স্মৃতির পাতায় বন্ধুসভা ও সাংগঠনিক আড্ডা

নোয়াখালী বন্ধুসভার অনুষ্ঠান ‘স্মৃতির পাতায় বন্ধুসভা এবং সাংগঠনিক আড্ডা’ছবি: বন্ধুসভা

‘বন্ধুসভায় আসার প্রথম দিন থেকে এখন পর্যন্ত অনেক কিছু পেয়েছি এবং পাচ্ছি। প্রথম দিন থেকে যেমন মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে, এখন তার চেয়ে বেশি মুগ্ধতা আর ভালোবাসার বন্ধনে জড়িয়ে রেখেছে বন্ধুসভা পরিবার। সব সময় বন্ধুসভার একজন বন্ধু হয়ে কাজ করে যেতে চাই।’ কথাগুলো বলেন নোয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধু প্রনয় মজুমদার। এমন অনেক স্মৃতিকথা নিয়ে ২০ মার্চ বিকেলে জেলার একটি বেসরকারি এনজিও এফপিএবি হলরুমে নোয়াখালী বন্ধুসভা আয়োজন করে ‘স্মৃতির পাতায় বন্ধুসভা এবং সাংগঠনিক আড্ডা’।

মানুষ বেঁচে থাকে তার মহৎ কর্মের মাধ্যমে। এই মহৎ কর্মসাধন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্জন করে শত শত অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি। দীর্ঘদিনের পথচলায় বন্ধুসভার বন্ধুদের স্মৃতিচারণামূলক আয়োজনে সঞ্চালনায় ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহিম। আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন বন্ধুসভার বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন বয়সের বন্ধু। পরিচয় পর্ব শেষে বন্ধুরা শেয়ার করেন তাঁদের মজার মজার সব স্মৃতি।

সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা শামা আরজু বলেন, ‘বন্ধুসভা আমার দ্বিতীয় পরিবার। বর্তমানে বার্ধক্যজনিত কারণে কিংবা অসুস্থতার কারণে যদিও বয়স্ক মনে হয়; কিন্তু বন্ধুসভায় বন্ধুদের সঙ্গে থাকলে নিজেকে মনের দিক থেকে এখনো ২৫ বছরের সুন্দরী তরুণীর মতো লাগে।’

সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা কামাল হোসেন বলেন, ‘যখন থেকে বন্ধুসভায় আছি তখন হয়তো উপস্থিত অনেকের পৃথিবীর আলো দেখার সময় হয়নি। দীর্ঘ এই পথচলায় বন্ধুসভা থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতায় ভর করে এখন বর্তমান অবস্থায় আছি এবং শেষ পর্যন্ত থাকব।’

বন্ধুসভার উদ্দেশ্য কী? নতুন এক বন্ধুর প্রশ্নের জবাবে সভাপতি আসিফ আহমেদ বলেন, ‘বন্ধুসভা সব সময় বাংলাদেশের জয় দেখতে চায়, সুন্দর একটি বাংলাদেশ দেখতে চায়। মহান ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয়ে ধারণ করে বন্ধুসভার বন্ধুরা ভালো ভালো কাজ করে বেড়ান। বন্ধুসভা মানবিক মানুষ দেখতে চায় ও গড়তে চায়। মানুষের কল্যাণে কাজ করা, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করার পাশাপাশি বন্ধুসভা শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন অঙ্গনে কাজ করে। বন্ধুরা মানুষের জন্য যেমন নিয়মিত কাজ করে, তেমনি সাহিত্যচর্চা-সংস্কৃতিচর্চাও নিয়মিত করে।’

পরিচয় পর্ব শেষে বন্ধুরা শেয়ার করেন তাঁদের মজার মজার সব স্মৃতি
ছবি: বন্ধুসভা

পরবর্তী সময়ে সঞ্চালকদের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, চলতি বছরে নোয়াখালী বন্ধুসভার সবচেয়ে ভালো লাগার আয়োজন কোনটি ছিল? অধিকাংশই উত্তরে জানান, তাঁদের কাছে চলতি বছরের সবচেয়ে ভালো লাগার আয়োজন ছিল কুয়াশা উৎসব, ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, বসন্ত উৎসব, বর্ণমালা উৎসব ইত্যাদি। অনুভূতি প্রকাশ করে বন্ধু শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আগে কখনো কোথাও বর্ণমালা উৎসব এবং কুয়াশা উৎসব পালন করতে দেখিনি। এ বছর দুটি আয়োজনে থাকতে পেরে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। দারুণ একটা অভিজ্ঞতা হলো।’

উপদেষ্টা লায়লা পারভীন বলেন, ‘বন্ধুসভার প্রতিটি আয়োজনই খুব ভালো লাগে। চেষ্টা করি সব সময় সবগুলোতে উপস্থিত থাকার। তবে পাঠচক্রের আয়োজনগুলো বেশি ভালো লাগে। এ জন্য আমার মতো বন্ধুদেরও বিভিন্ন লেখকের বই পড়া হয়।’

সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা সুমন নূর বলেন, ‘বন্ধুসভা বন্ধুদের যেমন কলাকৌশলী শেখায়, ঠিক তেমনি সময়ানুবর্তিতাও শেখায়। সময়ের প্রতি সজাগ থেকে বন্ধুরা সঠিক সময়ে সঠিক কাজগুলো সম্পন্ন করে থাকেন।’ নোয়াখালী বন্ধুসভার কাজের প্রশংসা করে বেসরকারি সংস্থা এফপিএবির নির্বাহী প্রধান নুরুল আলম লিটল বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানান।

সাংগঠনিক আড্ডায় বন্ধুরা তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের কর্মবিবরণী এবং দারুণ দারুণ অভিজ্ঞতা ও পরামর্শের মাধ্যমে সাংগঠনিক আড্ডাকে ফলপ্রসূ করে তোলেন। বন্ধুদের সাফল্য কামনা করে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আপনাদের সুন্দর সাবলীল গোছানো কাজের মাধ্যমে এগিয়ে যাক নোয়াখালী বন্ধুসভা, এগিয়ে যাক সোনার বাংলাদেশ।’ আরেক উপদেষ্টা মাহফুজের রহমান বলেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি এমন ভালো ভালো কাজ করো, আর নিজেকে জ্ঞানের দিক থেকে সাবলম্বী করে তোলো।’ নতুনদের উদ্দেশে উপদেষ্টা হাসান সবুজ বলেন, ‘একটা সময় আমরা বন্ধুসভা করতাম, এখন তোমরা বন্ধুসভায় আছ। তোমাদের দারুণ দারুণ কাজগুলো দেখে আরও ভালো লাগে। তোমাদের মাধ্যমে এগিয়ে যাক প্রাণপ্রিয় বন্ধুসভা।’

এদিন পুরস্কৃত করা হয় নোয়াখালী বন্ধুসভার জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের সেরা পাঠক, সেরা বন্ধু এবং সেরা স্বেচ্ছাসেবকদের। সবশেষে সবাই একসঙ্গে ইফতার করেন। বন্ধুসভার বন্ধুদের বাইরেও ইফতার আয়োজনে অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

সাংগঠনিক আড্ডায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সভাপতি মাহফুজ আহমেদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক উম্মে ফারহিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শিমুল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক তাজকির হোসেন, অর্থ সম্পাদক মাজরিহাতুন স্বর্ণা, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক আফরিনা আনিকা, দপ্তর সম্পাদক ধ্রুব ভূঁঞা, দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক আরাফাত শিহাব, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক নুসরাত জাহান, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক শাহিদা ইসলাম, কার্যকরী সদস্য নয়ন চন্দ্র কুরি, বন্ধু জাবের, তাসমিয়া, মালিহা, জারিন, মোজাক্কের সুমন, ইমতিয়াজ দোলন, সাগর, হামীমসহ আরও অনেকে।

প্রচার সম্পাদক, নোয়াখালী বন্ধুসভা