যক্ষ্মা বাংলাদেশে একটি ঘাতক ব্যাধি এবং জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এ রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। ভালো চিকিৎসা গ্রহণ না করলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে যেসব দেশ যক্ষ্মা রোগের উচ্চঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। এ ঝুঁকি কমাতে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ইউএসএআইডির অর্থায়নে আইসিডিডিআরবি ও প্রথম আলোর সহযোগিতায় আলোচনা সভা করেছে দিনাজপুর বন্ধুসভা।
২৯ নভেম্বর বিকেলে সদর উপজেলার ৬ নম্বর আউলিয়াপুর ইউনিয়নের উত্তর উলিপুর গ্রামে এ জনসচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন ডিস্ট্রিক্ট সার্ভিলেন্স মেডিকেল কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন, আইসিডিডিআরবির কর্মকর্তা সৈয়দ সামসুল হক, যক্ষ্মাযোদ্ধা গোলাম জাকারিয়া ও দিনাজপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা। সভায় অংশ নেন উলিপুর গ্রামের অসংখ্য নারী।
আইসিডিডিআরবির কর্মকর্তা সৈয়দ সামসুল হক বলেন, জাতীয় যক্ষ্মা নির্মূল কার্যক্রমের কারণে রোগী সুস্থ হওয়ার হার ৯৫ শতাংশ। বিনা মূল্যে ওষুধ ও সেবা প্রদানের জন্য ২০১৫ সালে যেখানে প্রতি লাখে ৪৫ জন মারা যেত, ২০২১ সালে প্রতি লাখে মৃত্যুর সংখ্যা ২১ জন। তিনি আরও বলেন, প্রতি মিনিটে বাংলাদেশে অন্তত একজন লোক যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। ২০২১ সালে ৩ লাখ ৭৫ হাজার লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৪২ হাজার মানুষ। অর্থাৎ মৃত্যুর হার প্রতি ১২ মিনিটে একজন। তাই দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি হলে অবশ্যই নিকটস্থ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্সে পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।
নারীদের উদ্দেশে যক্ষ্মাযোদ্ধা গোলাম জাকারিয়া বলেন, ‘আমার টিবি শনাক্ত হওয়ার আগে ধারণাই ছিল না যে যক্ষ্মা হতে পারে। কেননা আমার কাশি ছিল না। রাতে জ্বর আসত আর খাওয়ার রুচি ছিল না। নিয়মিত ওষুধ সেবনের ফলে এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ।’
ডিস্ট্রিক্ট সার্ভিলেন্স মেডিকেল কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হবার ভয়ে অনেকেই এই রোগ প্রকাশ করতে চান না। অনেকে চিকিৎসা সম্পন্ন না করেই পালিয়ে বেড়ান। যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসায় অস্ট্রেলিয়ায় খরচ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১২ লাখ টাকা। এত ব্যয়বহুল চিকিৎসা আমাদের দেশে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে।’
সভা সঞ্চালনা করেন দিনাজপুর বন্ধুসভার বন্ধু মুনিরা শাহনাজ চৌধুরী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি সুব্রত সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক মনোরঞ্জন সিংহ, বন্ধু দীপু রায়, আরিয়ান চৌধুরী সাবা, বিপ্লব রায়, আল বাসিত উৎস ও বেলালুর রহমান।
মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক, দিনাজপুর বন্ধুসভা