বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ উপন্যাস নিয়ে পাঠচক্র করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভা। ২ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টায় ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্ম গুগল মিটে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি কালজয়ী সামাজিক উপন্যাস, যা ১৯৪০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি মানবজীবনের জটিলতা, সংগ্রাম ও স্বপ্নের এক নিখুঁত চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন।
পাঠ আলোচনায় সহসভাপতি ফারহা উলফাৎ রহমান বলেন, ‘হাজারী ঠাকুর কলকাতার একটি হোটেলে রান্নার কাজ করতেন। তিনি গরিব হলেও সৎ, পরিশ্রমী ও আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন একজন মানুষ ছিলেন। কিন্তু হোটেলের মালিক ও অন্য কর্মচারীরা তাঁকে সব সময় অবজ্ঞা ও অপমান করত। অপমান সহ্য করতে না পেরে হাজারী ভাবেন, একদিন তিনি নিজের একটি হোটেল করবেন, যেখানে কাউকে অন্যায়ভাবে ছোট করা হবে না। অর্থের অভাবে তা সহজ ছিল না, কিন্তু অনেক কষ্ট, সংগ্রাম ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি সামান্য কিছু টাকা জোগাড় করেন। পরে একসময় তিনি নিজের ছোট্ট একটি হোটেল প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম দেন “আদর্শ হিন্দু হোটেল”। তাঁর সততা, ভালো ব্যবহার, পরিশ্রম ও সুস্বাদু রান্নার কারণে অল্প দিনেই হোটেলটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।’
পাঠ প্রতিক্রিয়ায় উপদেষ্টা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘হাজারী ঠাকুরের চরিত্রে আমরা এক সাধারণ মানুষের মধ্যে অসাধারণ মানবিকতা দেখতে পাই। সংবেদনশীলতা, সততা, নিষ্ঠা ও উদার মনের অধিকারী তিনি। আজও সমাজে সততা, ন্যায়নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ত মানুষের কদর রয়েছে। বন্ধুরা যদি হাজারী ঠাকুরের চরিত্র থেকে শিক্ষা নিতে পারে, তবে পাঠের সার্থকতা অর্জিত হবে।’
সভাপতি আরাফাত মিলেনিয়াম বলেন, ‘এই কাহিনি শুধু এক সাধারণ মানুষের নয়, বরং সমাজের প্রত্যেক মানুষের জন্য এক প্রেরণা। সততা, অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাস থাকলে প্রতিকূলতার মধ্যেও স্বপ্ন পূরণ সম্ভব। গরিব হয়েও হাজারী ঠাকুর কখনো অসৎ পথে হাঁটেননি। অপমান ও শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন নিজের হোটেল করার। অবশেষে কঠোর পরিশ্রম ও সততার মাধ্যমে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন আদর্শ হিন্দু হোটেল।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাফিউল হাসান বলেন, ‘জসীমউদ্দীনের “প্রতিদান” কবিতার পূর্ণ প্রতিচ্ছবি যেন হাজারী ঠাকুর। সফলতার জন্য প্রয়োজন সততা, পরিশ্রম ও নিরহংকার মনোভাব—সবই তাঁর মধ্যে ছিল। যারা তাঁকে চোর বলে লাঞ্ছিত করেছিল, তাঁদেরও তিনি আপন করে নিয়েছেন। হাজারী ঠাকুরের কাছ থেকে আমরা মানবতার শিক্ষা নিতে পারি।’
স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক সাঈদ মাহমুদ বলেন, ‘বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসগুলো মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি। সততা, ন্যায়নিষ্ঠা ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত একজন মানুষকে স্বপ্নের প্রান্তে নিয়ে যায়। হাজারী ঠাকুর তাঁর জীবনের প্রতিটি বাধা অতিক্রম করেছেন ধৈর্য ও মানবিকতার মাধ্যমে। “আদর্শ হিন্দু হোটেল”-এ আমরা দেখতে পাই এক পরিচ্ছন্ন ও মহানুভব চরিত্রের প্রতিফলন। ভবিষ্যতেও এমন পাঠচক্র আয়োজন করলে তা বন্ধুদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক হবে।’
দপ্তর সম্পাদক আসেফ উৎস বলেন, ‘বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখনী বাস্তবধর্মী, সহজ ভাষায় রচিত এবং গভীর মানবিক বোধে ভরপুর। সাদাসিধে এক রন্ধনশিল্পীর জীবনকে কেন্দ্র করে লেখা এই উপন্যাসে দেখা যায় সে সততা, শ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে একদিন নিজের হোটেল গড়ে তোলে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কখনো কারও ক্ষতি করতে চাননি; সবার মঙ্গল কামনা করেছেন।’
পাঠচক্রে আরও উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি মো. আসাদুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক মাসরুফা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক সোনিয়া খাতুন, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক অজিফা খাতুন, জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ, কার্যনির্বাহী সদস্য শাকিল হোসেন, আহমেদ ওয়ালিদ, বন্ধু মুশফিক মাহাদীসহ অন্য বন্ধুরা।
সভাপতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভা