সুন্দরবন ও বাগেরহাটে যশোর বন্ধুসভার আনন্দভ্রমণ

ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গণে যশোর বন্ধুসভা ২০২৪-এর অভিষেক অনুষ্ঠানছবি: বন্ধুসভা

প্রতিটি ভ্রমণ আমাদের জীবনে আনন্দের নতুন মাত্রা যোগ করে, অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ করে, হৃদয়কে উজ্জ্বল করে। আবার ভ্রমণ যদি হয় নদী, বনভূমি, প্রাচীন ঐতিহ্য ও স্থাপত্য নিদর্শন বিষয়ে; তাহলে সেটা হয়ে উঠে সোনায় সোহাগা। ২৭ জানুয়ারি যশোর বন্ধুসভার বন্ধুরা এমনই একটি আনন্দময় যাত্রার মাধ্যমে নৌ–বন্দর মোংলার করমজল, সুন্দরবন ও বাগেরহাটের ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ ঘুরে এসেছেন।

সব ভ্রমণপিপাসু বন্ধু সুন্দরবনের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যকে নিবিড়ভাবে উপভোগের জন্য বাসযোগে মোংলার উদ্দেশে রওনা হন। দুপুরে মোংলা নৌঘাটে পৌঁছে যন্ত্রচালিত নৌকাযোগে নদীর বুকে পাড়ি জমায়। নদী ও নৌকার চুম্বনে সৃষ্ট ক্ষুদ্র কোমল ঢেউ আমাদের মনে আনন্দের ঢেউ তোলে। পশুর নদীর শীতল বাতাস শিহরণ জাগায় প্রাণে। নদী ও বনের গভীর মিতালি চোখে পড়ে। অচিরেই দেখা মেলে সবুজ পল্লবিত ঘন বনের। দৃষ্টিগোচর হয় তীরবর্তী অস্থির শাখামৃগের।

সুন্দরবনের বিচিত্র অপরূপ সৌন্দর্যে মোহিত হই সবাই। অনেকে প্রথমবারের মতো পরিচিত হয় সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন তথা বিশ্বের সর্ববৃহৎ বনভূমি সুন্দরবনের সঙ্গে। এখানকার বিখ্যাত গোলপাতা, সুন্দরী, পশুর, গেওয়া, কেওড়া, বাইন, গরান ইত্যাদি গাছ স্বচক্ষে দেখার সুযোগ মেলে। সুন্দরী, পশুর ও গরান গাছের সাহসী ঊর্ধ্বমুখী মূল আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। এ সকল গাছের মূলগুলো স্থলভূমির গাছের মতো মাটির নিচে না থেকে প্রতিকূল পরিবেশে সংগ্রাম করে বেরিয়ে এসেছে মাটি ফুঁড়ে। উপরে উঁকি দিয়ে নিজেদের অনন‍্য অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে। মূলত সুন্দরবনের পানি লবণাক্ত হওয়ার কারণে মূলগুলো মাটির ওপরে উঠে থাকে। এসব মূলের দ্বারা গাছ শ্বাস নিয়ে থাকে বলে একে শ্বাসমূল বলা হয়। লবণাক্ত পানিতে এরা হাজার হাজার বছর টিকে আছে অভিযোজন ক্ষমতাবলে।

সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগের রেশ কাটতে না কাটতেই ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ দর্শন; ভ্রমণে আরও এক নতুন মাত্রা যোগ করে। বাগেরহাট জেলার প্রাচীনতম মসজিদটি খ্রিষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে সুফি সাধক খানজাহান নির্মাণ করেন। বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ‍্যবাহী স্থানের একটি এই মসজিদটি। মসজিদের দেয়ালে কোনো শিলালিপি না থাকলেও স্থাপত্যশৈলীতে আমরা বিমুগ্ধ ও বিস্মিত হই। চমৎকার এই স্থানের সবুজ ঘাসের আচ্ছাদিত প্রাঙ্গণে যশোর বন্ধুসভা ২০২৪-এর অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

যশোর বন্ধুসভার আনন্দভ্রমণ
ছবি: বন্ধুসভা

অভিষেক অনুষ্ঠানে মুরাদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম। আরও বক্তব্য দেন যশোর সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোফাজ্জল হোসেন, ‘ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব ও আমাদের কর্তব্য’ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ‍্যাপক শাহ্জাহান কবীর, অনুভূতি প্রকাশ করেন যশোর সরকারি মোমিন গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা নাসরিন শিরিন ও উদ্যোক্তা সাহেদ চৌধুরী। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর বাগেরহাট প্রতিনিধি ইনজামামুল হক ও বাগেরহাট বন্ধুসভার বন্ধু মিনহাজুর রহমানসহ যশোর বন্ধুসভার বন্ধুরা।

অনুষ্ঠানে ২০২৩ সালের ‘সেরা বন্ধু’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। সেরা বন্ধু হয়েছেন সুমন রেজা ও রাইয়াদ ফেরদৌস। গান, কবিতা আবৃত্তি, ভ্রমণ ও আড্ডায় দারুণ জমেছিল সারাদিন।

সাধারণ সম্পাদক, যশোর বন্ধুসভা