গাইবান্ধায় বৃদ্ধাশ্রমের প্রবীণদের সঙ্গে বন্ধুদের সারা বেলা

বৃদ্ধাশ্রমের প্রবীণদের সঙ্গে গাইবান্ধা বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ছোট সোহাগি গ্রাম। এই গ্রামের কোলাহলমুক্ত নির্জন পরিবেশে একচালা টিনশেড পাঁচটি ঘরে গড়ে উঠেছে মেহেরুননেছা বৃদ্ধাশ্রম। ৪৫ জন প্রবীণের বসবাস। ৫ ঘরে মোট ২২টি কক্ষ। প্রতিটি কক্ষে বৈদ্যুতিক পাখা। পৃথক পৃথক বিছানা। পাশেই প্রস্রাব-পায়খানার ঘর। আঙিনায় রান্নাঘর।

বৃদ্ধাশ্রমটিতে ছয় বছর ধরে বসবাস করছেন ভরসি মাহমুদ (১০৭)। তাঁর তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ভিক্ষা করে দিন চলত। ভরসি মাহমুদ বলেন, ‘এখানে আমি ভালো আছি। আমার আত্মীয়স্বজন আছে, কিন্তু তারা কেউ খোঁজখবর রাখে না।’ এখানকারই আরেক বাসিন্দা জবেদ আলী শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। তিনি বলেন, ‘আমার কেউ নেই। এই আশ্রম আমার ঠিকানা।’

প্রবীণদের সঙ্গে বন্ধুদের সারা বেলা
ছবি: বন্ধুসভা

২৭ অক্টোবর মেহেরুননেছা বৃদ্ধাশ্রমে যান গাইবান্ধা বন্ধুসভার বন্ধুরা। সারা দিন প্রবীণদের সঙ্গে সময় কাটান, গল্পগুজব করেন। দুপুরে সবাইকে নিজ হাতে গোসল করিয়ে দেন, নামাজের জন্য ওজু করান। শরীরে তেল মেখে দেন ও পোশাক পরিয়ে দেন। ছেলেরা প্রবীণ পুরুষদের এবং মেয়েরা প্রবীণ নারীদের গোসল করান। প্রথম আলোর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘একটি করে ভালো কাজ’-এর অংশ হিসেবে গাইবান্ধা বন্ধুসভার এই উদ্যোগ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা বন্ধুসভার সভাপতি ইমরান মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উম্মে হাবিবা, অর্থ সম্পাদক রেজাউল করিম, প্রশিক্ষণ সম্পাদক শিউলি আকতার, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক জিসান মাহমুদ, কার্যনির্বাহী সদস্য জান্নাতুল ফেরদৌসি, নিশাত তাসনিম প্রমুখ।

২০১৭ সালে এই বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তোলেন ছোট সোহাগি গ্রামের উদ্যমী যুবক আপেল মাহমুদ ও তাঁর বন্ধুরা। এটি পরিচালনার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। কমিটির বেশির ভাগ সদস্য শিক্ষার্থী। বৃদ্ধাশ্রমে ১৭ জন পুরুষ ও ২৮ জন নারী রয়েছে। তাঁদের জন্য থাকা-খাওয়া, পোশাক, চিকিৎসা ও বিনোদন সবকিছুরই ব্যবস্থা করেছেন এই যুবকেরা। নিজেদের পড়ার খরচ বাঁচিয়ে, ব্যবসা থেকে মাসিক অনুদান দিয়ে বৃদ্ধাশ্রমটি চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় অনেকে এখন মাসিক অনুদান দেন।

প্রবীণদের নিজ হাতে গোসল করিয়ে দেন বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

স্থানীয় দিকদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজল মিয়া বলেন, ‘যে সমাজে ছেলে বাবার খোঁজ নেয় না, সেই সমাজে নিজের উদ্যোগে যাঁরা প্রবীণদের ভরণপোষণ দেন, তাঁদের স্যালুট।’ ইউপি সদস্য মোস্তফা মোল্লা বলেন, ‘আমি জনপ্রতিনিধি হয়ে যা করতে পারিনি, ছাত্র অবস্থায় বেশ কয়েকজন যুবক সেটা করেছে। ওরা আমাদের এলাকার অহংকার।’ ফুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনিসুল রহমান শিবলু বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের যুবকেরা অসহায় প্রবীণদের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়।’

মেহেরুননেছা বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক আপেল মাহমুদ বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে ডাল, আলুছানা ভাত, দুপুরে মাছ এবং রাতে সবজি খাওয়ানো হচ্ছে। প্রতি শুক্রবার ও সোমবার খাসি/মুরগির মাংস খাওয়ানো হয়। মাঝেমধ্যে পোলাও মাংস খাওয়ানোর চেষ্টা করি।’ প্রবীণদের পেছনে মাসে প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু সেটা সম্ভব না হওয়ায় নিজেদের সাধ্যমতো এক থেকে দেড় লাখ টাকায় কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এই শূন্যতা পূরণে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সাধারণ সম্পাদক, গাইবান্ধা বন্ধুসভা