একজন মানষিরে এক বেলা খাতি দিতি পারলি নিজেরে ধইন্য মনে করতাম

বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন মাগুড়া বন্ধুসভার বন্ধু মাহির আজমল
ছবি: বন্ধুসভা

সেদিন বিকেল বেলা। দিনটি ছিল ২ জুলাই। মাগুরা শহরের শহীদ সৈয়দ আতর আলী গণগ্রন্থাগারের সামনে থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো আমরা বন্ধুসভার বন্ধুরা সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য অর্থ সংগ্রহে বের হই। দুটি দলে ভাগ হয়ে দোকান, বিপণিবিতান ও রাস্তায় হেঁটে যাওয়া মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছিলাম। প্রথম দিনে মানুষের কাছ থেকে বেশ ভালো সাড়া পাই। দ্বিতীয় দিনে আরও বেশি মানুষের কাছে যাওয়ার জন্য কাজ শুরু করি।

বিকেল পাঁচটার দিকে আমাদের একটি দল মাগুরা শহরের কলেজ রোডে অর্থ সংগ্রহ করছিল। একজন বন্ধুকে দেখলাম, রাস্তার পাশে বসা এক ফলের দোকানির সঙ্গে বেশকিছু সময় ধরে কথা বলছে। এগিয়ে গেলাম। তখন ওই বন্ধু বললেন, ‘ভাই উনি ১০০ টাকা দিয়েছেন।’ আমি কিছুটা বিস্মিত হলাম। পথের পাশে দোকান দিয়ে বসা একজন মানুষের দিনে কত টাকাইবা আয় হয়। তার ওপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ এমনিতেই কঠিন সময় পার করছেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই আপনি ১০০ টাকা দিলেন?’ জবাবে পৌর এলাকার নিজ নান্দুয়ালী গ্রামের বাসিন্দা করীম ফকির নামের ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমার ১০০ টাকায় একজন মানষিরে এক বেলা খাতি দিতি পারলি নিজেরে ধইন্য মনে করতাম। টিভিতে দেখিছি বন্যা এলাকার মানুষ কত কষ্টে আছে। আমরা বুঝি, না খায়ে থাকার কষ্ট কী।’

রাস্তার পাশে ফল বিক্রি করা ওই ব্যক্তির এমন কথা শুনে আমরা আরও বেশি অনুপ্রাণিত হলাম। এভাবে টানা তিন দিন মাগুরা শহরের নানা প্রান্তে বন্যার্ত মানুষদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন প্রথম আলো মাগুরা বন্ধুসভার বন্ধুরা। কাজ করতে গিয়ে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করি আমরা। কয়েকজন রিকশাওয়ালা পেয়েছি, যাঁরা আমাদের দেখে রিকশা থামিয়ে বাক্সে টাকা দিয়ে গেছেন। এই টাকা দিতে পেরে তাঁদের চোখেমুখে আত্মতৃপ্তির ছাপ দেখতে পেয়েছি। কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি, কত দায়িত্ব আছে আমাদের। বিপদে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর মতো বহু মানুষ সমাজে আছে। শুধু স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল উপায় পেলে মানুষ সহযোগিতা করতে চায়।

সাধারণ সম্পাদক, মাগুরা বন্ধুসভা