‘কম্বল কিনিবার টাকা কোঠে পাবু। শীত আসিলি হামার কষ্ট শুরু হই যাছে। এইবার তোমরা প্রথমে হামাক কম্বল দিবার আসিলেন। এই কম্বল পাই খুব উপকার হইল বাপু।’ ২০ ডিসেম্বর দিনাজপুর বন্ধুসভার শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচিতে কম্বল উপহার পেয়ে ৭০ বছর বয়সী কাঞ্চনী বেগম এভাবেই অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ ষড়্ঋতুর দেশ। কালের আবর্তনে প্রতিটি ঋতুই তার স্ব–স্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রকৃতির বুকে হাজির হয়। এর মধ্যে শীতের আগমন প্রকৃতিতে আনে নির্মম বার্ধক্যের জড়তা আর সীমাহীন রিক্ততা। ভৌগোলিক অবস্থানে হিমালয় পর্বতের নিকটবর্তী হওয়ায় ঠান্ডার প্রকোপ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে খানিকটা বেশি। প্রতিবছর শীতকালে শৈত্যপ্রবাহ ও হাড়কাঁপানো ঠান্ডা চিরচেনা ঘটনা উত্তরের জেলাগুলোয়। শীতের তীব্রতা ও শিশিরভেজা কুয়াশাঘেরা ভোরে মানুষ কাজে মন বসাতে পারে না। পাতলা কাপড় গায়ে দিয়ে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে থাকে। চরম দুর্ভোগসহ ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। কুয়াশার ধূম্রজাল ছিন্নভিন্ন করে সেই ভোগান্তির রেশ কমাতে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেছে দিনাজপুর বন্ধুসভা।
এদিন বিকেলে প্রথম আলো ট্রাস্টের অর্থায়নে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের ধামাহার গ্রামে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ করেন বন্ধুসভার বন্ধুরা। শীতার্তদের মধ্যে ছিল বিভিন্ন পেশা ও বয়সের আড়াই শ নারী-পুরুষ।
আগের দিন বিকেলে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় পরিদর্শন করা হয় গ্রামটি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে শীতার্ত মানুষের তালিকা তৈরি করে তাঁদের হাতে টোকেন তুলে দেওয়া হয়। সেই টোকেন নিয়ে শুক্রবার ধামাহার খানকা মাঠে উপস্থিত হন তাঁরা। বন্ধুরা তাঁদের সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড় করিয়ে প্রত্যেকের হাতে একটি করে কম্বল তুলে দেন।
শীতার্তদের উদ্দেশে প্রথম আলোর দিনাজপুর প্রতিনিধি রাজিউল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা সবাই প্রথম আলো পত্রিকার নাম শুনে থাকবেন। এই পত্রিকার দাতব্য সংস্থা প্রথম আলো ট্রাস্ট। প্রথম আলো ট্রাস্টের সহযোগিতায় আমরা প্রতিবছর বিভিন্ন জায়গায় শীতের উপহার দিয়ে থাকি। এবার এই সামান্য উপহারটুকু নিয়ে এসেছি আপনাদের দেওয়ার জন্য। সবাই সুস্থ থাকবেন।’
শীতবস্ত্র পেয়ে আনন্দিত হয়ে রুনা খাতুন (৫৫) বলেন, ‘মুই খুব অসহায় বা, খুব উপকার করিলু বা, না হলে ঠান্ডাত যে কষ্ট হামার। ঠান্ডার দিনত একটা কম্বল পায়া ভালোই লাগছে মোক।’
‘কয় দিন থাকি শীত পরির ধরিছে। হাত–পা কোঁকড়া নাগি যাছে। শেষ রাইতত ঠান্ডা বেশি নাগোছে। খুব ভালো হইল তোমরা এই সময়তে একটা কম্বল দিলেন। এলা কম্বলটা গাওত দিলে আরাম লাগিবে,’ লাঠিতে ভর করে এসে এভাবেই অনুভূতি ব্যক্ত করেন ৬৫ বছরের আছিয়া খাতুন।
৭০ বছর বয়সী হবিবুর রহমানের শরীর বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে। চোখেও ঠিকমতো দেখতে পান না। নাতিকে সঙ্গে করে তিনি এসেছিলেন শীতের উপহার সংগ্রহ করতে। শীতে কাঁপতে কাঁপতে হবিবুর রহমান বলেন, ‘বয়স হয়ে গেছে, কাজকর্ম করতে পারি না। ছেলের সংসারে আছি। ছেলের আয়রোজগারও কম। ঠান্ডার কাপড় কিনার টাকা কই। গতকালকে একজন একটা টোকেন দিয়ে বলল, এইটা দেখালি কম্বল দিবে। খুব উপকার হলো কম্বলটা পেয়ে।’
কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর বন্ধুসভার সহসভাপতি সুব্রত সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিয়ানা চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মনোরঞ্জন সিংহ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শবনম মুস্তারিন, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক সুম্মা মেসবাহুন, প্রশিক্ষণ সম্পাদক বিপ্লব রায়, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক দিপু রায়সহ অন্য বন্ধুরা।
মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক, দিনাজপুর বন্ধুসভা