ছয় পর্বে নোয়াখালী বন্ধুসভার ঈদের আনন্দ বিতরণ

নোয়াখালী বন্ধুসভার পক্ষ থেকে উপহার পেয়ে তাদের মুখে ঈদের আগেই ঈদ আনন্দছবি: বন্ধুসভা

বন্ধুসভা বছরব্যাপী ভালো কাজের সঙ্গে থাকে। তার মধ্যে রোজার ঈদের আগে একটি ভালো উদ্যোগ ‘সহমর্মিতার ঈদ’ কর্মসূচি। জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ ঘোষিত এ কর্মসূচি গত কয়েক বছর ধরে দারুণভাবে পালন করে আসছে নোয়াখালী বন্ধুসভা। এবার ৬টি পর্বে নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন জায়গায় মানুষের মুখে একটুখানি হাসি দেখতে ও ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে সহমর্মিতার ঈদ উদ্‌যাপন করেছে নোয়াখালী বন্ধুসভা। অর্থের জোগান দেন বন্ধুসভার বন্ধু, উপদেষ্টা ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

৩০ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৬টি পর্বে মোট ১৬৫ জন মানুষকে ঈদের নতুন জামা ও ১০০টির বেশি পরিবারে খাদ্যসামগ্রী উপহার দেয় নোয়াখালী বন্ধুসভা। সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক আরাফাত শিহাব। তিনি বলেন, ‘আমরা এ বছর রমজানের কিছুদিন আগ থেকেই সহমর্মিতার ঈদের প্রস্তুতি গ্রহণ করি। বন্ধু, উপদেষ্টা ও শুভানুধ্যায়ীদের অনেক ভালো সহযোগিতা পাওয়াতে বড় পরিসরে এবারের আয়োজনটি করতে পেরেছি।’

মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় পাঞ্জাবি
ছবি: বন্ধুসভা

সভাপতি আসিফ আহমেদ বলেন, ‘আমরা কিছু মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে চেয়েছি। তা কিছুটা হলেও পেরেছি। এর পেছনে বন্ধুরা অনেক দৌড়ঝাঁপ করেছেন। বিভিন্ন জায়গা নির্বাচন করা, তথ্য সংগ্রহ করা, ফান্ড সংগ্রহ, কেনাকাটা এবং উপহারগুলো পৌঁছে দিয়ে আসা—সবই সম্ভব হয়েছে বন্ধুদের জন্য।’

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নোয়াখালী বন্ধুসভা দারুণ কাজ করেছে। এ মহৎ আয়োজনটি সফল করার পেছনে যাদের ভূমিকা ছিল তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। বন্ধুসভার বন্ধুদের জন্য কিছু মানুষের ঈদ আনন্দে কাটবে। বন্ধুদেরও ঈদ আনন্দে কাটুক। এ কামনা করি।’

প্রথম পর্ব
প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ৩০ মার্চ সকাল ১০টায় নোয়াখালীর পূর্ব মহোদুরী ও নোয়াখালী খাল পাড়সংলগ্ন এলাকায়। এদিন শিশুদের মধ্যে ঈদ উপহার বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে কেউ পরিবারের অভাব–অনটনে পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছে, কেউবা টানাপোড়েনের মধ্যেও পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েকজন ছিল প্রতিবন্ধী শিশু। ঈদের নতুন জামা হাতে পেয়ে তাদের চোখেমুখে আনন্দ প্রকাশ পায়। এই পর্বে ৩৩ জন শিশুকে উপহার দেওয়া হয় নতুন জামা। এ ছাড়া খাল পাড়সংলগ্ন এলাকায় কিছু পরিবারকে দেওয়া হয় খাদ্যসামগ্রী।

উপহার পেয়ে তাদের মুখে ঈদের আগেই ঈদ আনন্দ
ছবি: বন্ধুসভা

সাধারণ সম্পাদক উম্মে ফারহিন বলেন, ‘এ বছর সব মিলিয়ে ৬টি পর্বে নোয়াখালীর বিভিন্ন জায়গায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে বন্ধুরা দারুণ আনন্দিত।’

দ্বিতীয় পর্ব
২ এপ্রিল সহমর্মিতার ঈদের দ্বিতীয় পর্বে নোয়াখালী বন্ধুসভা ঈদ উপহার নিয়ে যায় সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের দুটি এতিমখানা মাদ্রাসায়। এ পর্বে ২৭ জন এতিম শিশুর হাতে ঈদের জামা তুলে দেওয়া হয়। নতুন পাঞ্জাবি হাতে পেয়ে শিশুরা আনন্দে মেতে ওঠে। একে অপরকে নিজ নিজ পাঞ্জাবি দেখাতে থাকে। ঈদের আগেই তাদের চোখে ঈদের আনন্দ ফুটে ওঠে। এ ছাড়া এওজবালিয়া ইউনিয়নের ২০টি পরিবারের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন বন্ধুরা।

তৃতীয় পর্ব
৩ এপ্রিল বেলা ১১টায় সহমর্মিতার ঈদের তৃতীয় পর্বে নোয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুরা জেলার সদর উপজেলার মমিন নগর বাজারসংলগ্ন এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের কাছে ঈদ উপহার পৌঁছে দেন। মমিন নগর বাজারসংলগ্ন এলাকায় কয়েকটি বাড়ির শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হয় রঙিন জামা। ঈদের দিন পরিবারের সবার সঙ্গে সেমাই খাওয়ার জন্য তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সেমাই, চিনি ও দুধ। নতুন জামা ও সেমাই চিনির ঘ্রাণে কিছুক্ষণের জন্য ঈদের আমেজ নেমে আসে ভাঙাচোরা-জোড়াতালি দেওয়া এসব বাড়ির উঠানে।

খাদ্যসামগ্রী উপহার
ছবি: বন্ধুসভা

শিশুরা ঈদের নতুন জামা পেয়ে সেটা অন্যদের থেকে লুকাতে ব্যস্ত, আবার কেউবা নিজের জামাটা একে অন্যকে দেখিয়ে বলছে, দেখ আমার জামা কত সুন্দর অইসে।’ এই পর্বে মোট ২৯টি শিশুকে রঙিন জামা ও ৩০টির বেশি পরিবারে খাদ্যসামগ্রী উপহার দেন বন্ধুরা।

চতুর্থ পর্ব
নোয়াখালী বন্ধুসভার সহমর্মিতার ঈদ চতুর্থ পর্ব ৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। জেলা শহরের দত্তের হাটের মধ‍্যম করিমপুর এলাকায় এদিনের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া স্থানীয় একটি মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীদের হাতে ঈদ উপহার হিসেবে জুব্বা বানানোর কাপড় তুলে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে দেওয়া হয় জুব্বা সেলাইয়ের জন্য অর্থ। এখানের এতিম শিক্ষার্থীরা কখনো পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপনের সুযোগ পায় না। তাদের ঈদ কাটে মাদ্রাসায়। অনেকেই কুরআনে হাফেজ। নোয়াখালী বন্ধুসভার দেওয়া উপহার পেয়ে সবাই খুশি। এই পর্বে মোট ৩৪ জনকে ঈদ উপহার হিসেবে নতুন জামা দিয়েছেন বন্ধুরা।

পঞ্চম পর্ব
৫ এপ্রিল নোয়াখালী বন্ধুসভার সহমর্মিতার ঈদের পঞ্চম পর্বটি অনুষ্ঠিত হয় ভিন্ন আঙ্গিকে। এদিন দুটো টিমে ভাগ হয়ে নোয়াখালী জেলা শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়ান বন্ধুরা। শহরের আনাচকানাচে ঘুরে ঘুরে ছিন্নমূল মানুষদের খোঁজখবর নেন। সঙ্গে করে তাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ঈদের নতুন জামা। এ পর্বে ৩২ জন মানুষকে ঈদ উপহার দেওয়া হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিতভাবে এমন উপহার পেয়ে মলিন মুখগুলোতে হাসির সঞ্চার ঘটে।

নোয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

ষষ্ঠ পর্ব
নোয়াখালী বন্ধুসভার সহমর্মিতার ঈদের ষষ্ঠ ও শেষ পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ৭ এপ্রিল নোয়াখালীর আবদুল্লাহ মিয়ার হাট সংলগ্ন এলাকায়। এদিন ১০ জন মানুষকে ঈদের জামা উপহার দেওয়া হয়। এ ছাড়া পরিবারের সঙ্গে ঈদের দিন মিষ্টিমুখ করার জন্য দেওয়া হয় সেমাই, চিনিসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী।

পুরো এই আয়োজনটি সফল করতে যে বন্ধুরা সব সময় ছিলেন, তাঁরা হলেন উপদেষ্টা মাহফুজের রহমান, লায়লা পারভীন, কামাল হোসেন, সুমন নূর, সভাপতি আসিফ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক উম্মে ফারহিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া সামান্তা, মো. শিমুল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহিম, দপ্তর সম্পাদক ধ্রুব ভূঁঞা, প্রচার সম্পাদক সানি তামজিদ, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক আরাফাত শিহাব, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক আফরিনা আনিকা, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক নুসরাত জাহান, কার্যনির্বাহী সদস্য নয়ন চন্দ্র কুরী, বন্ধু ইমতিয়াজ হোসেন, শাহাদাত হোসেন, নুসরাত ফারিয়া, সাগর চন্দ্র আইচ, আল জাবের, শওকত আলভীসহ অন্য বন্ধুরা।

সভাপতি, নোয়াখালী বন্ধুসভা