কিশোরদের বড় হওয়ার পথে নানা পরামর্শে দিয়ে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের বই ‘কিশোর বড় হবে’। বইটিতে রয়েছে কিশোরদের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা। বইটি নিয়ে ১৫ জুলাই জিল্লুর রহমান প্রিমিয়ার ব্যাংক স্কুল অ্যান্ড কলেজে পাঠের আসর করেছেন ভৈরব বন্ধুসভার বন্ধুরা, সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কলেজের একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী।
১৮১তম পাঠের আসরের সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যনির্বাহী সদস্য রিফাত হোসেন। এই পাঠচক্রের মাধ্যমে কলেজ পর্যায়ে পাঠচক্রের আসর শুরু হলো। পর্যায়ক্রমে ভৈরবের সব কলেজে পাঠের আসর নিয়ে বসবে ভৈরব বন্ধুসভা।
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও ভৈরব বন্ধুসভার উপদেষ্টা সুমন মোল্লা সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘মুদ্রিত বই পড়ার আগ্রহ বাড়াতে ভৈরব বন্ধুসভা ২০১৫ সাল থেকে পাঠচক্র করে আসছে। আয়োজনটিকে ছড়িয়ে দিতে কলেজ পর্যায়ে পাঠের আসরের যাত্রা শুরু হলো।’
গ্রন্থ আলোচনার শুরুতে লেখক আনিসুল হক সম্পর্কে আলোচনা করেন রিফাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও কবি আনিসুল হক। তাঁর লেখা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস “মা” বেশ জনপ্রিয়। ‘মা’ এবং ‘ফাঁদ’ বইগুলো একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আনিসুল হকের লেখায় ফুটে ওঠে বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি।’
‘কিশোর তুমি বড় হবে’ বইটির মোট ২৭টি বিষয়বস্তু থেকে ১০টি বিষয় নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হয়। পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক তানসি নাহার আলোচনা করেন পড়ার সময় পড়া খেলার সময় খেলা, আম-কাঁঠালের ছুটি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ১০টি জিনিস কখনো প্রকাশ করতে নেই, জীবন কখনো ব্যর্থ হয় না—এগুলো নিয়ে।
সাধারণ সম্পাদক মানিক আহমেদ আলোচনা করেন কেমন করে সফল হব, তুমি কি জানো না তুমি কী চাও!, যে ৫০টি নতুন শপথ আমার জীবন বদলে দিতে পারে, সূর্য হয়ে ওঠো ইচ্ছেমতো ছোটো—এগুলো নিয়ে।
প্রশিক্ষণ সম্পাদক মহিমা মেধার আলোচনায় উঠে আসে, আমাকে কেউ বুঝতে পারে না, আমাকে কেউ ভালোবাসে না নিয়ে।
গ্রন্থ আলোচনা আরও যুক্ত হন কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শৈশবের সেকাল আর একাল নিয়ে মজার স্মৃতিচারণা করেন। ঝড়ের সময় আম কুড়ানো, সাইকেল চালানো, সাঁতার শেখা, গাছে চড়ে জাম খাওয়া নিয়ে আলোচনা করেন। শিক্ষার্থী রিভা আক্তার বলে, ‘বইটির কয়েকটি বিষয় আমাকে নিয়ে গেল শৈশবের দিনগুলোতে। ভৈরব বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ এত চমৎকার একটি বই নিয়ে আলোচনা করার জন্য।’
উপদেষ্টা সুমাইয়া হামিদ বলেন, ‘কিশোরদের এমন কাজ করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে সেই কাজ নিয়ে গল্প করা যায়। সেই সঙ্গে স্বপ্ন দেখতে হবে।’
জিল্লুর রহমান প্রিমিয়ার ব্যাংক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শরীফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা আজকের পাঠের আসর থেকে সমৃদ্ধ হলাম। চমৎকার এই বইটি আমাদের পাঠাগারেও সংগ্রহে রাখব।’
গ্রন্থ আলোচনা শেষে মনোযোগী শ্রোতাদের জন্য কুইজ পর্বের আয়োজন করা হয়। কুইজ পর্বে বিজয়ীরা হলেন খাদিজাতুল কোবরা, সাদিয়া ইসলাম, জায়েদ শাহরিয়ার, শিলা মণি ও রিভা আক্তার। বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় কিশোর আলো ম্যাগাজিন।
বন্ধুসভার দলগত বই পড়া কর্মসূচিতে পাশে দাঁড়িয়েছেন এনআরবিসি ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ এরিয়ার তরুণ কর্মকর্তারা। কিশোরগঞ্জ এরিয়ার ব্যবস্থাপক রাকিবুল হাসান বলেন, ‘বই পড়ার মতো আনন্দদায়ক কাজটিকে আমরা সম্মিলিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
বিষয়টিতে খুব উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালক এম এ মামুন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের কর্মীরা প্রথম আলো বন্ধুসভার তারুণ্যের পাঠাভ্যাস তৈরির উদ্যোগের সঙ্গে যেভাবে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে, তা সত্যিই গর্বের এবং আশাজাগানিয়া একটি ঘটনা। সবাই মিলে প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণে উদ্যোগী হলে নিশ্চেই ভালো কিছু হবে বলে বিশ্বাস করি।’
সভাপতি, ভৈরব বন্ধুসভা