‘নিজেদের বাঁচার জন্য গাছকে বাঁচাতে হবে’

বন্ধুদের দেওয়া গাছের চারা হাতে শিক্ষার্থীরা
ছবি: বন্ধুসভা

গাছ আমাদের পরম বন্ধু। একটি জাতি হিসেবে অস্তিত্ব, রাষ্ট্র হিসেবে সমৃদ্ধি ও একজন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে আমাদের অবশ্যই গাছ থাকতে হবে। কিন্তু বর্তমানে দেশের বনভূমির পরিমাণ মোট আয়তনের মাত্র ১৫ শতাংশ (প্রায়), যা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে পরিবেশদূষণের মাত্রা। ১৫ আগস্ট ‘প্লাস্টিকমুক্ত পৃথিবী চাই, গাছ লাগাই, গাছ বাঁচাই’ প্রতিপাদ্যে প্রথম ধাপে বৃক্ষরোপণ করেছে নোয়াখালী বন্ধুসভা।

জুলাই-আগস্ট প্রথম আলো বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে নোয়াখালী বন্ধুসভা আগস্টকে ‘বৃক্ষরোপণের মাস’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। মাসজুড়ে ন্যূনতম এক হাজার গাছ লাগানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন বন্ধুরা। বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি সচেতনতা তৈরি করাই উদ্দেশ্য। নোয়াখালী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির প্রথম ধাপের স্থান নির্ধারণ করা হয় মাইজদী বালিকা বিদ্যানিকেতন। এ সময় ২০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে বন্ধুরা বিভিন্ন ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা বিতরণ করেন এবং বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বেশ কিছু গাছের চারা রোপণ করেন।

উপহারের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ গাছের যত্ন নেওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়
ছবি: বন্ধুসভা

রোপণ শেষে বৃক্ষরোপণের প্রতিপাদ্য নিয়ে আলোচনা করেন বন্ধুসভার বন্ধুরা। সভাপতি মাছুম বিল্লাহ বলেন, ‘একটি পরিপূর্ণ বৃক্ষ ২০ জন মানুষের অক্সিজেন সরবরাহ করতে সক্ষম। প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরা দেশজুড়ে লক্ষাধিক গাছের চারা রোপণ ও বিতরণ করছেন। একটি সুন্দর পৃথিবী গঠনের জন্য এসব গাছ রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার।’ এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ গাছের যত্ন নেওয়ার দিকনির্দেশনা দেন।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জ্যানিসা আফরোজ বলেন, ‘পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের ১৫ থেকে ৩৫ বছরের তরুণেরা প্লাস্টিকের ব্যবহার করছেন সবচেয়ে বেশি; এমন প্লাস্টিক ব্যবহার করছেন, যা কেবল একবার ব্যবহারযোগ্য ও অপচনশীল। এই প্লাস্টিক বছরের পর বছর আমাদের পরিবেশেই থেকে যাচ্ছে এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব স্থলজ ও জলজ প্রাণিকুলের জীবন হুমকির মুখে ফেলছে।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় আট লাখ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, যা জীববৈচিত্র্যকে দিনে দিনে ধ্বংস করছে।

গাছের চারা রোপণের পর সেগুলো চিহ্নিত করে দেওয়া হয়
ছবি: বন্ধুসভা

উপদেষ্টা সুমন নূর বলেন, ‘বিশ্বের কাছে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং। পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে, যার ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করেছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য দায়ী গ্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম কার্বন ডাই-অক্সাইড। বৃক্ষ বায়ুর কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। তাই গ্লোবাল ওয়ার্মিং থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে সবাইকে গাছ লাগাতে হবে এবং গাছের যত্ন নিতে হবে। নিজেদের বাঁচার জন্য গাছকে বাঁচাতে হবে।’

শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের সঙ্গে ‘প্লাস্টিক মুক্ত পৃথিবী চাই, গাছ লাগাই, গাছ বাঁচাই’ প্রতিপাদ্যটি পালনে অঙ্গীকার করে। কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি জাহিদ হাসান, আবু তাহের, অর্থ সম্পাদক উম্মে ফারহীন, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক তাজকির হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক আফরিনা আনিকা, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক মো. শিমুল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সুলতানা, বন্ধু মেহেরাজ ফয়সাল, তাহসিন রহমান, নাহিদা ইতু, আজিজুল ইসলাম, আবিদ উল হক, আরাফাত শিহাব, সানি তামজিদসহ অন্য বন্ধুরা।

মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক, নোয়াখালী বন্ধুসভা