আনন্দঘন পরিবেশে বৈশাখের রং ও উচ্ছ্বাস সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আলপনা উৎসব করেছে জামালপুর বন্ধুসভা। পয়লা বৈশাখ ১৪৩২, সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের মাঠে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
উৎসবটি তিন পর্বে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্বে বন্ধুদের মধ্যে পরিবেশন করা হয় পান্তা-ইলিশ। পান্তার সঙ্গে ছিল ইলিশ মাছ এবং হরেক রকম মুখরোচক ভর্তা—আলু, বেগুন, ধনেপাতা, শুকনা মরিচ, টাকি মাছ ও টমেটোভর্তা।
দ্বিতীয় পর্বে বেলা দুইটা থেকে শুরু হয় আলপনা উৎসব, চলে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। চারপাশে বৈশাখী গান, রঙিন সাজসজ্জা আর মানুষের আনন্দমুখর উপস্থিতি উৎসবকে করে তোলে আরও জমজমাট। এ সময় বন্ধুসভার বন্ধুরা তিন শতাধিক মানুষের হাতে ও গালে নানা নকশায় আলপনা এঁকে দেন। কেউ আঁকিয়ে নেন ফুল, কেউ পাখি, আবার কেউ বেছে নেন ঐতিহ্যবাহী বাঙালি মোটিফ। ছোট-বড় সবার মুখে ছিল তৃপ্তির হাসি আর চোখে খুশির ঝিলিক। এ যেন এক রঙের বন্ধনে বন্ধুত্বের নিখাদ প্রকাশ।
আলপনা দিতে এসে জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৃষ্টি বলে, ‘এখানে ঘুরতে এসে আলপনা নিচ্ছি হাতে, খুব ভালো লাগছে। ওনারা যে এত সুন্দর করে আঁকে, সেটি কল্পনাও করিনি। বৈশাখের আনন্দ যেন আরও রঙিন হয়ে উঠল এই আলপনায়।’
একই রকম অনুভূতি প্রকাশ করেন অনেক দর্শনার্থী। কেউ এসেছেন পরিবারের সঙ্গে, কেউ আবার বন্ধুদের নিয়ে। সবার মুখেই ছিল প্রশংসা আর ভালোবাসা। আয়োজনটি ঘিরে ছিল সেলফি তোলার ধুম, রঙিন আলপনায় নিজেদের রাঙিয়ে সবাই মুহূর্তগুলো ধরে রাখেন ক্যামেরায়।
জামালপুর বন্ধুসভার জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক মাওয়া খান বলেন, ‘প্রতিটি আলপনা আমরা খুব যত্ন নিয়ে আঁকছি। কারও মুখে হাসি ফোটাতে পারাটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।’
চারদিকের আলপনায় রঙের বাহার, বৈশাখী গানের তাল, মানুষের পদচারণ আর প্রাণখোলা হাসি—সব মিলিয়ে আলপনা উৎসব যেন হয়ে উঠেছিল এক চমৎকার বিষয়।
তৃতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। বন্ধুরা সংগীত ও কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করেন। গান করেন বন্ধু সাদাত ও ছোয়াদ। স্থানীয় শিল্পীরাও অংশগ্রহণ করে অনুষ্ঠানের আবহকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলেন। দর্শকেরা মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
প্রথম আলো জামালপুর প্রতিনিধি আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আলপনা উৎসব আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য তুলে ধরছে। এ ধরনের আয়োজন নতুন প্রজন্মকে শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত রাখবে।’
আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি সাখাওয়াত শিমুল, সহসভাপতি ডা. কানিজ ফাতেমা তায়েবা, সহসভাপতি রাহুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রুবেল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলামসহ অন্য বন্ধুরা।
সাধারণ সম্পাদক, জামালপুর বন্ধুসভা