জীবিতদের প্রতি সদয় হওয়ার বার্তা ‘অভাগীর স্বর্গ’

ময়মনসিংহ বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসরছবি: বন্ধুসভা

অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পটিতে তৎকালীন সমাজ ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, বিশেষ করে জাতিভেদ প্রথার নিষ্ঠুরতা ও শোষণ তুলে ধরেছেন। এটি নিচু জাতের অভাগী ও তার ছেলে কাঙালীর করুণ কাহিনি অবলম্বনে রচিত। গল্পটি ১৯২৬ সালে প্রকাশিত হয়। সুকুমার সেন সম্পাদিত ‘শরৎ সাহিত্যসমগ্র’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ড থেকে গল্পটি সংকলন করা হয়।

২৪ নভেম্বর সকাল ১০টায় ‘অভাগীর স্বর্গ’ ছোটগল্প নিয়ে পাঠচক্রের আসর করে ময়মনসিংহ বন্ধুসভা। প্রথম আলো ময়মনসিংহ অফিসে এটি অনুষ্ঠিত হয়। বন্ধু আরিয়ান ইয়াছিনের সঞ্চালনায় বন্ধুরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আলোচনা করেন।

শুরুতে গল্পের বিষয়বস্তু নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আরিয়ান ইয়াছিন বলেন, ‘“অভাগীর স্বর্গ” গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র অভাগী। অভাগী একজন দরিদ্র, অসহায়, ঘরহারা বৃদ্ধা। গ্রামের কেউ তাকে ঠিকমতো মানুষ হিসেবেও গণ্য করে না। দিনে দিনে সে সমাজের উপেক্ষা, অবহেলা আর ক্ষুধা নিয়ে দিন কাটায়। শেষ বয়সে তার ন্যূনতম আশ্রয়ও নেই। কঠোর শীতে আশ্রয়হীন অবস্থায় সে ঠাঁই পায় শ্মশানের পাশে। কেউ তাকে সাহায্য করে না; বরং সবাই তাকে বোঝা মনে করে। একসময় চরম শীতের রাতে অভাগী মারা যায়। মৃত্যুর পর তাকে সৎকার করতে গিয়ে গ্রামবাসী অনুতপ্ত হয়। মৃত্যুর পর তাকে সম্মান দেওয়া হলেও জীবিতাবস্থায় কেউ তাকে সামান্য মমতাও দেখায়নি। এই বৈপরীত্যই গল্পটিকে হৃদয়বিদারক উচ্চতায় নিয়ে যায়।’

বন্ধু আল ইমরান বলেন, ‘শরৎচন্দ্র এই গল্পে সমাজের বিবেকহীনতা ও মানবিকতার অভাবকে নির্মমভাবে উন্মোচন করেছেন। অভাগীর চরিত্র শুধু একজন বৃদ্ধা নারীর দুঃখগাথা নয়, এটি আসলে সেই সব অবহেলিত মানুষের প্রতিচ্ছবি, যাদের অস্তিত্ব সমাজ স্বীকার করতেই চায় না। জীবিত অবস্থায় যাকে সবাই অবহেলা করেছে, মৃত্যুর পর সেই অভাগীর জন্য মানুষের অনুতাপ—এটাই আমাদের সামাজিক দ্বিচারিতাকে তীব্রভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে।’

অভাগীর জীবনে সামান্য মানবিক স্পর্শই তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারত, অথচ সমাজের অবহেলা তাকে মৃত্যুর দোরগোড়ায় ঠেলে দেয় উল্লেখ করে বন্ধু শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘“অভাগীর স্বর্গ” শুধু একটি করুণ কাহিনি নয়, এটি মানুষের দায়িত্ববোধেরও কঠিন পরীক্ষা। অভাগীকে জীবিত অবস্থায় সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে না এলেও মৃত্যুর পর সৎকার নিয়ে মানুষের অনুতাপ আমাদের মুখে চপেটাঘাতের মতো লাগে। গল্পটি আমাদের শিখায়—মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও সহানুভূতি মৃত্যুর পর নয়, জীবিতকালেই দেখানো উচিত।’

পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা মোস্তাফিজুর রহমান, বন্ধু অনিক চন্দ্র দাস, বোরহান উদ্দিন, ফারদিন হাসানসহ অন্য বন্ধুরা।

সভাপতি, ময়মনসিংহ বন্ধুসভা