বাঁশ আর ত্রিপল দিয়ে বানানো হয়েছে ছাউনি। ভেতরে দেওয়া হয়েছে কাঠের চৌকি। রয়েছে দুটি পাকা চুলা। আগামী চার মাসের জন্য এ চুলায় শীতের পিঠা বানিয়ে বিক্রি করবেন নার্গিস পারভিন। পিঠা প্রস্তুতের সব উপকরণও উপহার দেওয়া হয়েছে তাঁকে। চার মাসের আয় দিয়ে পরবর্তী সময়ে অন্য কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগ করবেন তিনি। অসহায়ত্ব ঘোচানোর এমন একটি সুযোগ পেয়ে আশার আলো দেখছেন এই নারী।
প্রথম আলোর ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি ভালো কাজের অংশ হিসেবে নার্গিস পারভিনকে ‘বন্ধু স্টল’ উপহার দিয়েছে সাভার বন্ধুসভা।
২ নভেম্বর বিকেলে সাভারের তারাপুরে গিয়ে দেখা যায়, সাভার সরকারি কলেজের মাঠের এক পাশে বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে বানানো হয়েছে ছাউনি। ছাউনির ভেতরে কাঠের চৌকির ওপর দুটি পাকা চুলা রাখা হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে সেখানে আসেন নার্গিস পারভিন। এ সময় তাঁর অসুস্থ স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন ছাউনিটি। পরে বন্ধুসভার বন্ধুরা চুলা, চৌকিসহ ছাউনিটি নার্গিস পারভিনকে বুঝিয়ে দেন।
সাভারের প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক বন্ধুসভার উপদেষ্টা শামসুজ্জামান শামস, উপদেষ্টা রকিবুল হাসান, জাফর আহমেদ, সভাপতি হাবিবা নাওয়ার, সহসভাপতি রাতুল ঘোষ, বন্ধু তানজীল তাবাসসুম, সুমাইয়া ইসলাম, আহমেদ মোস্তাফিজ, আব্দুল্লাহ আল ইমরান, দিবাকর বিনতে আলম, এইচ এম আরাফাত শাহ্ ও ফরহাদ হাসা উপস্থিত ছিলেন।
বন্ধুরা জানান, সাভার সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের সহায়তায় চার মাসের জন্য ওই জায়গাটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এরপর ওই জায়গায় বানানো হয়েছে ছাউনিটি। চুলা ও চৌকির পাশাপাশি পিঠা বানানোর হাঁড়িপাতিল, চাল, গুড়, নারকেলসহ অন্যান্য উপকরণ দেওয়া হয়েছে নার্গিস পারভিনকে।
আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে চলা নার্গিস পারভিন উপার্জনের এমন সুযোগ পেয়ে বেশ খুশি। পিঠা বিক্রির আয় দিয়ে পরবর্তী সময়ে অন্য কোনো ব্যবসা করার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। নার্গিস পারভিন বলেন, ‘প্রায় পাঁচ মাস হলো সাভারে এসেছি। যশোরে গ্রামের বাড়িতে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে বেশ কষ্টে জীবন কাটছিল। সাভারে এসে স্বামী ভ্যানে সবজি বিক্রি করা শুরু করছে। বাসাভাড়া ও খাবার খরচ দিয়ে চলা খুব কঠিন। প্রথম আলো বন্ধুসভা পিঠা বিক্রির জন্য সব দিল। এখন পিঠা বিক্রি করে পরে অন্য কোনো ব্যবসা করব। আমি কৃতজ্ঞ।’
সাভার বন্ধুসভার সভাপতি হাবিবা নাওয়ার বলেন, ‘বন্ধুসভার বন্ধুরা পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, সাধ্যমতো তাঁদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এক নারীকে শীতকালীন পিঠা তৈরির একটি স্টল করে দেওয়া। নাম দেওয়া হয়েছে “বন্ধু স্টল”। আমাদের উদ্দেশ্য একজন গরিব মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। আমরা আশাবাদী, আগামী চার মাসের জন্য অস্থায়ী এ স্টলের আয় দিয়ে তিনি পরবর্তী সময়ে অন্য কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগ করে কিছুটা হলেও স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাবেন।’
উপদেষ্টা রকিবুল হাসান বলেন, বন্ধুসভার উদ্যোগগুলো বরাবরই খুবই চমৎকার হয়। সাভার বন্ধুসভা একজন মানুষকে পিঠা স্টল দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। মানবতার জয় হোক, বন্ধুসভা এগিয়ে যাক।