বই মনের জানালা খুলে দেয়

ভৈরব আইডিয়াল স্কুলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসর
ছবি: সাইফ রহমান

মুদ্রিত বই পড়ার আসর পাঠচক্র ভৈরব বন্ধুসভার নিয়মিত আয়োজনগুলোর মধ্যে একটি। পাঠের উৎসবকে কেন্দ্র করে ‘বই জানি স্বপ্ন বুনি’ শিরোনামে ১৫ দিনব্যাপী ছয়টি বই পড়ার বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভৈরবসভা। স্থানীয় ছয়টি স্কুলে পর্যায়ক্রমে পাঠের আসরগুলো অনুষ্ঠিত হবে।

সূচনা আয়োজনটি ছিল ভৈরব আইডিয়াল স্কুলে। ১১ সেপ্টেম্বর স্কুল প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের নিয়ে পাঠচক্র আয়োজন করা হয়। বিষয় ছিল আয়মান সাদিক ও অন্তিক মাহমুদের আত্মোন্নয়নমূলক বই ‘ভাল্লাগে না’। ১৬২তম পাঠের আসরটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা।

অনুভূতি জানাচ্ছে এক শিক্ষার্থী
ছবি: সাইফ রহমান

পাঠের শুরুতে বন্ধু প্রাপ্তি ঘোষ লেখক আয়মান সাদিক ও অন্তিক মাহমুদ সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি জানান, বর্তমান তরুণদের কাছে দারুণভাবে অনুসরণীয় তাঁরা। তাঁদের লেখা বই, সচেতনমূলক ভিডিওগুলো চারপাশে আলোর মশাল ছড়াচ্ছে।

‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “যাহা চাই, তাহা ভুল করে চাই/ যাহা পাই তাহা চাইনা।” আমরা অনেক সময় নিজেরাই বুঝি না, আমরা কী চাই। আবার কোনো কিছু পেয়ে গেলেও বুঝতে পারি না, সেটা আমরা চেয়েছি কি না। তখন বিতৃষ্ণা এসে ভর করে, আর বলে ফেলি ধুর ভাল্লাগে না’— কথাগুলো উঠে আসে সাধারণ সম্পাদক রিফাত হোসেনের আলোচনায়। কালকে করব, কী করলাম জীবনে, কপালে নেই, তো কী হইসে—এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি।

অনুভূতি জানাচ্ছে এক শিক্ষার্থী
ছবি: সাইফ রহমান

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসমিয়া জাহান বলে, ‘ভৈরব বন্ধুসভার পাঠচক্রের জন্যই বইটি পড়া হলো, আজকের আলোচনা থেকে অনেক কিছু শিখলাম। আজ থেকে আমি আর বলব না, আমার ভাল্লাগে না।’ একই শ্রেণির শিক্ষার্থী সুজন আনিকা বলে, ‘বইটির “লোকে কী বলবে” অধ্যায়টা আমার সঙ্গে মিলে গেছে। কোনো কাজের আগে আমি ভাবতাম, এটি যদি করি, তাহলে লোকে কী বলবে? কিন্তু এখন দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে।’
কাজী মুসকান বলেন, ‘“কী করলাম জীবনে” অধ্যায়টা পড়ার সময় আমারও মনে হচ্ছিল, জীবনে আসলে কী করলাম। জীবনকে কি কিছু দিতে পেরেছি? পড়াশোনার বাইরে আবৃত্তি, বিতর্কচর্চা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জয়ী হয়েছি। মনে হচ্ছে জীবনে কিছু হলেও অর্জন আছে। কিছু একটা তো করলাম জীবনে।’

উপদেষ্টা সুমাইয়া হামিদ গ্রন্থ আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘একটি দেশ সবার, সবার কাজের মাধ্যমেই দেশের উন্নতি ঘটে। কিন্তু আমরা খুব সহজেই বলে ফেলি, এই দেশের কিচ্ছু হবে না। অথচ আমরা চাইলেই সবকিছু সুন্দর করতে পারি।’ আয়মান সাদিকের আবিষ্কৃত সাইলেন্ট ট্রিটমেন্ট, আমি এমনই, টাকা ছাড়া সম্ভব না, ফেসবুকে আমি হিট, অধ্যায়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।

কুইজ বিজয়ীদের পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় বই
ছবি: সাইফ রহমান

গ্রন্থ আলোচনায় আরও যুক্ত হন ভৈরব উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইকবাল হোসেন, ভৈরব আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম, ভৈরব বইমেলা পরিষদের উপদেষ্টা বাকী বিল্লাহ, ভৈরব বন্ধুসভার উপদেষ্টা লুবনা হক, আলাল উদ্দিন, ওয়াহিদা আমিন।

ভৈরব আইডিয়াল স্কুলের সভাপতি শরীফ আহমেদ বলেন, ‘নির্দিষ্ট কোনো নিয়মের বেড়াজালে জীবন চলে না। জীবন চলে তার নিজস্ব গতিতে। সাহিত্যের মধ্যেই জীবনের মানে খুঁজে পাওয়া যায়। ভৈরব বন্ধুসভার পাঠচক্রের আয়োজনগুলো প্রশংসনীয়।’

ভৈরব আইডিয়াল স্কুলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসর
ছবি: সাইফ রহমান

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা বলেন, ‘ভালো লাগে এবং একই সঙ্গে গর্বও হয় এই ভেবে যে আমরা পাঠচক্রটি দীর্ঘ সাড়ে আট বছর ধরে চলমান রেখেছি।’ বন্ধুসভার সভাপতি নাহিদ হোসাইন বলেন, ‘বই মনের জানালা খুলে দেয়, ভাবতে শেখায়, এগিয়ে যেতে শেখায়। আমাদের পাঠচক্র করার উদ্দেশ্য একটাই, তরুণ প্রজন্মকে মুদ্রিত বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলা। আজকের পর থেকে আমিও কোনো দিন বলব না আমার ভাল্লাগে না। আমাদের এই পাঠের আসরটি চলমান থাকবে।’

পাঠচক্র শেষে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। কুইজ বিজয়ীরা হলেন সমাদৃতা দাস, ইউশা আল সাবা, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। বিজয়ীদের পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় বই।

পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন কার্যনির্বাহী সদস্য প্রিয়াংকা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক এরফান হোসেন, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক সাইফ রহমান, অর্থ সম্পাদক মানিক আহমেদ, জেন্ডার ও সমতা সম্পাদক তানশি নাহার। পাঠের আসরটি ভৈরব বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি প্রচারিত হয়।

পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা