২২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হলো শিখো-প্রথম আলো জিপিএ-৫ কৃতী সংবর্ধনা উৎসব ২০২৩-এর নোয়াখালী পর্ব। উৎসব আয়োজন ঘিরে বন্ধুদের উৎসাহ ও প্রস্তুতির কমতি ছিল না। বাদ সাধল বৃষ্টি। আকাশ যেন তার সব অভিমান ঝরিয়েই ক্ষান্ত হবে! উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত হলেও মুহূর্তে আমাদের আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে সকাল সাড়ে আটটার পর থেকেই অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে নোয়াখালী জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। স্বপ্নদীপ্ত ও তারুণ্যে উজ্জীবিত প্রাণগুলোকে থামিয়ে রাখতে পারেনি বৃষ্টি।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে নোয়াখালী বন্ধুসভার সভাপতি মাসুম বিল্লাহ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দারুণ কিছু ধাঁধা জিজ্ঞেস করেন ও তাদের সামনে কী হওয়ার ইচ্ছা, তা জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেন। কেউ বিজ্ঞানী হবে তো কেউ প্রোগ্রামার। আবার কেউবা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সমাজকর্মী এবং গবেষক হওয়ার ইচ্ছাও পোষণ করে। শিক্ষার্থী রাফিন বলে, ‘আমি নায়ক হব।’ প্রশ্নোত্তর পর্বটি পুরো আয়োজনজুড়ে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখে। সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহবুবুর রহমান। আরও বক্তব্য দেন নোয়াখালী বন্ধুসভার উপদেষ্টা মাহফুজের রহমান, উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম মাসুদ, নোয়াখালী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ কাজী রফিক উল্লাহ, প্রথম আলো চট্টগ্রাম অফিসের বার্তা সম্পাদক ওমর কায়সার, ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু জাফর মোহাম্মদ হারুন ও স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রতিনিধি ইমাম হোসেন তুষার।
উপদেষ্টা মাহফুজের রহমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘যুগ পাল্টাচ্ছে, সেই সঙ্গে পাল্টাচ্ছে শিক্ষার ধরন; যা তোমাদের জন্য আরও সহজলভ্য হয়ে উঠছে। হাতের কাছেই সব পাওয়া যায়। যেকোনো কিছু চাইলেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিখে ফেলা যাচ্ছে। এই সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে সামনে বড় কিছু অর্জনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে তোমাদের।’
অধ্যক্ষ মুহাম্মদ কাজী রফিক উল্লাহ শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি ভালো মানুষ হয়ে ওঠার আহ্বান জানান। উপদেষ্টা মাসুদ কাইয়ূম উপস্থিত জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘জিপিএ-৫ পেলেও আমরা অনেক সময় পিছিয়ে পড়ি। এর কারণ হলো উপযুক্ত শিক্ষার অভাব, জীবনের পরবর্তী ধাপে মানিয়ে নিতে না পারা এবং সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে ব্যর্থ হওয়া ইত্যাদি আমাদের লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তোমাদের চেষ্টা করতে হবে যেন লক্ষ্যে অবিচল থাকতে পারো।’
এ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান করা হলে আমরা অসাধারণ কিছু গল্প শুনি, যা মিলনায়তনে উপস্থিত সবার মধ্যে অনুপ্রেরণা জাগায়। তেমনি একজন শিক্ষার্থী বিপ্লব আহমেদ। জীবনের নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে সে। বাবার সঙ্গে রিকশা চালানো, কখনো ধান কিংবা মাটি কেটে সংসারের হালও ধরতে হয়েছে। আরেক শিক্ষার্থী আয়েশা পায়নি পরিবারের কারও সহযোগিতা। নিজের অদম্য ইচ্ছা আর মনোবলের মাধ্যমে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।
প্রথম আলোর চট্টগ্রাম অফিসের বার্তা সম্পাদক ওমর কায়সার বলেন, ‘আজকের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে একঝাঁক মেধাবীদের দেখা পেয়েছি। বিপ্লব আহমেদের মতো অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী বন্ধুর জীবনের গল্প শুনতে পেয়েছি। আমরা সবাই অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আশা করছি তোমাদের চেষ্টার মাধ্যমে তোমরাও বিপ্লব বয়ে আনবে। জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ পার হয়েছ মাত্র, সামনে আরও বড় বড় ধাপ এবং অর্জনের মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’
সাংস্কৃতিক পর্বের সঞ্চালনা করেন নোয়াখালী বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক আসিফ আহমেদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জ্যানিসা আফরোজ। শুরুতেই মজার ছলে কিছু সংলাপের মাধ্যমে শিখোর কোর্স এবং প্রথম আলোর ই-পেপার সাবস্ক্রিপশনের সুবিধা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধারণা দেওয়া হয়। এরপর বন্ধুসভার বন্ধু তানিশা, স্বর্ণা, সৌরভ ও ইতুর কবিতা আবৃত্তি, গান, নাচ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় দারুণ এই আয়োজন।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, নোয়াখালী বন্ধুসভা