সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে ইফতার

ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের মাঠে সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে ইফতার বিতরণছবি: এস কে কাব্য

তুলনা খাতুন, বয়স ৬। পরনে পুরোনো জামা। থাকে পুরান ঢাকার চানখাঁরপুলের একটি বস্তিতে, বাবা রিকশাচালক। ১৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল মাঠে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার ইফতার অনুষ্ঠানে এসে সে জানায়, তার দুটি ইফতারি লাগবে। দুটি কেন? সে বলে, বাবা অসুস্থ। কাজে যেতে পারছেন না দুই দিন। অতিরিক্ত একটি ইফতারি নিলে তিনিও খেতে পারবেন।

৯ বছর বয়সী মো. শান্ত। আগে ক্যানটিনে কাজ করত। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পানি বিক্রি করে, থাকে নিমতলীতে। বাবা ভ্যানগাড়ি চালান। সে জানায়, সারা বছর ঠিকমতো খেতে পায় না। রোজা এলে অনেকেই ইফতারি দেন, সে ভালো খাবার খেতে পারে। ইফতারি দেওয়ায় বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ জানায় শান্ত।

ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

গতকাল সোমবার তুলনা খাতুন ও শান্তর মতো এমন অসংখ্য সুবিধাবঞ্চিত শিশু, দরিদ্র মানুষ ও রিকশাচালকদের নিয়ে ইফতার করেছেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার বন্ধুরা। কিছু ইফতারি বিতরণও করা হয়। জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এদিন পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষকে ইফতার করানো হয়।

উপস্থিত ছিলেন বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের উপদেষ্টা মুমিত আল রশীদ। আয়োজনের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘এটি খুব ভালো একটি উদ্যোগ। বন্ধুসভার বন্ধুরা বরাবরই ভালো কাজ করে, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়। আমাদের এ সব কাজ সারা দেশে আরও বেশি করে যেতে হবে। জাতীয় শিশু দিবসে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে ইফতার করার যে উদ্যোগ, তার জন্য আমি ঢাকা মহানগর বন্ধুসভাকে সাধুবাদ জানাই।’

ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের মাঠে সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে ইফতার বিতরণ
ছবি: এস কে কাব্য

এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে যাঁরা কাজ করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক বলেন, ‘বন্ধুসভার বন্ধুরা নিজেদের যেমন নেতৃত্বের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলছেন, পাশাপাশি তাঁরা সুনাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কাজ করছেন। ঢাকা মহানগরের আজকের (গতকাল) এই আয়োজন বন্ধুদের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই। এটি অনন্য, অসাধারণ এবং অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।’

ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সভাপতি সাইদুল হাসান বলেন, ‘ইফতারি পাওয়ার পর শিশুদের মধ্যে যে হাসি দেখতে পেয়েছি, তা লক্ষ টাকা দিয়েও কেনা সম্ভব নয়। তাদের মুখে হাসি এনে দিতে পারা আমাদের জন্য বড় একটি প্রাপ্তি। ধন্যবাদ দিতে হয় বন্ধুদের। তাঁদের আর্থিক সহায়তার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।’

ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সহসভাপতি মাহমুদা মুহসিনা বুশরা বলেন, ‘শিশুদের সঙ্গে এমন আয়োজনে সম্পৃক্ত হতে পারাটা সৌভাগ্যের। কেবল একসঙ্গে বসে ইফতার করাই নয়, শিশুদের সঙ্গে কথা বলা, তাদের খোঁজখবর নেওয়া—অন্য রকম ভালো লাগার কাজ। এ সব শিশুর সঙ্গে বসে কিন্তু তেমন কেউ সমভাবে ইফতার করে না। আমরা বন্ধুসভার বন্ধুরা করছি। কারণ, আমরা সমতায় বিশ্বাস করি। সবাইকে নিয়ে চলতে পারলেই দেশ এগিয়ে যাবে।’

কর্মসূচিটি বাস্তবায়নে কাজ করেছেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সহসভাপতি সাফিন উজ জামান, সাধারণ সম্পাদক নাঈমা সুলতানা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী ইমরান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার নাজিম সীমান্ত, অর্থ সম্পাদক অনিক সরকার, দপ্তর সম্পাদক মেঘা খেতান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শেখ কাব্য, জেন্ডার-সমতাবিষয়ক সম্পাদক শারমিন আরা তিশা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক জয়শ্রী জয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য আতিকুল ইসলাম, বন্ধু খাদিজা জান্নাত, আরিয়া আনজুমান, রাজা মান্নান তালুকদার, মীর মোশাররফ অমিসহ অন্য বন্ধুরা। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সভাপতি মোশাররফ খান, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত ও গ্রিন ইউনিভার্সিটি বন্ধুসভার সভাপতি অমিত পাল।

সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা