হুমায়ূন আহমেদের ‘লীলাবতীর মৃত্যু’ কাঁদাল বন্ধুদের

জেলা শহরের সাধারণ পাঠাগারের দোতলায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসরছবি: বন্ধুসভা

থেমে থেমে প্রায় সারা দিন বৃষ্টি ছিল। ২৭ সেপ্টেম্বর দিনটির মেঘে ঢাকা বিকেলটা মনে হচ্ছিল শ্রাবণের সন্ধ্যার মতোই। হালকা অন্ধকারে ঢাকা। এমন দিনে বন্ধুদের মনেও বুঝি ভর করেছিল বৃষ্টিভেজা প্রকৃতি। প্রকৃতির মতোই নরম অনুভূতি। এমনটাই যেন দেখা গেল হুমায়ূন আহমেদের গল্পগ্রন্থ ‘লীলাবতীর মৃত্যু’ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসরে।

আসর বসেছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাধারণ পাঠাগারের দোতলায়। ‘লীলাবতীর মৃত্যু’ গল্পটির পাঠ উপস্থাপনের একপর্যায়ে গলাটা ধরে এল বন্ধু নাফিজা আনজুমের। পাঠ যত এগুচ্ছে, তাঁর চোখের জল আর কান্নাভেজা কণ্ঠটাও তত স্পষ্ট হচ্ছে। শেষের দিকে দ্রুতই পাঠ শেষ করে কান্নার দমক আড়াল করতে টেবিল ছেড়ে ওঠে গেল সে পাঠাগারের এক কোনায়। তাঁকে সামলাতে সঙ্গে গেল বন্ধু মাসরুফা।

নাফিজার কান্না সংক্রমিত করে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোটবন্ধু জাহিদকেও। তবে তার কান্না ছিল নিঃশব্দ। নাজিফা তার খালাতো বোন। বোনের কান্নায় সে আর নিজেকে সামলাতে পারেনি। পাঠচক্রের আসরে তখন বেদনাবিধুর পরিবেশ। এমন পরিবেশের জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউ। চোখ মুছে আসরে যোগ দিয়ে নাজিফা বললেন, ‘গল্পটি আমি বহুবার পড়েছি। যতবার পড়েছি, ততবারই কেঁদেছি। নিজেকে সামলাতে পারিনি। কিন্তু তা ছিল একান্তে। আজ সবার সামনেও এমনটা হবে ভাবিনি।’

বন্ধুরা এ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দায়ী করলেন লেখক হুমায়ূন আহমেদকে। আলোচনায় ওঠে এল তরুণ-তরুণীদের আবেগ নিয়ে খেলা করতে পাকা খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। আনন্দ-বেদনার ভাসিয়েছেন দেশের লাখো তরুণ-তরুণীর হৃদয়। হাতে হাতে নিজের বই ধরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর লেখা বইগুলো আজও বার বার পড়া হয়।

‘লীলাবতীর মৃত্যু’ গল্পটি ছিল হুমায়ূন আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী শাওনের ব্যক্তিগত জীবনের এক বাস্তব কাহিনি। যেখানে ফুটে ওঠে তাদের অনাগত সন্তানের জন্য আনন্দ, মায়া, ভালোবাসা ও স্বপ্নের কথা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তাদের সন্তান জন্মগ্রহণের আগেই মারা যায়। যা আলোচকসহ উপস্থিত সবাইকে ব্যথিত করে।

পাঠচক্রে উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার উপদেষ্টা আনোয়ার হোসেন, সভাপতি আরাফাত মিলেনিয়াম, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক জাহিদ হাসান, বন্ধু মাশরুফা খাতুন, ফাবিহা ফারজানা, নাফিউল হাসান, আল মাহমুদ, মঈন আহমেদ, মুশফিক মাহাদী, সৈয়দ নুরুল আমিরুল মোমেনীনসহ অন্য বন্ধুরা।

সভাপতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভা