সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র ‘চাঁদের অমাবস্যা’ উপন্যাস নিয়ে পাঠচক্র

চট্টগ্রাম বন্ধুসভার পাঠের আসরছবি: বন্ধুসভা

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ভিন্নধর্মী উপন্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘চাঁদের অমাবস্যা’। কালজয়ী এই রচনা বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র দ্বিতীয় উপন্যাস। জীবনচেতনার রূপায়ণ ও মনস্তাত্ত্বিক এ উপন্যাসটি নিয়ে গত ২৭ জুন বিকেলে পাঠের আসর করে চট্টগ্রাম বন্ধুসভা। হিরন্ময় কথকতা সিরিজ পাঠচক্রের ষষ্ঠ আসরটি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকার জাম্বুরি পার্কে অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচক হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সহসভাপতি রুমিলা বড়ুয়া। তিনি বলেন, লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র এ উপন্যাসটি পড়ার আগে লেখকের মেধা ও বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করতেই হবে। উপন্যাসটির বেশির ভাগ ফ্রান্সের আল্পস পর্বত অঞ্চলের পাইন–ফার এলমগাছ পরিবেষ্টিত ইউরিয়াজ নামক ক্ষুদ্র একটি গ্রামে লেখা। কোপন নদীর তীরবর্তী চাঁদপাড়া গ্রামের শিক্ষিত যুবক আরেফ আলী এক শীতের জ্যোৎস্নাস্নাত রাতে প্রকৃতির ডাকে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। তারপর সে প্রয়োজন মিটিয়ে ফেরার পথে অপার্থিব অমাবস্যার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে পড়ে। তখন হঠাৎ এক রহস্যময় ছায়ামূর্তি দেখতে পেয়ে সে তখন পা বাড়ায় গ্রামের পথে। তারপর বাঁশঝাড়ের পাশে গিয়ে আবিষ্কার করে এক মৃত নারীর নিথর দেহ, যা মুহূর্তেই তার চেতনায় আলোড়ন তোলে।

ঘটনার প্রকৃত রূপ ছিল আরও জটিল। আরেফ আলী ছিল গ্রামের প্রভাবশালী বড়বাড়িতে আশ্রিত গৃহশিক্ষক। সে মূলত সেদিন রাতে বড়বাড়িরই অন্যতম কর্তা কাদের আলীকে অনুসরণ করছিল। কাদের এক নিম্নবর্গীয় রমণীকে বাঁশঝাড়ে ডেকে এনেছিল কুপ্রবৃত্তির উদ্দেশ্যে। আরেফের হঠাৎ উপস্থিতির আশঙ্কায় এবং নিজের অপকর্ম ফাঁস হওয়ার ভয়ে কাদের সেই নারীর গলা চেপে হত্যা করে। উপন্যাসের সিংহভাগজুড়ে আরেফ আলীর অন্তরলোকে এই নির্মম ঘটনার প্রতিক্রিয়া ও দ্বন্দ্বের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আরেফ সত্য উদ্‌ঘাটনের সংকল্পে ঘটনাটি জানায় প্রথমে দাদাসাহেবকে, পরে পুলিশকে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব ও সামাজিক শ্রেণিবৈষম্যের শিকার হয়ে পুলিশ সব জেনেও কাদের আলীর পরিবর্তে আরেফকেই খুনের অপরাধে অভিযুক্ত করে।

বন্ধু নুরুজ্জামান খান বলেন, ‘চাঁদের অমাবস্যা’ উপন্যাসটিতে লেখকের বুদ্ধিমত্তা ছিল বেশ অনবদ্য। তিনি বইটির শুরু থেকে প্রথম ২৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত যুবক শিক্ষকের চরিত্রটিতে যেভাবে কৌতূহল তৈরি করেছিলেন, তা সত্যিই মুগ্ধকর।

পাঠচক্রে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু কামরান চৌধুরী, মাসুদ রানা, মাহির রিজোয়ান, ইকবাল হোসেন ও আফিফ ইব্রাহিম।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা