কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের ‘কখনো আমার মাকে’ উপন্যাস নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা। ৮ মে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
পাঠচক্রে বইটি নিয়ে আলোচনা করেন বইমেলা সম্পাদক আবদুল গাফফার। তিনি বলেন, ‘“কখনো আমার মাকে” উপন্যাসটি আমাকে আমার শৈশবের মায়ের শাসন এবং ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে সাহায্য করেছে। উপন্যাসটি পড়ে আমি আমার জীবনের সঙ্গে অনেক মিল পেয়েছি।’
আবদুল গাফফার বলেন, ‘মায়ের হাতে পড়ার জন্য মাইর খাওয়া থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময়ে বড় ভাইয়ের অমূল্য অনুপ্রেরণা, বাবার সততা এবং মায়ের অদম্য আকাঙ্ক্ষা—সবই আমাকে আজকের অবস্থানে পৌঁছানোর শক্তি দিয়েছে। উপন্যাসের কথক বাবার ওপর দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে যে সামাজিক অবিচারের চিত্র তুলে ধরেছেন, তা আমাদের সমাজে সৎ এবং ন্যায়পরায়ণ মানুষের প্রতি নিষ্ঠুর দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে।’
আবদুল গাফফার আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা এবং মায়ের ত্যাগের কাহিনি আমাকে আবেগময়ভাবে স্পর্শ করেছে। সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় হলো, সন্তানের সফলতার পূর্বে অনেক বাবা-মায়ের পৃথিবী থেকে বিদায় ঘটে। বাবার মৃত্যুর বর্ণনা পড়ার সময় অনুভব করলাম, সন্তানের জন্য একজন বাবা হারানো কতটা কষ্টদায়ক।’
সাধারণ সম্পাদক আদনানুল আলম বলেন, ‘বইটিতে আমরা দেখতে পাই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের এক মফস্সল শহরের একটি পরিবারের গল্প। গ্রামের সাধারণ জীবনের দৃশ্যপট দিয়ে শুরু হলেও গল্প ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় এক সংগ্রামী মায়ের জীবনের না বলা কষ্ট ও ত্যাগের রহস্য উন্মোচনের দিকে। বড় মায়ের মমতা আর ছোট মায়ের কঠোরতা, বাবার মতো একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ন্যায়নিষ্ঠা, বড় ভাইয়ের আত্মত্যাগ—সব মিলিয়ে লেখায় একটি আবেগঘন পারিবারিক কাহিনি ফুটে উঠেছে।’
এই বইয়ে শৈশবের খেলাধুলা, স্কুলজীবন, ভাইবোনের হাসি-কান্না, বাড়ির আশপাশের ছোট ছোট ঘটনা—সবকিছু মিলিয়ে একদম জীবন্ত করে তুলেছেন লেখক আনিসুল হক। গল্পের শেষ দিকে অসুস্থ ছোট মায়ের মুখে উঠে আসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং রাজাকারদের নির্মমতা। ছোট মা আইনুনের সত্য, বেদনা ও আত্মসম্মানের লড়াইয়ের গল্প। তাঁর বলা শেষ কথাগুলো ‘আমি আমার যুদ্ধে হারিনি’ মৃত্যুশয্যায় তিনি বলতে শুরু করেন তাঁর প্রতি হওয়া বর্বরতা।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাঁকে দিনের পর দিন অমানবিক শারীরিক নির্যাতন করে। যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হলে তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। তাঁকে ত্যাগ করে তাঁর পরিবার। একপর্যায়ে তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম।
এই বইটিতে শুধু একটি পরিবারের গল্প নয়, এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় ৭১ সালের বর্বরতা, লাখো নারীর সম্ভ্রম ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া অমূল্য স্বাধীনতার কথা।
সাধারণ সম্পাদক, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা