অসহায় দুই ব্যক্তির পাশে গোয়ালন্দ বন্ধুসভা

বন্ধুসভার পক্ষ থেকে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়
ছবি: বন্ধুসভা

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার আলম চৌধুরীপাড়ার দরিদ্র পরিবারের সন্তান সাগর মোল্লা (৪১) ফুচকা-চটপটি বিক্রি করে সংসার চালাতেন। পরিবারে মা-বাবার পাশাপাশি রয়েছে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক কন্যাসন্তান। ছয় সদস্যের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সাগর। সম্প্রতি ওমানে যাওয়ার জন্য নিজের ভিটেবাড়ি যা ছিল সবকিছু বিক্রি করে টাকা জমা দিলেও হার্ট স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় সব হারিয়ে এখন তিনি নিঃস্ব।

এই অসহায় সাগর মোল্লার পাশে দাঁড়িয়েছে গোয়ালন্দ বন্ধুসভা। ১৭ এপ্রিল দুপুরে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় নগদ অর্থ। একই দিন আরেক অসহায় ইউনুস শেখের হাতেও তুলে দেওয়া অর্থ।। গোয়ালন্দ বাজারে বন্ধুসভার অস্থায়ী অফিসে এ অর্থ তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো প্রতিনিধি এম রাশেদুল হক, বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক শফিক মণ্ডল, অর্থ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বন্ধু রাকিবুল হক প্রমুখ। সিঙ্গাপুরপ্রবাসী ইয়াকুব হোসেন ও বন্ধুসভার দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক হুমায়ন আহম্মেদ এই কাজে এগিয়ে আসেন।

ঈদে অসহায় মানুষের পাশে গোয়ালন্দ বন্ধুসভা
ছবি: বন্ধুসভা

সাগর মোল্লা বলেন, ‘পড়াশোনা বেশি দূর করতে পারিনি। নিজের শারীরিক নানা সমস্যার কারণে ভালো কাজও করতে পারি না। পরে উপায় না পেয়ে একটি ভ্যানে করে ফুচকা-চটপটি বিক্রি করতাম। নিজের ছেলেকে মাদ্রাসায় হাফেজি পড়াশোনা করিয়েছি। মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। এরপর রয়েছে সংসারের প্রতিদিনের খরচ। স্থানীয় এক ব্যক্তির কথায় নিজের ভিটেবাড়ি ও উপার্জনের একমাত্র ফুচকা-চটপটির ভ্যান গাড়ি বিক্রি করে ওমানে যাওয়ার জন্য চার লাখ টাকা জমা দিই। ভিসাসহ সব কাজ শেষে দিন-তারিখ পড়ে যায়। প্রায় সাত থেকে আট মাস আগে ওমানে যাওয়ার চার-পাঁচ দিন আগে হঠাৎ হার্ট স্ট্রোক করি। প্রথমে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করে। আমার ওমানে যাওয়া সব শেষ হয়ে যায়। ভিসার টাকা পয়সা মার হয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসকেরা বলেছেন দ্রুত রিং পরাতে হবে। এ জন্য কয়েক লাখ টাকা লাগবে। অথচ বিদেশে যাওয়ার যে টাকা দিয়েছি, তা আর ফেরত পাইনি। এদিকে বিভিন্ন এনজিও ও ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ করে টাকা নিয়েছিলাম। প্রতিদিন তাঁরা টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছেন। এখন ঋণের টাকা দিব, নিজের চিকিৎসার খরচ চালাব না সংসার চালাব। এ ছাড়া জিনিসপত্রের যে দাম; আমার পক্ষে এই সংসার চালানো অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দিন দিন আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছি।’

বন্ধুসভার কাছ থেকে সহায়তা পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি এভাবে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে। তবে বন্ধুসভা যে এগিয়ে এসেছে, এ জন্য আমি তাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ।’ এ সময় বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক শফিক মণ্ডল বলেন, ‘প্রথম আলো ও বন্ধুসভা অসহায় খেটে খাওয়া মানুষের পাশে সব সময় আছে। আমরাও আপনার পাশে আছি। আগামীতেও আরও কিছু করার চেষ্টা করব।’

এদিকে গোয়ালন্দ বাজারের বিভিন্ন দোকানের মাল আনা–নেওয়ার কাজ করে দেওয়ার বিনিময়ে ইউনুস শেখ যা পান তাই দিয়ে নিজের সংসার চালান। বাবা নেই। অসুস্থ বৃদ্ধা মা, স্ত্রী আর দুই কন্যাসন্তান নিয়ে চলে সংসার। প্রতিবারের মতো এবারও বন্ধুসভার পক্ষ থেকে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় অর্থ। এ সময় খুশি হয়ে ইউনুস শেখ বলেন, ‘আপনারা প্রতিবছর আমারে খোঁজ খবর নেন। এ জন্য আমি আপনাদের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।’