‘আমরা প্রতিনিয়ত বই পড়ার চেষ্টা করব’

দিনাজপুর বন্ধুসভার পাঠের আসরছবি: বন্ধুসভা

পাঠক মনকে উৎফুল্ল রাখতে বই পড়ার বিকল্প নেই। বেশি বেশি বই পড়ে বন্ধুদের মনকে আরও সুন্দর ও প্রফুল্ল রাখার প্রত্যয়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে প্রথম আলোর দিনাজপুর অফিসে পাঠচক্রের আয়োজন করে দিনাজপুর বন্ধুসভা।

পাঠচক্রের জন্য নির্ধারিত বই ছিল সুনির্মল বসুর লেখা ‘মাইকেল মধুসূদন’। শিশুসাহিত্যিক সুনির্মল বসু ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। বইটি পড়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের মহাকবি মাইকেল মধুসূদনের জীবনী সম্পর্কে জানতে পারি। মধুসূদন দত্তের শৈশব ও কৈশোরের সোনালি সময়ের মুহূর্ত তুলে ধরেছেন লেখক।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও নাট্যকার। বাংলার নবজাগরণের সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী সাগরদাঁড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। সবার আদরের ছোট মধুসূদন ছিলেন একগুঁয়ে ও ভীষণ জেদি। যা চাইত, তা–ই তাকে দিতে হতো। নইলে আর রক্ষা নেই। মায়ের হাত ধরে লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। প্রথমে গ্রামের পাঠশালায় পড়াশোনা শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে পড়াশোনার জন্য কলকাতায় চলে যান। ১৮৩৩ সালে কলকাতার হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে বাংলা, সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা শেখেন তিনি।

তাঁর ব্যক্তিগত চরিত্র গঠনে হিন্দু কলেজের প্রভাব ছিল অত্যন্ত গভীর। হিন্দু কলেজে অধ্যয়নের সময়ই মধুসূদন দত্ত কাব্য চর্চা শুরু করেন। একদিকে তিনি যেমন লাভ করেছিলেন মানব মন্ত্রে বিশ্বাস ও গভীর ইংরেজি সাহিত্যপ্রীতি, তেমনি তাঁর মনে সঞ্চারিত হয়েছিল দেশীয় আচার ও ভাবনার প্রতি অশ্রদ্ধা। প্রচণ্ড মেধাবী হওয়ায় গণিত ছাড়া প্রায় সব বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন, বিশেষ করে ইংরেজি সাহিত্যে প্রচুর দক্ষতা ছিল তাঁর। চেয়েছিলেন ইংরেজি সাহিত্যে অবদান রাখতে। পাশ্চাত্যের প্রতি আসক্ত থাকায় হিন্দুধর্মের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম হলেও মধুসূদন দত্ত যৌবনে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু সমাজ তাঁকে মেনে নিতে পারেনি। পাশ্চাত্য সাহিত্যে দুর্নিবার আকর্ষণের জন্য ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। জীবনের করুণ সময়ে মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। জীবনের দ্বিতীয় পর্বে মধুসূদন মাতৃভাষায় আকৃষ্ট হয়ে নাটক, প্রহসন ও কাব্য রচনা করতে শুরু করেন। তিনি বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। বাংলা ভাষার নাটককে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।

পাঠচক্রের সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চন্দ্র অধিকারী। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের বই পড়ে আমরা আমাদের জ্ঞানের ভান্ডারকে অনেক সমৃদ্ধ করতে পারি। জীবনীমূলক বইগুলো জীবনের চলার পথে অনেক শিক্ষা দেয়। আমরা প্রতিনিয়ত বই পড়ার চেষ্টা করব।’ এ ছাড়া পাঠচক্রে উপস্থিত ছিলেন পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক শেফা, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক দীপু রায়, বইমেলা সম্পাদক ইমন, বন্ধু জুঁই আফরোজ, দেবরাজ রায়, সাব্বির, কবির, রবিউল, অভ্র প্রমুখ।

মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক, দিনাজপুর বন্ধুসভা