ের পিডিএফ ভার্সন ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে পড়তে পছন্দ করেন, তখন এমন কিছু মানুষ এখনো রয়েছেন, যাঁরা পৃষ্ঠা উল্টিয়ে বই পড়তে স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করেন। তবে দুই পক্ষের মানুষই মনে হয় অপেক্ষা করে থাকেন বাঙালির প্রাণের বইমেলার জন্য। একই প্রাঙ্গণে বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে পছন্দের লেখকের বই কিনতে পারার সুযোগের অপেক্ষায় একটি বছর অপেক্ষা করতে হয় বইপ্রেমীদের। কিন্তু সবার তো আর সুযোগ হয় না রাজধানীতে গিয়ে বইমেলা থেকে বই কেনার। তাঁদের আক্ষেপ হয়তো কিছুটা মেটাতে পারে জেলা পর্যায়ে আয়োজিত বইমেলা।
দীর্ঘ অনেক বছর লালমনিরহাট জেলায় কোনো বইমেলার আয়োজন হয়নি। তাই দুই বছর আগে লালমনিরহাট জেলার তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কাছে লালমনিরহাট বন্ধুসভার বন্ধুরা বইমেলা আয়োজন করার একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। অবশেষে তারুণ্য উৎসব-২০২৫ উদ্যাপন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন লালমনিরহাটের সহযোগিতায় আয়োজিত ‘তারুণ্য উৎসব-২০২৫ ও বিসিক উদ্যোক্তা মেলা’য় ৮টি জোনের মধ্যে একটি জোন রাখা হয় বইমেলার জন্য। ১০ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই মেলায় প্রথমবারের মতো লালমনিরহাট বন্ধুসভার উদ্যোগে প্রথমা প্রকাশনীর বইয়ের স্টল দেওয়া হয়।
বই পড়ার প্রতি ছোটদের আগ্রহী করে তোলার জন্য জেলা পর্যায়ে অন্য মেলার সঙ্গে যুক্ত না হয়ে শুধু বইমেলা আরও বড় পরিসরে করা উচিত।
সাম্প্রতিক সময়ের ঘটে যাওয়া জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা বই থেকে শুরু করে কিশোর উপন্যাস, থ্রিলার, ভ্রমণকাহিনি, হাসির গল্প, কবিতা ও গজলের বই, ছোটদের জন্য সহজবোধ্য করে লেখা গণিতের বই, স্বাস্থ্যসচেতনতা নিয়ে লেখা বই এবং বিখ্যাত ঔপন্যাসিকদের উপন্যাস—সবকিছু পাওয়া গেছে এই স্টলে।
জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার মেলা উদ্বোধনের পর স্টল পরিদর্শন করতে এসে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সাক্ষ্য’ ও ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান: নতুন পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে দুটি বই কেনেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট জেলার পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম, লালমনিরহাট জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রাজীব আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাহবুবুর রহমান, বিসিক লালমনিরহাটের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ অন্য ব্যক্তিরা।
পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসনসহ জেলার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিসে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত অনেকেই অফিসে এবং ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখার জন্য নতুন প্রকাশিত বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন একাডেমিক কাজে প্রয়োজন এমন বই, উপন্যাস, ছোটদের ছোটগল্পের বই, অনূদিত বই কেনেন। ১২ ফেব্রুয়ারি মেলা পরিদর্শনে আসেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি প্রথমা প্রকাশনীর স্টলে এসে বিভিন্ন বই দেখেন এবং সার্বিক খোঁজখবর নেন।
১৬ ফেব্রুয়ারি স্টলের পাশাপাশি মেলা প্রাঙ্গণে লালমনিরহাট বন্ধুসভা ‘শুধু তরুণেরাই পারে থ্রি-জিরো ধারণাটি বাস্তবায়ন করতে’ বিষয়ের ওপর বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। লালমনিরহাটের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা বন্ধুসভার বইমেলায় অংশগ্রহণের পাশাপাশি বিতর্ক আয়োজন এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম একই সঙ্গে চালিয়ে যাওয়া দেখে অনেক প্রশংসা করেন।
মেলার দর্শনার্থী রওশন আরা বেগম বলেন, ‘বই পড়ার প্রতি ছোটদের আগ্রহী করে তোলার জন্য জেলা পর্যায়ে অন্য মেলার সঙ্গে যুক্ত না হয়ে শুধু বইমেলা আরও বড় পরিসরে করা উচিত। যাতে আরও অনেক বই দেখার ও কেনার সুযোগ পায়।’
বই কেনার পাশাপাশি প্রতিদিন প্রথমা প্রকাশনীর স্টলে এসে অনেকেই বন্ধুসভার কাজ সম্পর্কে জানার পর লালমনিরহাট বন্ধুসভার সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
সভাপতি, লালমনিরহাট বন্ধুসভা