ময়মনসিংহ বন্ধুসভা রোপণ ও বিতরণ করল ৯ হাজার গাছ

ঈশ্বরগঞ্জ–নেত্রকোনা আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশে চারাগাছ রোপণ করছেন বন্ধুরাছবি: বন্ধুসভা

‘আর নয় প্লাস্টিক দূষণ, জীবন বাঁচাতে বৃক্ষরোপণ’ প্রতিপাদ্যে ময়মনসিংহ বন্ধুসভা জেলার পাঁচটি উপজেলায় মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। আগস্ট মাসজুড়ে চলা এ কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তার পাশে মোট ৯ হাজার ১৭৭টি চারা রোপণ ও বিতরণ করেছেন বন্ধুরা।

গত ৯ আগস্ট সদর উপজেলার দাপুনিয়া ও দেওখলা এলাকায় বিভিন্ন রাস্তা ও গ্রামবাসীর মধ্যে দেড় হাজার চারাগাছ রোপণ ও বিতরণের মাধ্যমে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সহসভাপতি তৌহিদুজ্জামান ছোটন, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক মোস্তাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সভাপতি মোহাম্মদ খালিদ হাসান, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানসহ অন্য বন্ধুরা।

ময়মনসিংহ বন্ধুসভার এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তৌহিদুজ্জামান ছোটন বলেন, ‘গাছ লাগানো ও গাছ বাঁচিয়ে রাখতে সমাজের প্রত্যেককে এগিয়ে আসতে হবে। প্রাকৃতিকভাবে সজীব ও প্রাণবন্ত থাকতে আমাদের গাছ লাগাতেই হবে।’

ময়মনসিংহ বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, বায়ু ও মাটিদূষণ রোধ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও মানবজাতির সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে বৃক্ষরোপণ অপরিহার্য। শুধু চারা রোপণই নয়, গাছ বাঁচিয়ে রাখতে যত্ন নিতে হবে। বিভিন্ন ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে পরিবেশকে আরও সবুজ ও স্বাস্থ্যকর করে তোলা সম্ভব।’

৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নিমগাছ রোপণ করা হয়। এ সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা আক্তার বলেন, ‘একটি পূর্ণবয়স্ক নিমগাছ ১০টি এসির সমান কাজ করতে পারে। এটি তাপমাত্রা হ্রাস, বায়ু বিশুদ্ধিকরণ ও ক্ষতিকর গ্যাস শোষণে বিশেষভাবে কার্যকর। শহরের মাইক্রোক্লাইমেট উন্নয়নে এটি একটি প্রাকৃতিক এসি।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের ময়মনসিংহ জেলার ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম, কৃষিবিদ মাহিদুল ইসলাম ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা।

ময়মনসিংহ বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি।

৪ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চারা রোপণ ও বিতরণ করা হয়। একই দিন ঈশ্বরগঞ্জ–নেত্রকোনা আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশে চারাগাছ রোপণ করেন বন্ধুরা। এদিন মোট ৬ হাজার ২৭০টি গাছ বিতরণ করা হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো চরনিখলা উচ্চবিদ্যালয়, ঈশ্বরগঞ্জ বিশ্বেশ্বরী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ঈশ্বরগঞ্জ ডিএস কামিল মাদ্রাসা, ঈশ্বরগঞ্জ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উচাখিলা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, শৈশব বিদ্যানিকেতন ও চরনিখলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

চারা বিতরণের সময় শিক্ষার্থীদের তিন ‘ম’ (মাদক, মিথ্যা ও মুখস্থ) বিরোধী শপথ পড়ানো হয় এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অন্তত একটি করে গাছ রোপণের জন্য উৎসাহিত করা হয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণে শিক্ষক ও বন্ধুরা নিজ হাতে চারা রোপণ করেন। গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খুঁটি, খাঁচা ও বন্ধুসভার নামফলকও বসানো হয়।

ময়মনসিংহ বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি।

বন্ধুসভার বন্ধুরা ব্যক্তিগত উদ্যোগেও গাছ রোপণ করেছেন। উপদেষ্টা সাদিকুল ইসলাম ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক ও পতিত জমিতে একাই ৭০০টির বেশি গাছ রোপণ করেন। উপদেষ্টা মো. আবুল বাশার ত্রিশাল উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২১২টি গাছ রোপণ করেন। বন্ধু মো. উজ্জল নিজ গ্রামের রাস্তাঘাট ও বাড়ির আশপাশে পতিত জমিতে ২৫০টি ফলদ ও বনজ চারা রোপণ করেন। এ বছর বন্ধুসভার সদস্য, উপদেষ্টা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মোট ৯ হাজার ১৭৭টি চারা রোপণ ও বিতরণ করা হয়েছে। ফলদ, বনজ, ভেষজ ও শোভাবর্ধনশীল গাছের সমন্বয়ে গঠিত এই কর্মসূচি পরিবেশ রক্ষা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেন উপদেষ্টা মোস্তাফিজুর রহমান, শওকত হোসেন, এখলাস উদ্দিন খান, তাহমিনা শেখ, মো. আবুল বাশার, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, রাবিয়াতুল বুশরা, উম্মে সালমা, ম্যাগাজিন সম্পাদক মুনমুন আহমেদ, বন্ধু বোরহান উদ্দিন, মো. উজ্জলসহ অন্যরা।

সভাপতি, ময়মনসিংহ বন্ধুসভা