রাষ্ট্র সংস্কার
আমাদের দেশ, আমরাই গড়ব
সরকার পতনের পর কিছু স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে, পুলিশ কর্মবিরতিতে চলে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা। এ অবস্থায় দেশ সংস্কারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এগিয়ে আসেন বন্ধুসভার বন্ধুরাও।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দল, মত, ধর্ম, বর্ণ—নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে সম্প্রীতির বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে আসছে প্রথম আলো বন্ধুসভা। সম্প্রতি সরকার পতনের পর দেশের কয়েকটি স্থানে যখন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বন্ধুসভার বন্ধুরা।
দক্ষিণের জেলা ভোলার কালীমাতা দুর্গামন্দির, মদন মোহন ঠাকুর জিউর মন্দির, শ্রীশ্রী কালীমাতার মন্দির, শ্রীশ্রী লক্ষ্মী গোবিন্দ জিউর ঠাকুর মন্দির, চরনোয়াবাদ কালীমন্দির এবং শ্রীশ্রী রাধা রাসবিহারী মন্দির পরিদর্শন করেন ভোলা বন্ধুসভার বন্ধুরা। পরে জেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে সেগুলো রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
সাতক্ষীরা বন্ধুসভার বন্ধুরাও নিজেদের মধ্যে কয়েকটি দল গঠন করে নিজ নিজ এলাকায় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মিলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর ও মন্দির রক্ষায় কাজ করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় বন্ধুসভার বন্ধুরা এলাকাবাসীর সঙ্গে মিলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কাজ করেছেন।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের পাশে
দেশে সরকার পতনের পর শুরু হয় এক অস্থিতিশীল অবস্থা। ট্রাফিক পুলিশরা চলে যায় কর্মবিরতিতে। সেই অচলাবস্থা কাটাতে এগিয়ে আসেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা। পরিচালনা করেন ট্রাফিকের দায়িত্ব। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে যান তাঁরা। এ কাজে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিলেন বন্ধুসভার বন্ধুরাও। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করেন বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার ও ফলের জুস।
ঢাকার বিভিন্ন সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ ও ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার বন্ধুরা অন্তত পাঁচ হাজার ফলের জুস বিতরণ করেন। শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, আগারগাঁও, মিরপুর, কালশী, ইসিবি, বনানী, মহাখালীসহ বিভিন্ন সড়কে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
বরিশাল নগরের নথুল্লাবাদ, চৌমাথা, বটতলা, বগুড়া রোড, নতুনবাজার, সিঅ্যান্ডবি পোল, আমতলা, সাগরদীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, জুস, বিস্কুটসহ শুকনা খাবার বিতরণ করে বরিশাল বন্ধুসভা। সিলেটের রিকাবীবাজার এলাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাওয়ার পানি ও বিস্কুট বিতরণ করেন সিলেট বন্ধুসভার বন্ধুরা। কয়েকজন বন্ধু ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণেও সহযোগিতা করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ চত্বর, বাতেন খাঁ মোড়, শান্তির মোড় ও বিশ্বরোড মোড়ে ট্রাফিকের দায়িত্বরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভা। জামালপুর বন্ধুসভা জেলা শহরের ফৌজদারি এলাকা, পাঁচরাস্তার মোড়, শহীদ হারুন সড়ক, বকুলতলা ও দয়াময়ী মোড়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবার বিতরণ করে।
চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, জিইসি মোড়, ওয়াসা, প্রবর্তক মোড়, নিউমার্কেট, টাইগারপাস, জামালখান, চেরাগী পাহাড়, চকবাজার, কদমতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় এক হাজার জুস বিতরণ করেন চট্টগ্রাম বন্ধুরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের ধন্যবাদ জানান। চকবাজার মোড়ে ট্রাফিকের কাজে যুক্ত থাকা আবদুর রহমান বলেন, ‘আপনাদের ধন্যবাদ এভাবে আমাদের পাশে থাকার জন্য।’
শহরের দেয়ালে চলছিল দল বেঁধে গ্রাফিতি আঁকার উৎসব। এতে অংশ নেওয়া মো. মুনতাসির বলেন, ‘রোদের তাপে গলা শুকিয়ে গেছে। মনে মনে ভাবছিলাম পানীয়জাতীয় কিছু খেতে পারলে ভালো হতো। এমন সময় আপনারা এটা হাতে দিলেন। ধন্যবাদ।’
চট্টগ্রামের পটিয়া বন্ধুসভার বন্ধুরাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, প্রতিবাদী গ্রাফিতি অঙ্কন করেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ও বিস্কুট বিতরণ করেন। নারায়ণগঞ্জে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বন্ধুসভার বন্ধুরা বিভিন্ন রাস্তা পরিষ্কার, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এ ছাড়া শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বালন করেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় নিজ নিজ এলাকায় থেকে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি বন্ধুসভার বন্ধুরাও দেশ সংস্কারে ভূমিকা রেখেছেন। মিরপুরের রাস্তায় ট্রাফিকব্যবস্থার দায়িত্ব পালন করেন বন্ধু ওয়াসিম। রাত জেগে মালবাহী ট্রাক চলাচলের জন্য ট্রাফিকব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করেন নাবিল হাসান। তপ্ত রোদে গাজীপুর চৌরাস্তায় ট্রাফিক কন্ট্রোল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব পালন করেন বন্ধু রাহিদ।
গ্রাফিতি অঙ্কন
সারা দেশেই দেয়ালে দেয়ালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ ও বিভিন্ন প্রতিবাদী কথার গ্রাফিতি অঙ্কন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বন্ধুসভার বন্ধুরাও অংশ নেন। ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রাফিতি আঁকার কাজে অংশ নেন প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরা। জেলা শহরের টাঙ্গন ব্রিজের দুই পাশের দেয়ালে গ্রাফিতি অঙ্কন করেন তাঁরা। বন্ধুরা ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’, ‘এখন দরকার জনগণের সরকার’সহ বেশ কয়েকটি শিরোনামে একাধিক গ্রাফিতি আঁকেন।
সাভারের আশুলিয়ায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৮ নম্বর গেটের দেয়ালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন গ্রাফিতি এঁকেছেন ড্যাফোডিল বন্ধুসভার বন্ধুরা।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলে গ্রাফিতি আঁকার কাজে অংশ নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ, পটিয়া, সিলেট, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন বন্ধুসভার বন্ধুরা।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম
সরকার পতনের পর ওই দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অসংখ্য সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা। সেগুলো নিজেদের উদ্যোগে পরিষ্কার ও মেরামত করে দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্ধুসভার বন্ধুরাও এতে অংশ নেন। ‘দেশ আমাদের সবার, পরিষ্কারের দায়িত্বও সবার’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বগুড়া সদর উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নেন পুণ্ড্র ইউনিভার্সিটি বন্ধুসভার বন্ধুরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধুরা শহরের বিশ্বরোড এলাকার ট্রাফিক পুলিশ বক্স, আরামবাগ এলাকার বঙ্গবন্ধু ক্লাব, আশপাশের সড়ক এবং অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন। এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার স্বাস্থ্য ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক জাহিদ হাসান বলেন, ‘এই দেশ আমাদের সবার, পরিষ্কারের দায়িত্বও সবার। তরুণ প্রজন্মের উদ্যোগে সারা দেশে চলছে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। এই উদ্যোগের সঙ্গে বন্ধুসভার বন্ধুরা যুক্ত হতে পেরে খুবই আনন্দিত ও গর্বিত।’