জীবন বাস্তবতা ও কল্পনার আদর্শে বঙ্কিমের অমর সৃষ্টি ‘কপালকুণ্ডলা’

সুনামগঞ্জ বন্ধুসভার পাঠের আসরছবি: বন্ধুসভা

সাহিত্যসম্রাট শ্রী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় বাংলা উপন্যাস ‘কপালকুণ্ডলা’। ধরে নেওয়া হয় বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক রোমান্টিক কাব্যধর্মী উপন্যাস এটি। যা ১৮৬৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। ইতিহাস প্রাধান্য না পেলেও এখানে ইতিহাস এসেছে কাহিনি নির্মাণের সহযোগী উপকরণ হিসেবে। জীবন বাস্তবতার রূপ ও কল্পনার আদর্শকে ধারণ করে বঙ্কিম সৃষ্টি করেছেন অনবদ্য এই সাহিত্য।

সূচনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। শেষে দিকভ্রান্ত হয়ে হঠাৎ এক তান্ত্রিক কাপালিকের কাছে আশ্রয় পান। পরের দিন ফলান্বেষণে বের হয়ে হঠাৎ কপালকুণ্ডলার সঙ্গে নবকুমারের দেখা হয়। ‘পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ?’ এই কথার মাধ্যমেই নবকুমারের সঙ্গে পরিচিতি ঘটে কপালকুণ্ডলার। কপালকুণ্ডলা ছিলেন কাপালিক তান্ত্রিকের পালিতা কন্যা। কাপালিক চেয়েছিলেন কপালকুণ্ডলা বড় হয়ে ওনার তন্ত্রসাধনা পথে সাহায্য করবে। কিন্তু ঘটে এর ব্যতিক্রম। এক ঘটনাচক্রে ওই কাপালিক তন্ত্রসাধনে সিদ্ধিলাভ করতে নবকুমারকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কপালকুণ্ডলাই নবকুমারের প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। স্থানীয় মন্দিরের অধিকারীর সহায়তায় নবকুমার কপালকুণ্ডলাকে বিয়ে করে নিজের বাড়ি সপ্তগ্রামে ফিরে আসেন। পথে মতিবিবি বা লুৎফউন্নিসা নামে এক বিদেশি রমণীর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়, যিনি ছিলেন নবকুমারের প্রথম পক্ষের স্ত্রী।

কপালকুণ্ডলা বাল্যকাল থেকে জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে কাপালিকের কাছে বড় হওয়ায় স্বাভাবিক সামাজিক রীতিনীতির সঙ্গে অপরিচিত ছিলেন। নবকুমারের বাড়িতে তিনি ধীরে ধীরে সমাজের মানুষজন ও তাদের আচারআচরণ সম্পর্কে ধারণা পেলেন। কপালাকুণ্ডলার নাম বদলে নতুন নাম রাখা হলো মৃন্ময়ী।

মতিবিবি বা লুৎফউন্নিসা আসলে নবকুমারের প্রথম স্ত্রী পদ্মাবতী ছিলেন। পরে সপরিবারে মুসলমান হয়ে আগ্রা চলে যান। পথে নবকুমারকে দেখে তিনি পুনরায় তাকে স্বামীরূপে লাভ করতে উৎসুক হন এবং সপ্তগ্রাম চলে আসেন। পদ্মাবতীর পরিচয় জানার পর নবকুমার তাকে প্রত্যাখ্যান করেন।

এদিকে কাপালিক কপালকুণ্ডলাকে বধ করতে সপ্তগ্রাম চলে আসে। তার হাত ভেঙে যাওয়ায় সে পদ্মাবতীর সাহায্য চায়।
পদ্মাবতী ব্রাহ্মণবেশ ধারণ করে কপালকুণ্ডলাকে সব খুলে বলে এবং নবকুমারকে ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করে। ব্রাহ্মণবেশী পদ্মাবতীর সঙ্গে কপালকুণ্ডলাকে দেখতে পেয়ে নবকুমার তাকে ভুল বুঝে খুব কষ্ট পান। আর কাপালিক সুযোগ বুঝে সুরাপান করিয়ে নবকুমারকে উস্কে দিতে থাকেন।

শেষপর্যন্ত নবকুমার আর কপালকুণ্ডলার মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব সংঘাতের মধ্য দিয়ে উভয়েই জীবনের চরম উপসংহারে উপনীত হয়।

২৪ সেপ্টেম্বর জেলা শহীদ মুক্তিযুদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগারে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসটি নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে সুনামগঞ্জ বন্ধুসভা। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো সুনামগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক আইনজীবী খলিল রহমান, সুনামগঞ্জ বন্ধুসভার উপদেষ্টা রাজু আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক তাজকিরা হক, সহসভাপতি রুবেল পাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল হক, বন্ধু রনজিত দে, কনক চক্রবর্তী, দীপ্ত তালুকদার, সৈয়দ ফাহিমুল ইমাদ ও রাজীব দেবসহ অন্য বন্ধুরা।

সভাপতি, সুনামগঞ্জ বন্ধুসভা