মুরারিচাঁদ কলেজ বন্ধুসভার পাঠচক্রে ‘অদ্ভুত সব গল্প’

মুরারিচাঁদ কলেজ বন্ধুসভার পাঠচক্র।

হুমায়ূন আহমেদের ‘অদ্ভুত সব গল্প’ বইটার নাম শুনলেই কেমন জানি অদ্ভুত লাগে! তেমনি অদ্ভুত এই বইয়ের গল্পগুলো। বইটিতে মোট পাঁচটি ছোটগল্প রয়েছে। আর সব কটিই অন্য রকম অদ্ভুত রকমের।

শুরুর গল্পটা এক ফকিরের। গল্পের নাম ‘গুনীন’। ফকির কিন্তু মন্ত্র জানত, তার নাকি দুইটা জিনও ছিল। ফকিরের নাম চান্দ শাহ। তবে এটা তার সত্যিকার নাম নয়। এ ছাড়া তার আরও একটা নাম আছে। কিন্তু ফকিরকে কেউ দাম দেয় না। কেউ তার তন্ত্রমন্ত্র বা জিনকে ভয় পায় না। কারণ, ফকিরের মতো ওগুলোও ছিল নিষ্ক্রিয়। তার স্ত্রী ফুলবানু অসুস্থ। সারা দিন বিছানায় পড়ে থাকে। সেও ফকিরকে কথা শোনায়। আগে একটু কম শোনাত, কিন্তু দিন দিন বাড়ছে। এখন আর কোনো লাগাম নেই। কিন্তু একদিন হলো কী….?

তারপরের গল্প ‘আয়না’। শওকত সাহেব ইস্টার্ন কমার্শিয়াল ব্যাংকের ক্যাশিয়ার। সকালবেলায় দাড়ি কাটতে গিয়ে গাল কেটে ফেলেছেন। আসলে তিনি যে আয়না দেখে শেভ করেন, এটা অনেক পুরোনো হয়ে গেছে, তাই ঝাপসা দেখায়। এর ফলে তিনি রেজার আন্দাজে টান দিয়েছেন। আর তাতেই গাল কেটে গেছে। তিনি গালে হাত দিয়ে বসে আছেন। ভাবছেন, একদিনও মনে থাকে না আয়না কিনে আনতে। পুরোনো আয়না দিয়ে দাড়ি কাটতে গিয়ে বারবার গাল কেটে বসে থাকেন। গাল থেকে হাত নামিয়ে দেখতে চাইলেন রক্ত পরা কমল কি না। আয়নায় তাকিয়ে দেখেন একটা ছোট ফুটফুটে মেয়ে লাল ফ্রক পরে বসে আছে। তিনি ঘাড় উল্টো করে দেখলেন কেউ আছে কি না। কিন্তু না নেই। আবার তাকাতেই মেয়েটি তাকে বলল, ‘আপনার গাল কেটে গেছে’। তিনি অবাক হলেন। তিনি তো পাগল হয়ে যাননি। আসলেই কি আয়নাতে মেয়েটা ছিল…?

তিন নম্বর গল্পের নাম ‘কুদ্দুসের এক দিন’। মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুস, তার নামেই নামকরণ এই গল্পের। তিনি পত্রিকা অফিসে কাজ করেন। বয়স বাহান্ন। ৩৬ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন চাকরি করেছেন। সবই ফালতু কাজ। কিছুদিন এক চোরের অ্যাসিসটেন্টও ছিলেন। তবে এত কাজের মধ্য পত্রিকা অফিসে কাজটা বেশ ভালো। ছোট কাজ। চা বানানো, সম্পাদক সাহেবের জন্য চা বানানো, ড্রাইভার তেল নেবে, তার সঙ্গে যাওয়া—এ রকম টালটুফালটু কাজ। সে রাতে পত্রিকা অফিসেই ঘুমায়। সকালবেলা উঠেই সদ্য খবরের কাগজ পড়ে, তাও আবার বিনা পয়সায়। এ কারণে সে নিজেকে খুব হিংসা করে। এক সকালে পত্রিকার কালামে দেখল আজকের দিন কেমন যাবে। কুদ্দুস ধনু রাশি আর তার রাশি মতো সে পড়ে দেখল কেমন যাবে দিন।

মুরারিচাঁদ কলেজ বন্ধুসভার পাঠচক্র।

চার নম্বর গল্পটা হলো ‘ভাইরাস’। গল্পটা নুরুজ্জামান সাহেবের। বর্তমানে তিনি খুব সুখী মানুষ। বিমা কোম্পানিতে চাকরি করতেন। অবসর পেয়েছেন। আশ্বিনের এক দুপুরে লালবাগের কেল্লা দেখে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলেন খাবেন বলে। তখনি এক লোক এসে তার টেবিলে বসলেন। এই লোকটার সঙ্গে কিছু কথা হলো। কথাগুলো অদ্ভুত।

পাঁচ নম্বর গল্পের নাম ‘নিজাম সাহেবের ভূত’। এই গল্পটার কথা নাই বললাম। বই পড়ার সময়ই জানা যাবে নিজাম সাহেবের ভূতের কথা, আর তার অদ্ভুত সব কর্মকাণ্ড। গল্পগুলো পাঠক পড়লেই বুঝতে পারবেন, কতটা অদ্ভুত এর কাহিনিগুলো। সব থেকে মজা লাগছে আয়না গল্পটা। এই গল্পের পিচ্চি মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছে। আবার নিজাম সাহেবের ভূত গল্পটাও বেশ আকর্ষণীয়।

‘অদ্ভুত সব গল্প’ বইটি ১৯৯৬ সালে পার্ল পাবলিকেশন্স কর্তৃক প্রকাশিত হয়। বইটি নিয়ে অনলাইন পাঠচক্রের আয়োজন করেছে মুরারিচাঁদ কলেজ বন্ধুসভা। ৩১ মার্চ রাত ১০টায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। সঞ্চালনা করেন পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক সামিয়া আক্তার।

পাঠচক্রে উপস্থিত ছিলেন মুরারিচাঁদ কলেজ বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি সুমন মিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহেল আহমেদ, বর্তমান সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক লিমা তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক দেবব্রত সরকার, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক সামিয়া আক্তার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ সানজিদা রশিদসহ অন্য বন্ধুরা।