বাঙালির প্রাণের কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মদিন উপলক্ষে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করেছে সিলেট বন্ধুসভা। ৯ মে প্রথম আলো সিলেট অফিসের বন্ধুসভা কক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়। ‘তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে’ শিরোনামে অনুষ্ঠানটি বেলা তিনটায় শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। অংশগ্রহণ করেন সিলেট বন্ধুসভার বন্ধুরা।
সঞ্চালনার শুরুতে বন্ধু কিশোর দাস বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির কাছে এক মহীরূহের মতো। যাঁর দর্শনের ছায়া মেলে ধরেছে তাঁর উপন্যাস, গান–কবিতাগুলো। সেই সাহিত্যই জীবনের বিভিন্ন পদক্ষেপে উজ্জীবিত করে চলেছে একটা জাতিকে। সুখ হোক বা দুঃখ, অবসাদ বা সামাজিক অবক্ষয়, প্রেম বা বিরহ—সব ক্ষেত্রে জীবনীশক্তিতে উদ্বুদ্ধ করে তাঁর লেখা। শুধু একটি বিশেষ দিন নয়, বাঙালি রবীন্দ্রনাথকে রোজ উদযাপন করে।
দলীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। ধারাবাহিকভাবে একক গান পরিবেশন করেন বন্ধু প্রীতম তালুকদার, প্রত্যাশা তালুকদার, সূবর্ণা দেব, নাহিয়ান রহমান, প্রণব চৌধুরী, যুবরাজ রায়, অমলান রায়, অনুপমা দাস, গায়ত্রী বর্মন, দৃষ্টি বর্মন, শতাব্দী দত্ত ও চৈতী সূত্রধর। দ্বৈত কবিতা আবৃত্তি করেন বন্ধু দেব রায় সৌমেন ও সূবর্ণা দেব। একক কবিতা আবৃত্তি করেন বন্ধু ফারিয়া হক ও নাহিয়ান রহমান।
সাংস্কৃতিক পর্ব শেষে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বন্ধুরা তাঁদের ভালো লাগার কথা বলেন। সভাপতি দেব রায় সৌমেন বলেন, ‘রবীন্দ্র-দর্শন যে জীবনবোধের কতবড় খনি, তা যিনি রবীন্দ্রনাথকে আত্মস্থ করতে পেরেছেন, তিনিই বুঝেছেন। বাঙালি ঘরে শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়, সেভাবেই তাঁকে চেনানো হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। তাই নতুন করে কেবল ২৫ বৈশাখ উপলক্ষে বাঙালির সঙ্গে রবীন্দ্র চেতনার পরিচিতি ঘটানোর কিছু থাকে না।’
বন্ধু ফয়সাল আহমেদ বলেন, রবীন্দ্রনাথ তাঁর সাহিত্যে বারবার তুলে ধরেছেন ন্যায় আর অন্যায়কে ঘিরে নানা মূল্যবোধ। এ নিয়ে তাঁর বিখ্যাত একটি লাইন আছে, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে।’
বন্ধু সমরজিৎ হালদার বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে কবিগুরু, বিশ্বকবিসহ আরও অনেক অভিধায় ভূষিত করা হয়।
বন্ধু মিনথিয়া রহমান বলেন, রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক ও রাজনৈতিক কর্মী। তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং স্বদেশী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি নারী শিক্ষার পক্ষে ও নারীর অধিকারের জন্য সোচ্চার ছিলেন। তিনি ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এ ছাড়া বন্ধু শাহরিয়ার আবির, কৃত্য ছত্রী, সুমন দাস, মাহবুব ফেরদৌস ও আদনান আহমদ কবিগুরুকে নিয়ে তাঁদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। আলোচনা পর্ব শেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস ‘শেষের কবিতা’ নিয়ে পাঠচক্র অনুষ্ঠিত হয়।
সবশেষে সব বন্ধুরা মিলে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ গান পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানের শেষে ভালো পারফরম্যান্সের জন্য বন্ধু কিশোর দাস, সূবর্ণা দেব ও যুবরাজ রায়ের হাতে বই তুলে দেন সভাপতি দেব রায় সৌমেন। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল বন্ধু প্রণব চৌধুরীর আঁকা কবিগুরুর চিত্রকর্ম।