গ্রন্থাগারের প্রায় ২০ হাজার বই ঝেড়েমুছে সাজিয়ে দিলেন বন্ধুরা

কিশোরগঞ্জ জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধুরাছবি: বন্ধুসভা

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে অনন্য এক কাজ করেছেন কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধুরা। ৫ ফেব্রুয়ারি জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের প্রায় ২০ হাজার বই ঝেড়েমুছে ক্যাটালগ অনুযায়ী সেলফে সাজিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।

সরকারি এ গণগ্রন্থাগারে ৫০০ শত বছরের পুরোনো দুর্লভ বইসহ প্রায় ৪০ হাজার বই রয়েছে। অনেক দুর্লভ বইসহ প্রায় ২০ হাজার বইয়ের ধুলাবালুর আস্তরণ পরিষ্কার করেছেন কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধুরা। জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী এ কাজ করেন বন্ধুসভার অন্তত ১৫ বন্ধু। এ ছাড়া বন্ধুরা গ্রন্থাগার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে রাখেন।

এ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি তাফসিলুল আজিজ, বন্ধুসভার উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ আল মোহাইমিন, মো. ওবায়দুল্লাহ, সভাপতি মোস্তাফিজ মারুফ, সাধারণ সম্পাদক নুসরাত জাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাহিদুল ইসলাম, বন্ধু তায়্যিবা আফরোজ, সাজেদুর রহমান, তিহাম বিন আজিজ, তামান্না আক্তার, হৃদয় হাসান, সাগর রয়সহ অন্য বন্ধুরা।

গ্রন্থাগারের প্রায় ২০ হাজার বই ঝেড়েমুছে সাজিয়ে দেন বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারটি দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকলেও ২০০৮ সাল থেকে নতুন করে বড় পরিসরে জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের পাশে আলোর মেলা এলাকায় এটি স্থানান্তর করা হয়। শুরুতে এখানে প্রায় ১০ হাজার বইয়ের সংখ্যা থাকলেও এখন প্রায় ৪০ হাজার বই রয়েছে। বাড়ানো হয় পাঠকদের জন্য আসনসংখ্যাও। পাঠকদের বই, ব্যাগ, খাবার রাখার জন্য তৈরি করা হয় প্রয়োজনীয় আসবাব; রয়েছে শিশুদের বিনোদনের জন্য নানা খেলনা ও শিশু কর্নারের ব্যবস্থা। যে কারণে গ্রন্থাগারটি পায় নতুন রূপ। বর্তমানে গ্রন্থাগারে ২০০ জনের বসার জায়গা আছে। এখন প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই শ পাঠক আসেন। এর মধ্যে নারী পাঠকের সংখ্যাও রয়েছে বেশ। বাংলা, আরবি ও ইংরেজি ভাষার বইসহ অন্যান্য ভাষার কয়েক হাজার বই রয়েছে। এসবের জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কর্নারের ব্যবস্থা। জবস কর্নার, ইতিহাস কর্নার, আন্তর্জাতিক কর্নার, নজরুল কর্নার, রবীন্দ্র কর্নার, বঙ্গবন্ধু কর্নার, মুক্তিযুদ্ধ কর্নারও রয়েছে। এ ছাড়া ধর্মীয়, আন্তর্জাতিক, ব্যক্তি–সম্পর্কিত, আইন–সম্পর্কিত, কিশোরগঞ্জ জেলা–সম্পর্কিতসহ অন্য বইও আছে।

৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। দেশের জনগণের পাঠাভ্যাস সৃষ্টি ও পাঠকদের উদ্দীপ্ত করতে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। এ উপলক্ষে তিন দিন ধরে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার নানা আয়োজন করে আসছে। এসব আয়োজনে কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভার নতুন-পুরোনো বন্ধুরা মিলে গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।

ক্রমেই পুরো গ্রন্থাগারের ৪০ হাজার বই বন্ধুসভার পক্ষ থেকে পরিষ্কার করে দেওয়া হবে
ছবি: বন্ধুসভা

কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি মোস্তাফিজ মারুফ বলেন, এ সরকারি গণগ্রন্থাগারে প্রায় ৪০ হাজার বই থাকায় অনেক বই দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকে। পড়ে থাকার কারণে এতে ধুলাময়লা জমে। তাই দিবসটি উপলক্ষে বন্ধুসভা বরাবরের মতো ভালো কাজের অংশ হিসেবে গ্রন্থাগারের প্রায় ২০ হাজার বইয়ের ধুলাময়লা পরিষ্কার করে আবারও নির্ধারিত তাকে সাজিয়ে রাখে। সাধারণ সম্পাদক নুসরাত জাহান বলেন, ‘এখানে আসা পাঠকেরা যেন স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বই পড়তে পারেন, সে বিষয়টি চিন্তা করেই আমরা গ্রন্থাগারের অর্ধেক বই পরিষ্কার করেছি। ক্রমেই পুরো গ্রন্থাগারের ৪০ হাজার বই বন্ধুসভার পক্ষ থেকে পরিষ্কার করে দেওয়া হবে।’

কিশোরগঞ্জ জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান আজিজুল হক বলেন, ‘“গ্রন্থাগারে বই পড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি” স্লোগানে গতকাল সোমবার জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে তিন দিন ধরে আলোচনা, উপস্থিত বক্তৃতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও উন্মুক্ত বই পাঠের আসরসহ বই পড়ায় মানুষের আগ্রহ বাড়াতে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছিল। এসব কাজে বিগত বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধুরা আমাদের সহযোগিতা করেছেন। আমাদের পাশে থেকে বই পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন ও তাকে সাজিয়ে রাখার কাজসহ অন্যান্য কাজে সহযোগিতা করায় গ্রন্থাগারের পক্ষ থেকে কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ জানাই।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্রথম আলো বন্ধুসভা সারা দেশের মতো কিশোরগঞ্জেও সমাজ বিনির্মাণে ভালো ভালো কাজ করছে। তাদের এ কাজে অনেক তরুণ প্রজন্ম উদ্বুদ্ধ হয়ে সামাজিক কাজে আগ্রহী হচ্ছেন। জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে তাঁরা গ্রন্থাগারের বিপুলসংখ্যক বই পরিষ্কার ও অন্যান্য কাজ যেভাবে করেছেন, এটি নিশ্চয়ই প্রশংসার দাবিদার। আমি ব্যক্তিগতভাবে কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভার মঙ্গল কামনা করছি।’

বন্ধু, কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভা