শ্রাবণ মাসের এক হাস্যোজ্জ্বল বিকেল। বাতাসে ভেসে আসছে স্নিগ্ধ বৃষ্টির গন্ধ, প্রকৃতি যেন নিজেই মগ্ন কোনো প্রার্থনায়। ২৬ জুলাই এমনই পরিবেশে গাজীপুরের প্রজন্ম পাঠাগারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সৃষ্টি ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাস নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে গাজীপুর বন্ধুসভা।
শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশনা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ট্র্যাজেডিতে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শুভেচ্ছা বক্তব্যে সভাপতি বাবুল ইসলাম বলেন, ‘একটা ভালো বই, একটা ভালো পরিবেশ আর কিছু পাঠক মিলে তৈরি হয় আত্মার সংযোগ। আজকের এই আয়োজন ঠিক তেমনই। প্রজন্ম পাঠাগার একটি ভালোবাসার নাম।’
বন্ধুদের আলোচনায় উঠে আসে, ‘ঘরে বাইরে’ দেশ, প্রেম ও আত্মোপলব্ধির এক সাহসী উপাখ্যান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই উপন্যাসটি কেবল সাহিত্য নয়, বরং ইতিহাস, সমাজ, রাজনীতি ও নারীর আত্মসচেতনতার এক মোহনীয় দলিল। ১৯১৬ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসে নিখিল, বিমলা ও সন্দীপ—এই তিন চরিত্রের ভেতর দিয়ে ফুটে ওঠে আদর্শ ও বাস্তবতার সংঘাত।
নিখিল উদার মানবতাবাদী। তিনি স্ত্রীর স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেন। বিমলা, শিক্ষিতা এক স্ত্রী; যিনি নিখিলের দেওয়া স্বাধীনতা থেকে নিজেকে আবিষ্কারের পথে এগিয়ে যান। আর সন্দীপ—আচরণে দেশপ্রেমিক, অন্তরে লোভ ও রাজনীতির সুবিধাবাদ।
বন্ধু তানিয়া আক্তার বলেন, ‘স্বদেশি আন্দোলনের উত্তাল সময়ে রচিত এই উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তীক্ষ্ণভাবে তুলে ধরেছেন জাতীয়তাবাদ বনাম মানবতাবাদ, নারী স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিজীবনের জটিল দ্বন্দ্ব। নিখিল, বিমলা ও সন্দীপ—তিনটি চরিত্র যেন তিনটি আদর্শ; যাদের মধ্যকার দ্বন্দ্বে ফুটে ওঠে সময়ের তীক্ষ্ণ প্রতিচ্ছবি।’
বন্ধু জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ঘরে বাইরে’ এমন একটি উপন্যাস, যা কেবল রাজনীতি নয়, হৃদয়ের অন্দরকেও নাড়িয়ে দেয়।
সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন একেকটি আয়না, যেখানে আমরা নিজের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাই।’
প্রজন্ম পাঠাগারের পরিচালক এশরাকুল মজিদ বলেন, ‘বন্ধুসভার এই ধারাবাহিক বইচর্চা তরুণ সমাজকে ভাবতে শেখায়। আমরা গর্বিত এই আয়োজনের অংশ হতে পেরে। আগেও বন্ধুসভার সঙ্গে ছিলাম, এখনো আছি। আমাদের পাঠাগারে গাজীপুর বন্ধুসভার একটি কর্নার আছে। আগেও বন্ধুসভা এখানে পাঠচক্র করেছে। ভবিষ্যতে আরও পাঠচক্র এখানে করার আহ্বান রইল।’
বন্ধু সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘আগে অনেক বই পড়তাম। কিন্তু এখন তেমন পড়া হয়ে ওঠে না। আমাদের উচিত বই কেনা ও বই পড়া। জীবনের গতিসীমার সঙ্গে বইয়ের একটা ভালো সম্পর্ক আছে। আমরা কোথায় কী করব, কোথায় কাজের কী গতি থাকবে—তা একমাত্র বই পড়েই সমাধান সম্ভব।’
‘ঘরে বাইরে’ শুধু একটি উপন্যাস নয়, এটি সময়, সমাজ ও মানুষের ভেতরের লড়াইয়ের এক অনবদ্য দলিল। সেই দলিলের পাতা ওলটানোই ছিল শ্রাবণের এই বিকেলের মূল আনন্দ।
বন্ধু, গাজীপুর বন্ধুসভা