প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্বে লক্ষাধিক বৃক্ষরোপণ
ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্সের সহযোগিতায় এবং বন্ধুসভার সদস্য, উপদেষ্টা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থায়নে সারা দেশে ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৯টি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।
টাঙ্গন নদের তীরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়বে সারি সারি চারা গাছ। শহরের ব্যস্ত সড়কের ডিভাইডার, পুরোনো কবরস্থানের নীরব কোণে কিংবা স্কুলের মাঠ ঘিরে উঠছে নতুন সবুজ। যেন শুকনা মাটির বুক ভেদ করে আবারও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে প্রকৃতি। এই দৃশ্য তৈরি করেছেন ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার তরুণেরা।
এক মাস ধরে তাঁরা খুঁজে নিয়েছেন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জায়গাগুলো, রাজাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের দেড় কিলোমিটার রাস্তা, মুন্সিপাড়া ও সেনুয়া কবরস্থান, সুগার মিল কলোনির সড়ক, অপরাজেয় ৭১ প্রাঙ্গণ এবং জেলার ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব স্থানে রোপণ করা হয়েছে আট হাজার চারা।
‘বন্ধুসভার মাধ্যমে গাছের চারা রোপণ আমাদের সবুজায়ন কর্মসূচিকে গতিশীল করেছে। বন্ধুরা যেভাবে চারাগুলোকে নিজের সম্পদ মনে করে রোপণ করে ও যত্ন নেয়, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।’ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্সের ঊর্ধ্বতন পরিচালক অরিঞ্জয় ধর
ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সদস্যরা জেলার পাঁচটি উপজেলায় বৃক্ষরোপণ পরিচালনা করেছেন। সদরের দাপুনিয়া হারগুজিরপাড় সড়কের দুই পাশে, ঈশ্বরগঞ্জ-নেত্রকোনা সড়কের ধারে এবং ভালুকার কাচিনা ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তায় ফলদ ও বনজ গাছ লাগানো হয়। প্রতিটি গাছের পাশে নামফলক, খুঁটি ও বেড়া দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যেখানে মোট ৯ হাজার ১১৭টি চারা রোপণ করা হয়।
প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন, প্রকৃতির সুরক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্য নিয়েই কেন্দ্রীয়ভাবে এই উদ্যোগ নিয়েছে বন্ধুসভা।
কেরানীগঞ্জ বন্ধুসভা বজ্রপাত প্রতিরোধ এবং পরিবেশ রক্ষায় শতাধিক তালগাছের চারা রোপণ করেছে। অন্যদিকে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে হাবিপ্রবি ক্যাম্পাসের কিছু পুরোনো বৃক্ষ ভেঙে পড়ায় ক্ষয়পূরণ এবং নতুন উদ্যমে সবুজায়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হাবিপ্রবি বন্ধুসভা বড় পরিসরে বৃক্ষ রোপণ করেছে।
জাতীয় পর্ষদের আহ্বানে এবং কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘আর নয় প্লাস্টিক দূষণ, জীবন বাঁচাতে বৃক্ষরোপণ’ প্রতিপাদ্যে আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসজুড়ে গাছের চারা রোপণ করেছেন বন্ধুরা। এ বছর দেশের ৫০–এর অধিক বন্ধুসভা এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে। বিগত বছরের মতো এবারও বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়েছে রোপিত বৃক্ষের যত্নের ব্যাপারে।
গত বছরের মতো এবারও এই আয়োজনে বন্ধুসভার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স। দুই দফায় ২৫ জেলায় মোট ৮৬ হাজার ৬৫০টি গাছের চারা দিয়েছে তারা। এ বিষয়ে ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্সের ঊর্ধ্বতন পরিচালক অরিঞ্জয় ধর বলেন, ‘বন্ধুসভার মাধ্যমে গাছের চারা রোপণ আমাদের সবুজায়ন কর্মসূচিকে গতিশীল করেছে। বন্ধুরা যেভাবে চারাগুলোকে নিজের সম্পদ মনে করে রোপণ করে ও যত্ন নেয়, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। আমরা তাদের হাতে গাছের চারা তুলে দিতে পেরে আনন্দিত। ভবিষ্যতেও প্রকৃতির সুরক্ষায় ব্র্যাকের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।’
‘আমাদের এই উদ্যোগ দেশের সবচেয়ে বৃহৎ পরিসরের বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম হিসেবে দেখা যেতে পারে। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে আর কোনো সংগঠন এতটা আন্তরিকতার সঙ্গে বৃক্ষরোপণ ও পরবর্তী যত্নে মনোযোগী হয় না।’বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক
এ ছাড়া বন্ধুসভার বন্ধু, উপদেষ্টা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থায়নে রোপণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার ৯০৯টি চারা গাছ। সব মিলিয়ে সারা দেশে এই মহাযজ্ঞে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৯টি চারা গাছ রোপণ করা হয়। এর মধ্যে ২৯ হাজার ৭০৯টি বনজ, ৭০ হাজার ৫৯৪টি ফলদ এবং ২৬ হাজার ১৮৬টি ঔষধি গাছ। বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য বজায় রাখতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী চারা বাছাই করা হয়েছে। ব্র্যাক থেকেও বন্ধুসভার পছন্দ অনুযায়ী চারা সরবরাহ করা হয়। দুই দফায় বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের পক্ষ থেকে অনলাইনে এবং কয়েক দফায় সারা দেশের বন্ধুসভার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা এবং সচেতনতামূলক বার্তা দেওয়া হয়েছে।
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী ফিরোজ ও সাইমুম মৌসুমী বৃষ্টির নেতৃত্বে জাতীয় পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিকের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে জাতীয় পর্ষদের আলাদিন আসাদ, জাহিদ ফেরদৌস, ঢাকা মহানগরের নাঈমা সুলতানা, হামিদা জান্নাত, অনিক সরকার, মেঘা খেতান, শারমিন আরা তিশা, অমিত পাল, শেখ কাব্য, আশফাক আদি ও মীর মোশারেফ সারা দেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি তদারক করেছেন।
এ বিষয়ে জাতীয় পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক বলেন, ‘আমাদের এই উদ্যোগ দেশের সবচেয়ে বৃহৎ পরিসরের বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম হিসেবে দেখা যেতে পারে। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে আর কোনো সংগঠন এতটা আন্তরিকতার সঙ্গে বৃক্ষরোপণ ও পরবর্তী যত্নে মনোযোগী হয় না। বন্ধুরা শুধু নিজেরাই গাছের চারা রোপণ করেন না, বরং গাছের যত্নে জনসাধারণকে উৎসাহী করতে নানা ব্যতিক্রমী কার্যক্রমও পরিচালনা করেন। যেমন এ বছর চট্টগ্রাম বন্ধুসভা বৃক্ষ দত্তক কার্যক্রম শুরু করেছে; যেখানে বন্ধুরা একে অপরকে গাছ উপহার দেন এবং সেই গাছকে দত্তক সন্তানের মতোই যত্ন করার শপথ নেন।’
এবারও নিজেদের অর্থায়নে ও কার্যকরভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেছে—এমন ১০টি বন্ধুসভাকে জাতীয় পর্ষদ বিশেষ সম্মাননা দেবে।