পুরুষের ছেলেমানুষির সঙ্গে নারীর রহস্যময়তা ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’

সিলেট বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসরছবি: বন্ধুসভা

‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ জহির রায়হানের প্রথম উপন্যাস এবং এটি প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে। তখন বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যে এ রকম প্রেমধারার উপন্যাস তেমন পাওয়া যেত না। তৎকালীন উপন্যাসটি বাংলা প্রেমধারার এটি সাবলীল উপাখ্যান। একই সঙ্গে একজন মানুষের জীবনে অলীক বিচ্ছেদ আর তারপরই এক অমর প্রেমের মিলনের দ্বার উন্মোচন করে।

কেন্দ্রীয় চরিত্র একজন মধ্যবয়স্ক যুবক কাসেদ। যে পেশায় কেরানি। পরিবারে তার মা ছাড়া আরও একজন সদস্য আছে, নাম নাহার। মা–হারা নাহারকে কাসেদের মা নিজের সন্তানের মতো মানুষ করেছেন। নাহারকে সুখী দেখতে চান, তাই তিনি নাহারের জন্য সুপাত্রের সন্ধান করছেন।

কাসেদের কাজে ব্যস্ততা থাকলেও অবসর সময়ে সে কবিতা লেখে। জাহানারা নামের একটি মেয়েকে ভালোবাসে। জাহানারাকে বিয়ে করে সুখে সংসার করার স্বপ্নে সে মগ্ন। তবে জাহানারা তাকে ভালোবাসে কিনা, এ নিয়ে সংশয় কাজ করত কাসেদের। একদিন জাহানারার বাড়িতে তার বান্ধবী মিলি ও কাজিন শিউলির সঙ্গে পরিচয় ঘটে। শিউলি তার সঙ্গে একটু বেশি পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কাসেদের মনে তখনো জাহানারাই। পরে গল্পে আরেকটি চরিত্র দেখা যায়, সালমা। সে কাসেদের ছোটবেলার বন্ধু ও খালাতো বোন। ছোটবেলা থেকেই সে কাসেদকে চায়, তবে অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে বাসনা তার চাপা পড়ে যায়নি, বরং এখনো রয়ে গেছে।

কাসেদের অপেক্ষায় না থেকে জাহানারা যখন সে তার শিক্ষকের সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্কে, এটা জানার পর কাসেদ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে অনেক। পরে সে শিউলির মাঝে জাহানারাকে আবিষ্কার করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়। কাসেদের মায়ের মৃত্যুর আগে নাহারের বিয়ে ঠিক করেছিলেন তিনি। তবে কাসেদ তার মা চলে যাওয়ার পর খুব একা হয়ে পড়ে।

তখনই শেষ বিকেলে তার সামনে লাল শাড়ি, গায়ে হলুদে মাখা একটি মেয়ে এসে দাঁড়ায়। কে হতে পারে সে! জাহানারা? সালমা? শিউলি? না তারা কেউ আসেনি। দুয়ারে যে মেয়েটি এসে দাঁড়িয়েছিল, সে আর কেউ নয়, নাহার। তবে কি কাসেদ ফিরিয়ে দিয়েছিল নাহারকে? নাকি ফেরাতে পারেনি শেষ বিকেলের মেয়েটিকে। লেখক গল্পটির সমাপ্তি এখানেই করেন।

চারপাশে যে অনুভূতি বা ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে, তা স্বভাবতই আমাদের নজরে পড়ে না, আর যা পাব না, তার দিকেই হাত বাড়াতে চাই। এখানে লেখক পুরুষের ছেলেমানুষির সঙ্গে নারীর রহস্যময়তাও ফুটিয়ে তুলেছেন। দিন শেষে শেষ বিকেলের আলো-আঁধারে তাকে পথ দেখানোর দায় শেষমেশ কোনো নারীকেই নিতে হয়।

সিলেট বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসর

১১ এপ্রিল জহির রায়হান রচিত ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ উপন্যাসটি নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে সিলেট বন্ধুসভা। প্রথম আলো সিলেট অফিসের বন্ধুসভাকক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

বই পর্যালেচনায় বন্ধু ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘একজন সাধারণ কেরানি। সাধারণ মানুষ। একটা সাধারণ গল্প। তারপরও অসাধারণ। অসাধারণ লেখা। সুখপাঠ্য ছোট একটা বই।’

বন্ধু শ্রেয়ান ঘোষ বলেন, ‘সারা জীবন অনেক মেয়ে আসবে–যাবে, তবে শেষ অব্দি যে থাকবে, তাকেই শেষ বিকেলের মেয়ে বলে আখ্যায়িত করেছেন লেখক। বইটির নামকরণের সার্থকতা হয়তো এখানেই।’

এ ছাড়া বইটি পাঠ করেন বন্ধু পিয়াস সরকার ও মিনথিয়া রহমান। পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু দেব রায় সৌমেন, ফয়সাল আহমেদ, সমীর বৈষ্ণব, সুবর্ণা দেব, অনুপমা দাস, জুনায়েদ আহমেদ, কিশোর দাশ, গায়ত্রী বর্মণ, দৃষ্টি বর্মণসহ অন্য বন্ধুরা।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা