‘যক্ষ্মাকে আর করি না ভয়, সচেতনতায় মিলবে জয়’, ‘যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণে, সচেতনতা জনে জনে’, ‘যক্ষ্মা হলে মুক্ত, দেশ হবে উন্নত’—এমন সব স্লোগানে ‘যক্ষ্মা সচেতনতাবিষয়ক প্রচারণা’ নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা করেছে দিনাজপুর বন্ধুসভা। ২ আগস্ট প্রথম আলোর দিনাজপুর অফিসে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা সচেতনতা বাড়াতে ইউএসএআইডির পৃষ্ঠপোষকতায় আইসিডিডিআরবির পরিচালনায় প্রথম আলো এ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আর বাস্তবায়ন করছে বন্ধুসভা। মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বন্ধুসভার বন্ধুদের মধ্যে রোগটি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্যই আয়োজন করা হয় এ কর্মশালার।
বন্ধুসভার ২৫ বন্ধুর উপস্থিতিতে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা সার্ভিল্যান্স চিকিৎসা কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ এর উদ্বোধনী ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘যক্ষ্মা একটি পুরোনো জীবাণুঘটিত সংক্রামক ব্যাধি। এটি মানব শরীরের নখ ও চুল বাদে যেকোনো স্থানে হতে পারে। যক্ষ্মা নিয়ে মানুষের ধারণা এখনো খুব নগণ্য। যক্ষ্মার সচেতনতায় কর্মশালার কোনো বিকল্প নেই।’
এরপর কর্মশালা বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান ও পাঁচজন করে পাঁচটি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে কর্মশালায় বাংলাদেশে যক্ষ্মা রোগের বর্তমান অবস্থা ও যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বিষয়ে আলোচনা করেন আইসিডিডিআরবির প্রশিক্ষক শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। সরকার বিনা মূল্যে যক্ষ্মার রোগনির্ণয় ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করলেও আক্রান্তের হার হ্রাস করা যাচ্ছে না।’রোগটির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি এ রোগ হলে কীভাবে নির্মূল করা যায় এবং এ নিয়ে আমাদের করণীয় কী কী, এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি। আলোচনা শেষে ঢাকার কর্মশালা ও আইসিডিডিআরবির ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী ২৫ জনের ৫টি টিমকে কাজ দেওয়া হয় দেয়ালিকা ও স্লোগান তৈরির। ‘এত অল্প সময়ে চমৎকার সব দেয়ালিকা ও স্লোগান প্রস্তুত করা আসলেই অকল্পনীয় বিষয়’ বলে জানান আইসিডিডিআরবির প্রশিক্ষক শফিকুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, ‘বন্ধুসভার বন্ধুরা খুব দ্রুত শিখতে পারে। আমরা আশা রাখছি, তাঁরা সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষের কাছে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেবে।’
প্রশিক্ষণার্থীদের অভিজ্ঞতা বিনিময় পর্বে যক্ষ্মাবিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্ন করছিলেন সঞ্চালক বেলালুর রহমান। এ সময় বন্ধু বিপ্লব রায় বলেন, ‘যক্ষ্মা সম্পর্কে প্রচলিত তথ্যের বাইরে অনেক কিছুই শিখতে পারলাম। আশা করি, আমরা সবাই এই সচেতনতা অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারব।’ আরেক বন্ধু সাদমান হক বলেন, ‘বর্তমানে শিশুদের জন্য আমরা কার্টুন তৈরিসহ ডিজিটাল মাধ্যমে সবার জন্য সচেতনতা তৈরিতে এগিয়ে আসতে পারি।’ সাধারণ সম্পাদক শুভ রায় বলেন, ‘কর্মশালায় অংশ নিয়ে যক্ষ্মার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আজ যা জেনেছি, অবশ্যই অন্যকে সেসব বিষয়ে জানানোর চেষ্টা করব। কারণ, যক্ষ্মা সম্পর্কে এখনো মানুষের মধ্যে নানা কুসংস্কার প্রচলিত আছে। বন্ধুদের নিয়ে কমিউনিটিকেন্দ্রিক যক্ষ্মা সচেতনতা বাড়াতে ও কুসংস্কার দূর করতে কাজ করব।’
প্রথম আলো প্রতিনিধি রাজিউল ইসলাম বলেন, ‘শুধু কর্মশালার মধ্যেই আমরা আমাদের প্রচারণার সীমাবদ্ধতা রাখব না। ধর্মীয় বিভিন্ন মিলনায়তনে, যেখানে বহু লোকের সমাগম ঘটে, সেখানেও আমাদের প্রচারণা চালাতে হবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে ৯৫ শতাংশ মৃত্যুহার কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা সরকার নিয়েছে, তা পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিডিডিআরবির প্রকল্প-গবেষক আশিক ইকবাল।
তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক, দিনাজপুর বন্ধুসভা